রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০২:০৪

এক সময়ের জনসমাগম আর নদীবাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র আজ ইতিহাসের পাতায় নিঃশব্দ নাম

হাঁকডাক আর ঐতিহ্য হারিয়ে নীরবে বিলীন হলো ইচলী লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট

কবির হোসেন মিজি
হাঁকডাক আর ঐতিহ্য হারিয়ে নীরবে বিলীন হলো ইচলী লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট

চাঁদপুরের মানুষের স্মৃতি আর জেলার শতবর্ষী ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এক নাম ইচলী লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট

দেশের বৃহত্তম নদীবন্দর সদরঘাটের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিলো এই ঘাট। সময়ের বিবর্তন, যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আর অবকাঠামোগত পরিবর্তনের ফলে সেই এক সময়ের কোলাহলমুখর ইচলী লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাট আজ প্রায় নিস্তব্ধ, বিলীন।

এক সময় রামগঞ্জ, রায়পুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েক জেলার হাজার হাজার মানুষ ইচলী লঞ্চঘাট দিয়েই লঞ্চে চড়ে ঢাকা যেতো। দিনরাত চলতো মানুষের ভিড়, লঞ্চের হুইসেল, নৌকার মাঝিদের হাঁকডাক।

এই লঞ্চ ও ফেরিঘাটকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিলো অসংখ্য মানুষের জীবিকার উৎস — খেয়া নৌকা, দোকান, খাবারের হোটেল, টোল আদায়ের ব্যবস্থা।

২০০৫ সালে চাঁদপুর-রায়পুর সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটের কোলাহল। বন্ধ হয়ে যায় ফেরি চলাচল। তবু লঞ্চঘাটের কারণে তখনো টিকে ছিলো মানুষের যাতায়াত।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চ চলাচলও কমে আসে। এখন আর কোনো লঞ্চ ইচলী ঘাটে ভিড়ে না। ফলে ইচলী লঞ্চঘাট হারিয়েছে তার মূল প্রাণশক্তি, আর হয়ে গেছে প্রায় জনশূন্য এক স্থান।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সময় যেখানে প্রতিদিন শত শত মানুষের ভিড়, যানবাহনের লাইন আর লঞ্চের হুইসেল ছিলো, এখন সেখানে নেমে এসেছে শুধুই নীরবতা।

খেয়া নৌকার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭/৮ টিতে। দিনে হাতেগোণা কয়েকজন মানুষ এই নৌকায় পারাপার হয়ে থাকেন।

নৌকার মাঝিদের কথায় উঠে আসে জীবিকার কঠিন বাস্তবতা। আগে দিনে ৫-৬শ' টাকা রোজগার হতো, এখন কোনোভাবে হয় ১৫০ টাকা। ঘাটের তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই সিঁড়ি বা পাকাকরণ।

টোল আদায়কারী হারুন খান জানান, আগে প্রতিদিন টোল থেকে ৮-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠতো। এখন হয় বড়জোর ২-৩শ' টাকা।

দু'পারের টং দোকানগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। দিনের বেশিরভাগ সময় দোকানিরা খালি বসে থাকেন।

ইচলী লঞ্চঘাট পুনরায় চালু হলে কিংবা সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে চাঁদপুরের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের হাজারো মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হতো। শহরের যানজটও কমতো, বাড়ত চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার সুযোগ।

স্থানীয়দের মতে, এই ঘাট শুধু এক টুকরো জমি নয়, এটি চাঁদপুরের ইতিহাস, স্মৃতি আর জীবনের সঙ্গে জড়িত

তাদের দাবি, অন্তত ইচলী লঞ্চঘাটটি সক্রিয় করা হোক। যেনো আবার সেখানে ফিরে আসে মানুষের হাঁকডাক আর লঞ্চের হুইসেল।

তাহলেই নতুন রূপে ফিরে পাবে শতবর্ষের ঐতিহ্যের ইচলী ঘাট।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়