প্রকাশ : ১২ মে ২০২২, ০০:০০
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে চাঁদপুর জেলা পরিষদ প্রশাসক আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারীর আশাবাদ
পাঁচ বছরের মূল্যায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিবেন
ধানমন্ডির ৩২ ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি যতদিন বাঙালি আঁকড়ে ধরে রাখবে ততদিন এ জাতি পথ হারাবে না
‘আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের কর্মী, জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী। নেত্রীর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস, আস্থা ও শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি পাঁচ বছর এই জেলাবাসীর সেবা করেছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার দোয়া ছিল বলে আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এ সুযোগটুকু পেয়েছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই পাঁচ বছরের মূল্যায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদে আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন দেবেন’।
|আরো খবর
এভাবেই বেশ আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ়তার সাথে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ও নবনিযুক্ত প্রশাসক আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী। তিনি গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এই মতবিনিময়ে তিনি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদকালে কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ধানমন্ডির ৩২ ও বঙ্গবন্ধুর সমাধি বাঙালি জাতি যতদিন আঁকড়ে ধরে রাখবে ততদিন এ জাতি পথ হারাবে না।
মতবিনিময় সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন রাসেলসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক সদস্য মুকবুল হোসেন মিয়াজী, মোঃ বিল্লাল হোসেন, আল-আমিন ফরাজী, মোঃ তুহিন প্রমুখ।
মতবিনিময় সভার শুরুতে শুভেচ্ছা স্বাগত বক্তব্যসহ লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন, কাজী শাহাদাত, শহীদ পাটোয়ারী ও শরীফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সোহেল রুশদী, এএইচএম আহসান উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলম পলাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শান্ত, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আল-ইমরান শোভন, সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, ফটোজার্নাালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএ লতিফ, সাধারণ সম্পাদক কেএম মাসুদ প্রমুখ।
জেলা পরিষদের প্রশাসক আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কোভিড-১৯ পৃথিবীকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। এ ভাইরাসের থাবায় উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল ছিল দীর্ঘ-তা আপনারা জানেন। আল্লাহর রহমতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা অনেকটাই নিরাপদ ছিলাম এই ক্রান্তিকালেও। ভ্যাকসিন দেয়ায় আমরা বিশ্বে ৫ম স্থানে আছি। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্বাভাবিক ছিল। কোনো মানুষই না খেয়ে বা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন নি।
জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৭ সালে ১১ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথবাক্য পাঠ করান। শপথবাক্য পাঠ করার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সকল চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে নীতি-নির্ধারণী বক্তব্য পেশ করেন। বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল- জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণ। স্বাধীনতার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো ও সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল মানুষের দ্বারে পৌঁছে দেয়ার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা। আমরা সকল চেয়ারম্যান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাবলী ধারণ করে তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ শুরু করি।
তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলা পরিষদের মাধ্যমে গত ৫ বছরে সীমিত সামর্থের মধ্যে সারা জেলায় নানামুখী উন্নয়ন, জনকল্যাণ, জনসেবামূলক কার্যক্রম/কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে। অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নাধীন। এর মধ্যে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনপুঞ্জি বিতরণ, মহান স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে সম্মাননা প্রদান, জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নিশ্চিতকরণ (চলমান), বাবুরহাটে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের পাশে সুদৃশ্য বঙ্গবন্ধু তোরণ স্থাপন, জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার লেখা বই বিতরণ, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান, দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা অনুদান প্রদান, বেকার ছেলে-মেয়েদের কর্মসংস্থানে রিকশা, ভ্যান, সেলাই মেশিন বিতরণ, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণ, আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে গভীর নলকূপ স্থাপন, গ্রামীণ জনগণের যাতায়াতে ব্রিজ, কালভার্ট, ঘাটলা, সড়ক উন্নয়ন, মসজিদ-মাদ্রাসা, মন্দির প্রভৃতি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে বীর নিবাস, গৃহহীনদের জন্য ৩৮টি বসতঘর নির্মাণ এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে বহুতল ভবন করা হয়েছে। করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে সারা জেলায়। জেলা পরিষদের আয়বর্ধক প্রকল্প হিসেবে হাজীগঞ্জে সুপার মার্কেট নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বাবুরহাটে আরেকটি মার্কেট নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন।
আলহাজ্ব ওচমান গনি পাটওয়ারী বলেন, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের সকল চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ মর্মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি হয়। সে হিসেবে আমারও মেয়াদ শেষ হয়। এর দশদিনের মাথায় ২৭ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য বিদায়ী বাংলাদেশের সকল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাদেরকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার নির্র্দেশ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে প্রদান করেন। এ জন্যে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের কাছে কৃতজ্ঞ।
ওচমান পাটওয়ারী আরো বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাঙালি জাতি ধানমন্ডি ৩২ ও জাতির পিতা সমাধিকে যতদিন আকড়ে/ধারণ করবে এই জাতি কখনো পথ হারাবে না। একইসাথে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে যতদিন বাংলাদেশের শাসনভার থাকবে ততদিন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকবে এবং বাংলাদেশ পথ হারাবে না।
ওচমান পাটওয়ারী বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বাধীনতার পক্ষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলার জনগণের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সকলে সর্বোচ্চ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিগত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ন্যায় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সকল সংকীর্ণতা কোন্দল ভুলে গিয়ে একযোগে কাজ করলে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।
তাঁর এই লিখিত বক্তব্যের পর উপস্থিত সাংবাদিকরা জেলা পরিষদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি এসব প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান বক্তব্য রাখেন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী। মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির ও লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্রধর, সাবেক সহ-সভাপতি আবদুর রহমান ও পার্থনাথ চক্রবর্তী, সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আলম রোকন ও ইব্রাহিম রনি, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বাদল মজুমদার ও একে আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ও তালহা জুবায়ের, আলোকিত চাঁদপুরের সম্পাদক জাকির হোসেন প্রমুখ।