রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৭

একটি বিল্ডিং নির্মাণে ভিন্ন ধরনের মানুষ প্রয়োজন, তেমনি

সিরাজুল মুস্তাকিম পিয়াল, তাল্লিন, এস্তোনিয়া থেকে
একটি বিল্ডিং নির্মাণে ভিন্ন ধরনের মানুষ প্রয়োজন, তেমনি

একটি বিল্ডিং নির্মাণে যেমন ভিন্ন ধরনের মানুষ প্রয়োজন হয়, তেমনি পরিচালনা ও বসবাসের জন্যেও প্রয়োজন হয় আলাদা দক্ষতা ও মনোভাবের মানুষ। নির্মাণের জন্যে দরকার শ্রমিক ও প্রকৌশলী, বসবাসের জন্যে দরকার ব্যবহারকারী বা অধিবাসী, পরিচালনার জন্যে দরকার পরিচালনা কমিটি। এই তিনটি দায়িত্ব যদি একে অপরের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়, তাহলে গোটা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি বসবাসকারী মানুষদের হাতে বিল্ডিং নির্মাণের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়, তাহলে হয়তো সেই বিল্ডিং সঠিকভাবে নির্মিত হবে না। একইভাবে, পরিবারের ক্ষেত্রেও দেখা যায় : কেউ উপার্জনের জন্যে সময় ও শ্রম দিচ্ছে, কেউ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে, কেউ সিদ্ধান্ত মান্য করে সংসার চালিয়ে নেওয়ার জন্যে উপযুক্ত।

এই দায়িত্ব বণ্টনে ভুল হলে যেমন পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও ভুল মানুষকে ভুল দায়িত্ব দিলে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়।

পটভূমি ১৯৭১

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন সফল বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়ে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তবে বিপ্লব ঘটানো আর একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করা, এই দুয়ের দক্ষতা এক নয়।

রাষ্ট্র পরিচালনার জন্যে কৌশলী প্রশাসন, অর্থনীতি বোঝা, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করা এসব দক্ষতা প্রয়োজন, যা অনেক সময় বিপ্লবীর চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে। সেই জায়গায় গলদ হয়, ফলাফল ১৯৭৫।

পটভূমি ২০২৪

‘জুলাই বিপ্লব’-এ গণজোয়ারে শাসকের পতন ঘটে। বিপ্লব সফল হয়, লক্ষ্য পূরণ হয়, কিন্তু ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আবারো দেখা যায়, সফল বিপ্লবী রাষ্ট্র পরিচালনায় একই ভুল করছেন।

বিপ্লবী হওয়া মানেই সফল রাষ্ট্রনায়ক হওয়া নয়। এই উপলব্ধির অভাব থেকেই জনতার আশা ব্যর্থতায় রূপ নেয়।

ইতিহাসের শিক্ষা ও রাজনীতির বাস্তবতা :

একসময় আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের গৌরবকে পুঁজি করে রাষ্ট্র পরিচালনায় আসে, কিন্তু পরে সেই পুঁজি দিয়েই মানুষের ওপর নিপীড়ন, অনিয়ম ও অন্যায় চালায়। আজ জুলাইয়ের নাম করে এনসিপিও একই রাস্তায় হাঁটছে, নিজেদের অনিয়মকে বিপ্লবের মোড়কে ঢাকার চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে, বিএনপি বা জামায়াত--এরা এক ধরনের বিপক্ষ শক্তি, কারণ আদর্শিকভাবে দুর্বল ও জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নেতৃত্বহীন। তাই তারা অনেক সময় প্রতিপক্ষ হিসেবে ঠেকায় থাকলেও, বিকল্প বিশ্বাসী শক্তি হয়ে উঠতে ব্যর্থ।

পরিশেষ

যেদিন রাজনৈতিক দল, বিপ্লবী গোষ্ঠী, কিংবা জনমতের নেতারা নিজেদের ইগো বা ‘নিজেই করবো’ বা আমি নিজেই সব বুঝি বা আমার চেয়ে বড়ো জ্ঞানী আর কে এই মানসিকতা পরিহার করে,

যে কাজ যিনি ভাল পারেন, তাকেই সেই দায়িত্ব দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসবে, সেদিনই এই দেশের মানুষ প্রকৃত মুক্তি ও শান্তি পাবে। কারণ, কোনো কাজই ছোট নয়, কিন্তু কাজটা যেন উপযুক্ত হাতেই হয়, সেটাই হবে সমগ্র সমাজের মঙ্গল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়