মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় খালু কর্তৃক দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ধর্ষণের শিকার
  •   সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে বয়ান করায় ইমামকে চাকরি ছাড়ার নির্দেশ!
  •   এনআইডিতে ভোটার এলাকা হিসেবে থাকছে না বর্তমান ঠিকানা
  •   জাহাজে ৭ খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটনসহ বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি
  •   নিখোঁজের একদিন পর বৃদ্ধের মরদেহ মিললো পুকুরে

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২৩

চাঁদপুরের পাঁচটি রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের মেগা ক্লাব পিকনিক ‘ত্রিমোহনা’ সম্পন্ন

রো. কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন
চাঁদপুরের পাঁচটি রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের মেগা ক্লাব পিকনিক ‘ত্রিমোহনা’ সম্পন্ন

একটি পিকনিক আয়োজন করা বেশ কঠিন, আর যদি সেটা হয় ৩০৭ জনকে নিয়ে। সেই আয়োজনটি করেছে রোটার‌্যাক্ট অঙ্গনে চাঁদপুরের ৫টি ক্লাব। ক্লাবগুলো হচ্ছে : চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাব, চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটার‌্যাক্ট ক্লাব, চাঁদপুর সেন্ট্রাল গার্ডেন রোটার‌্যাক্ট ক্লাব, হাজীগঞ্জ রোটার‌্যাক্ট ক্লাব ও হিলশা সিটি রোটার‌্যাক্ট ক্লাব। চাঁদপুরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বড়ো ইভেন্টের আয়োজন।

বাংলাদেশে রোটার‌্যাক্ট অঙ্গনে ডিস্ট্রিক্ট দু ভাবে বিভক্ত। একটি ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২, অন্যটি ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮১। রোটারী ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২-এখন ৬৫ নামে পরিচিত। এ রকম বড়ো ইভেন্ট ডিস্ট্রিক্ট-৩২৮২ থাকা অবস্থায় কুমিল্লা, নরসিংদী, সিলেট ও চট্টগ্রামে আয়োজন করা হতো এবং প্রত্যেক জেলা থেকে রোটার‌্যাক্ট সদস্যরা সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। কিন্তু চাঁদপুরে কখনো বড়ো কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। ডিস্ট্রিক্টের ৩২৮২ তথা ৬৫-এর (চাঁদপুর জোনের) এই প্রথম বড়ো অনুষ্ঠান। আয়োজিত অনুষ্ঠানে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজার, ঢাকা, জামালপুর ও রাজশাহী জেলাগুলোর রোটার‌্যাক্টররা অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে আয়োজনটিও বেশ ঝাঁকজমক হয়েছে।

এই পিকনিককে ঘিরে কয়েকজন দিন-রাত একাকার করে খুবই পরিশ্রম করেছেন। যাদের পরিশ্রমে ২০ ডিসেম্বর সুন্দর একটি আয়োজনের সাক্ষী হয়েছে সবাই। শুধু তাই নয়, সেই সাথে বন্ধুত্ব, যোগাযোগ, সুসম্পর্ক, আন্তরিকতা ও ভালোবাসাও বেড়েছে বহুগুণ। যখন পিকনিকের আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং আয়োজনের জন্যে প্রথম সভা করা হয়, সে সভায় উপস্থিত থাকার ইচ্ছা থাকলেও আমি জরুরি কারণে উপস্থিত হতে পারিনি। কিন্তু পরে ৪টি ক্লাবের যৌথ মিটিংয়ে উপস্থিত হয়ে জানতে পারলাম, এটি কোনো ৪টি ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে পিকনিক নয়, ডিস্ট্রিক্ট-৬৫-এর রোটার‌্যাক্ট সদস্যদের নিয়ে। শুনে প্রথমে আনন্দ লাগলেও কিছুটা হতাশও ছিলাম। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং আর্থিক জটিলতা নিয়ে (বাংলাদেশের প্রায় সবাই এই জটিলতায় ভুগছে)।

যৌথ মিটিং শেষ হওয়ার পর হিলশা সিটি রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের চার্টার সভাপতি তাহমিনাকে বললাম, পিকনিকের যে আয়োজন এটি তো অনেক বড়ো বাজেট, আমরা কি পারবো? তাহমিনা বললো, ভাইয়া, আমরা যদি সকলে চেষ্টা করি, অবশ্যই সম্ভব। আপনি হতাশ না হলেই হয়। শুধু আপনাদের সহযোগিতা দরকার। তাহমিনা আমাকে বললো, ভাইয়া, যেহেতু বিভিন্ন জেলা থেকে রোটার‌্যাক্টররা আসবেন, তাদের সাথে যোগাযোগ বা রেজিস্ট্রেশনের দায়িত্ব কাকে দেয়া যায়? আপনি নাম সাজেস্ট করেন। আমি বললাম, আমি তোমার পাশে আছি। যদি কেউ পারে সে হচ্ছে আমার ক্লাব সচিব (রো. ওবায়েদুর রহমান)। কারণ আমি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকবো। আমি সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারবো না। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি। তারপর থেকে ১ মাস ৫ দিন হাতে নিয়ে কার্যক্রম শুরু মাল্টি জয়েন্ট পিকনিক ত্রিমোহনার।

দিন যতো যাচ্ছিলো, পিকনিক নিয়ে আগ্রহ বেড়ে চলেছিলো। কিন্তু আগ্রহ বাড়ার কারণও আছে। তাহমিনা, মঞ্জুর ভাইসহ আয়োজক কমিটির সকলেই একটু পর পরই সকল কিছুর আপডেট এবং সকলকেই কাজ করার জন্যে তাগাদা দিতো। প্রত্যেক ক্লাবের সভাপতি থেকে শুরু করে প্রত্যেক কমিটির সদস্যকে। সেই অনুযায়ী যার যার জায়গা থেকে সকলেই চেষ্টা করেছে চাঁদপুরে সুন্দর এবং গোছানো একটি পিকনিক উপহার দেয়ার জন্যে।

ম্যাগাজিনের সফলতা রোটার‌্যাক্ট বা রোটারী তাদের বড়ো কোনো অনুষ্ঠানে ম্যাগাজিন বা স্যুভেনিয়র বের করে। যেটি একটি অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। ম্যাগাজিনকে আর্থিক জটিলতা থেকে মুক্তির উপায়ও বলা যায়। দেশের এই সঙ্কটময় সময়ে রোটারিয়ান, ফিন্যান্স অ্যাডভাইজার ও রোটার‌্যাক্টরদের সহযোগিতায় মাল্টি ক্লাব পিকনিক এন্ড রিভার ক্রুজের ম্যাগাজিনটি সফলভাবে প্রকাশ পেয়েছে। যেটি পিকনিকের সফলতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

রেজিস্ট্রেশন শুনে অবাক ৫টি হোস্ট ক্লাবের আয়োজনে পিকনিকের রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল রোটারিয়ান ও রোটার‌্যাক্টর সহ ৩০৭ জন। যেটি কল্পনার বাইরে। যার জন্যে বিশেষভাবে ধন্যবাদ রো. ওবায়েদুর রহমান ভাইকে। তিনি ডিস্ট্রিক্টের সকল রোটার‌্যাক্টরের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়া হোস্ট ক্লাবের সভাপতিসহ আয়োজক কমিটির সকলের চেষ্টার পর এতো পরিমাণ রেজিস্ট্রেশন পাবো, যা সত্যিই অবাক হওয়ার মতোই।

অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ক্লাবের সকলেই সময় বের করে বিজ্ঞাপন সংগ্রহের জন্যে বের হতো। সেদিন ছিলো ৯ ডিসেম্বর সোমবার। ফিন্যান্স অ্যাডভাইজার রো. আল-আমিন হোসেন ভাইয়ের অফিসের কাজের চাপের মাঝখানে তিনি আমাদের সময় দিলেন বিকেল ৩টায়। আমি একটি মিলাদে অংশগ্রহণ করে ভাইয়ের অফিসে গেলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলো তাহমিনা আক্তার সায়েমা। যখন আল-আমিন ভাইসহ বিজ্ঞাপন সংগ্রহে যাবো, ঠিক তখনই মাজহারুল বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের সামনে দুপক্ষের তুমুল সংঘর্ষে দু ঘন্টা আটকা ছিলাম। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর আমাদের কাজ সম্পন্ন করলাম। যেটি সব সময়ই মনে থাকবে।

পিকনিকের দুদিন আগে পিকনিকের দুদিন আগে আমি, তাহমিনা, জিসানসহ লঞ্চ বুকিং দিতে গেলাম। লঞ্চ ঠিক করলাম বোগদাদীয়া-১২। লঞ্চটি ভালো মতো পর্যবেক্ষণ করলাম অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের জন্য। দেখতে পেলাম, রিভার ক্রুজের জন্যে বোগদাদীয়া-১২ পারফেক্ট। চাঁদপুরের ছেলে হয়েও বোগদাদীয়া-১২ লঞ্চটি আবিষ্কার করলাম নতুন করে অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের জন্যে।

পিকনিকের আগের দিন ১ মাস ৫ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে চলে আসলো মাল্টি ক্লাব পিকনিক। পিকনিকের আগের দিন আমাদের চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের একটি বোর্ড মিটিং ছিলো। বোর্ড মিটিং শেষে ক্লাব সচিব ওবায়েদুর ভাই, ক্লাবের দুজন সদস্য নিরব ও তাইয়্যেবসহ পিকনিকের নানা বিষয়ে কাজ করতে শুরু করলাম। সেই সাথে ৫টি হোস্ট ক্লাবের সদস্যদের কাজের আগ্রহ দেখে মনে হচ্ছিল চাঁন রাত। পরের দিন ঈদ। তখন মনে হলো, সবাই এ রকম মিলে মিশে কাজ করলে কতোই না ভালো লাগে। আরো বেশি ভালো লাগলো, অনেকদিন পর চাঁদপুর সেন্ট্রাল রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সাবেক সভাপতি মনসুর ভাইকে দেখে। গিয়ে কোলাকুলি করলাম ভাইয়ের সাথে।

অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের অভ্যর্থনা সবাই সবার জায়গা থেকে কাজে ব্যস্ত। অবশেষে শহরজুড়ে ফ্যাস্টুন লাগানোর দায়িত্ব পড়লো আমার এবং ওবায়েদুর ভাইয়ের উপর। সব কাজ গুছিয়ে ওবায়েদুর ভাই এবং আমি ফ্যাস্টুন লাগানোর জন্যে বের হলাম। ঠিক তখনই ওবায়েদুর ভাইয়ের কাছ ফোন আসতে থাকলো অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের চাঁদপুর শহর আগমনের। তিনি দিনব্যাপী অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের অভ্যর্থনার দায়িত্বে ছিলেন। রাত ১০টার ট্রেনে অনেক রোটার‌্যাক্টর চাঁদপুর আসলেন। তার মধ্যে দুজন নারী রোটার‌্যাটরও ছিলেন। তাদের অভ্যর্থনায় আমি ও অন্যান্য রোটার‌্যাক্টর ছিলাম। আমি বললাম, ভাই, আমি তাহমিনার বাসায় দুজন আপুকে দিয়ে আসি। আপনি তাদের হোটেলে দিয়ে দ্রুত আমার সাথে যোগাযোগ করেন। ফ্যাস্টুন লাগাতে হবে। যেই বলা সেই কাজ।

ফ্যাস্টুন লাগাতে আড়াই ঘণ্টা আমি শহরের প্লাটফর্মে ওবায়েদুর ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকলাম ফেস্টুন লাগাবো পিকনিকের প্রচারের জন্যে। কিন্তু ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট অপেক্ষার পর সকল অতিথি রোটার‌্যাক্টরকে হোটেলে পৌঁছিয়ে দিয়ে তিনি অবশেষে আমার কাছে আসলেন। এর মাঝখানে ওনাকে ১০ বার কল দেয়া হয়ে গিয়েছিলো। কিছুটা রাগও হলাম। শেষমেষ আশার পর তিনি এবং আমি শহরের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাস্টুনগুলো লাগালাম প্রচণ্ড শীত এবং মোটরসাইকেলের চলন্ত বাতাস উপেক্ষা করে। আমি ভাইকে বললাম, কানটুপি আনলে ভালো হতো। তিনি মোটরসাইকেল চালাতে এতোটাই পটু যে, উঁচুনিচু সব জায়গায় উঠিয়ে দেন। দক্ষ চালক না হলে দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত। (তিনি যে মোটর সাইকেল চালিয়েছিলেন, সেটি শীতের তীব্রতায় স্টার্ট নিতেই লাগতো ৫ মিনিট। আর তখনই বলে উঠতো আয় হায় নাহিন। স্টার্ট নেয় না কা।)

সারারাত সার্ভিস ফ্যাস্টুন লাগানোর পর ওবায়েদুর ভাইকে বললাম, ভাই, আমাকে বাসায় দিয়ে আইসেন। তিনি বললেন, তুমি বাসায় চলে যাবে, আমার তো সারারাত সার্ভিস দিতে হবে। এখনো অনেক অতিথি রোটার‌্যাক্টর আসা বাকি। সবাই আমাকেই ফোন দেয়, যোগাযোগ করবে। আমি বললাম, ভাই, কী করবেন এমন এক দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পিত হলো, যা পালন তো করতেই হবে। আর এটা আপনি ছাড়া কেউ পারবেও না। তিনি এবং আমি এক ফাঁকে পালকি হোটেলে অবস্থান করা অতিথি রোটার‌্যাক্টরদের সাথে সাক্ষাৎ করি। তারপর তিনি আমাকে বাসায় পৌঁছিয়ে দিলেন।

ঘুম ভাঙ্গলো সচিবের ফোনে আমার যখন কোনো পিকনিকের বিষয়ে কাজের প্রয়োজন হতো, তখন তাহমিনা এবং ওবায়েদুর ভাইকে সাথে সাথে ফোন দিতাম। ভেবেছিলাম আবার আমিই তাদের সকালে কল দিবো। কিন্তু সকালের প্রথম ফোন ওবায়েদুর ভাইয়ের কাছ থেকে আসলো এবং বললেন, ঘুম ভাঙছে নি? আমি বললাম, জ্বি। আমি তো সারারাত ঘুমাইনি। তুমি একটু সবাইকে কল দেও ক্লাবের। আমি তার কথা মতো সবাইকেই কল দিলাম ক্লাব পিকনিক ওপেনিং সেশনে দ্রুত সবাইকে আসার জন্যে। সময় তখন সকাল ৬টা।

ক্লাব সদস্যদের নিয়ে মাল্টি ক্লাব পিকনিক ওপেনিং সেশন ঠিক ৮টায় শুরু হবে। রেডি হয়ে বের হওয়ার পর কালিবাড়িতে আমার ক্লাবের কিছু সদস্যের সাথে একে একে দেখা হওয়ার পর তাদের নিয়ে রওনা হলাম পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজ। তার আগে ওবায়েদুর ভাই নাস্তায় সিদ্ধ ডিম নেওয়ার জন্যে আধা ঘন্টা অপেক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি বললেন, তুমি চলে যাও। ক্লাব সদস্যদের নিয়ে ডিগ্রি কলেজের সামনে গিয়ে দেখি, হুডি গায়ে মোটরসাইকেলে তিনি। বললাম, আপনি আবারও আধাঘন্টা সময় নষ্ট করলেন আমার?

সবার সাথে সাক্ষাৎ পিকনিকের ওপেনিং সেশনে আস্তে আস্তে সবাই আসতে শুরু করলেন। সবার সাথেই কম-বেশি সাক্ষাৎ করলাম টি-শার্ট, গেঞ্জি, ম্যাগাজিন, কুপন ক্লাব রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী বুঝে নিতে। হলরুমে ওপেনিং সেশনে যোগ দিলাম। ওপনিং সেশনে আল-আমিন ভাই ও তাহমিনার সঞ্চালনায় রোটারিয়ান, রোটার‌্যাক্টরদের হাত ধরে গেঞ্জি, ম্যাগাজিন উন্মোচন হলো। কোরআন তেলাওয়াত, প্রত্যয়, বক্তব্য, রোটারিয়ানদের পুরস্কার এবং দুটি নৃত্যের মাধ্যমে ওপেনিং সেশন শেষ হলো।

যাত্রা এখন লঞ্চ ভ্রমণে

লঞ্চের দিকে সবাই লাল টি-শার্টটি পরে রওনা হলো। সবাই লঞ্চে ওঠার পর সকালের নাস্তা ডিম, কলা, রুটি, পানি খেলো। তারপর সবাই সবার মতো এনজয় করা শুরু করলো। কেউ লঞ্চের ছাদে উঠে প্রকৃতি ও নদীর দৃশ্য উপভোগ করলো। কেউ ছবি তোলায়, কেউ রোটার‌্যাক্টরদের মধ্যে ফেলোশীপের ব্যস্ততায়, কেউ গ্রুপ ছবি তোলায়, কেউ গিটারের সাথে গান, কেউ নাচের তালে তালে বোগদাদীয়া-১২ লঞ্চটিকে আনন্দঘন পরিবেশে ভরে তুললো। ৪ ঘণ্টা নদী ভ্রমণের পর অবশেষে পৌঁছালাম কোম্পানি চরে। কিন্তু লঞ্চের পুরো পরিবেশে শুধু একজনকে খুবই মিস করেছি, তিনি হচ্ছেন ওবায়েদুর ভাই। তিনি কোম্পানি চরে খাবারের দায়িত্বে চলে গিয়েছিলেন। তার এই ত্যাগ মাল্টি ক্লাব পিকনিকের সদস্যরা মনে রাখবে নিঃসন্দেহে।

সম্মিলিত নাচে অংশগ্রহণ রোটার‌্যাক্টররা যখন হিন্দি, বাংলা গানের তালে নাচে ব্যস্ত, তাতে আমিও গিয়ে অংশগ্রহণ করলাম। গিয়ে দেখলাম, আমার ক্লাব সদস্য ফারাবি, তাইয়্যেব, রাকিবুল ইসলাম আগে থেকেই সেখানে আছে। আমিও তাদের সাথে জয়েন করলাম। আমি এতো পরিমাণ নাচলাম, আমার নাচ দেখে আমার ক্লাবের যে সকল মেয়ে ছিলো তারাও নাচে অংশগ্রহণ করলো এবং বললো, আজিজুল ভাইয়ের নাচ দেখে আজ নাচ শিখলাম। ক্লাব সদস্যরা সবাই মিলে একটি স্মৃতি ধরে রাখলাম। সাথে আমাদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন আমাদের ক্লাবের আইপিপি নাজমুর নাহার আপু ও নাজমুল হোসেন তুহিন ভাই।

ট্রলারে করে কোম্পানি চর লঞ্চ ভ্রমণের পর সকলে ট্রলারে করে কোম্পানি চরে গেলাম। প্রথম ট্রিপে ১৫০ রোটার‌্যাক্টর গেলো। দ্বিতীয় ট্রিপে আমরা ছিলাম। নদীর জোয়ার-ভাটার কারণে কোম্পানি চরের অনেক দূরে ট্রলারটি নামিয়ে দিলো। কারণ ট্রলারটি ঐ চরে ঢুকলে আটকা পড়তো। ট্রলার থেকে নেমে দেড় কিলোমিটার হেঁটে কোম্পানি চরে পৌঁছলাম। সেই সাথে ডানে ও বামে দুটি দৃশ্যই উপভোগ করলাম। কেউ কেউ তো পাশের সরিষা ক্ষেতে ছবি তোলা মিস করতে চাইলো না।

দূর থেকে দেখা যায় টিকটকারকে ট্রলারে করে যখন কোম্পানি চরে যাচ্ছিলাম, তখন দেখতে পেলাম যে, সকল রোটার‌্যাক্টর হেঁটে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রোটার‌্যাক্টর আঁখি চৌধুরী টিকটক করতে ব্যস্ত। সবাই তখন সবকিছু ভুলে টিকটক দেখতে ব্যস্ত ছিলো। ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির পাস্ট প্রেসিডেন্ট অনিক ভাই তো হ্যান্ড মাইক দিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তার হ্যান্ড মাইক ট্রলারের শব্দে অতদূর পৌঁছালো না। বোঝা গেলো টিকটকের কাছে মাইক ফেল।

কোম্পানি চর কোম্পানি চরে গিয়ে সবাই অবাক হলো। কারণ বিশাল খোলা মাঠ এবং রোটার‌্যাক্টরদের ছবি তোলার জায়গা, পাশে নদী সত্যিই অসাধারণ। কোম্পানি চরে গিয়ে সকলের দুর্বল শরীর চাঙ্গা হয়ে গেলো এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

তৃপ্তি সহকারে খাবার কোম্পানি চরে গিয়ে সবার ক্ষুধা বহু গুণে বেড়ে গেলো। আমরা ট্রলার থেকে নেমে হেঁটে নদীর পাড় দিয়ে এসে কোম্পানি চর পর্যন্ত আসলাম। এসে দেখি সবাই তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। কেউ খাচ্ছে, কেউ খাবারের জন্যে লাইনে দাড়ানো। গরম গরম ইলিশ ভাজা, বেগুন ভাজা, মুরগি, ডাল তৃপ্তি সহকারে সকলে খেলো। ধন্যবাদ যারা খাবারের দায়িত্বে ছিলেন। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এসে অতিথি রোটার‌্যাক্টররা ইলিশের সঙ্কটের সময়েও ইলিশের কিছুটা স্বাদ নিয়ে গেলেন। আরো বেশি ভালো লাগলো আমাদের পিডিআরআর সাজ্জাদ ভাই এবং সাবেক ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারী রিফাত ভাই তারা নিজ উদ্যোগে খাবার সাপ্লাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন। ফলে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়ে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খেতে পারলো।

ছেলে ও মেয়েদের খেলা সবার খাওয়া-দাওয়া শেষে মেয়েদের বালিশ ও চেয়ার সিটিং খেলাটি বেশ উপভোগ্য ছিলো। খেলার দায়িত্বে ছিলেন মঞ্জুর আলম ভাই। অন্যদিকে ছেলেদের একটি স্ট্যাম্পে বল শুট ও ফুটবল শট দিয়ে গোল বারে ঢোকানো। এই দুটি খেলার দায়িত্বে ছিলেন জিসান আহমেদ, রিজভী ভাই, আমি ও কিছু অতিথি রোটার‌্যাক্টর। খেলায় অংশগ্রহণ করে রোটার‌্যাক্টররা ও অতিথিরা বেশ এনজয় করেছেন। এছাড়া যে যার মতো ফুটবল এবং ক্রিকেট খেলায় মগ্ন ছিলো।

চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের হ্যাট্রিক মেয়েদের চেয়ার সিটিং খেলায় চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের তিনজন মেয়ে সদস্য কাকতালীয়ভাবে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। প্রথম হয়েছেন রো. ফাতেমা আক্তার, দ্বিতীয় হয়েছেন জান্নাতুল ফেরদৌস মিম, তৃতীয় হয়েছেন শান্তা আক্তার। তাদের এ অর্জন সত্যিই অসাধারণ। এছাড়া চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের গেস্ট ছফিউল্লাহ তালুকদার ফুটবল শটে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

র‌্যাফেল ড্র পিকনিকের র‌্যাফেল ড্রয়ের ব্যবস্থা ছিলো তিন ধাপে--সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায়। সকালের ড্রটি হয়েছে লঞ্চে। দুপুরেরটি হয়েছে পিকনিক স্পটে। কথায় আছে না, যার ভাগ্য ভালো সে পায় বার বার আলো। সেরকমই দুটি মোবাইল সেট একজনই পেয়েছে। ভাগ্যের পরিহাস কি, না ইতিহাস বুঝতে পারলাম না। আশায় ছিলাম সন্ধ্যায় পাবো। কিন্তু সন্ধ্যার ড্রটি পরে আর হলো না। মিস হয়ে গেলো আমার ফোন তোমার ফোন ওরফে আইফোন। কিন্তু আসলে ছিলো বাটন ফোন।

গ্রুপ ছবি

আসরের আজানের পর পরই সকলে গ্রুপ ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে গেলো। সাজ্জাদ ভাইয়ের এবং রিফাত ভাইয়ের উদ্যোগে সবাই একত্রে ফটো ফ্রেমে আবদ্ধ হলাম।

ট্রলারের উদ্দেশ্যে যাত্রা : পুরস্কার বিতরণীর পর পিকনিকের সমাপ্তি শেষে সকলে ট্রলারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। সকলে আবার দেড় কিলোমিটারের পথ হাঁটলো সবাই একে অপরের সাথে কথা বলে। দুটি ট্রলার অপেক্ষা করছিলো সেখানে। দুটি ট্রলারে রোটার‌্যাক্টরদের লোড নিয়ে যাত্রা করলো চাঁদপুর বড়স্টেশন। তখন কোন্ ট্রলার কার আগে যাবে এমন প্রতিযোগিতা হচ্ছিলো। এতে সকলে উচ্ছ্বসিত ছিলো। আমাদের ট্রলার প্রথমে আগে থাকলেও পরে তা পিছিয়ে গিয়ে ট্রলার প্রতিযোগিতার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিলো। আরো ভালো লাগলো আমার ক্লাবের সদস্য ফারাবির কথা শুনে। কাঁধে হাত রেখে বললো, ভাই! কী খবর? আমি বললাম, কেমন লাগলো? তোমাকে তো খুঁজে পেলাম না। বললো, ভাই আজ আমি নিজের মতো এনজয় করেছি। এখানেই সার্থকতা।

সবশেষে পিঠা

বড়স্টেশনে গিয়ে ৪টি পিঠা স্টল। সবাই যে যার মতো স্টলে গিয়ে চিতই ও ভাপা পিঠা উপভোগ করলো। কেউ চিতই পছন্দ করে, কেউ বা ভাপা পিঠা। চিতই ও ভাপার সংমিশ্রণে কেউ কেউ ডিম চিতই খেয়ে ফেললো অন্য টোকেন ব্যবহার করে। যেটি পরে জানতে পারলাম। তারপর চা খাওয়ার পর একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করে অতিথি রোটার‌্যাক্টররা যে যার গন্তব্যে রওনা দিলো। যাবার আগে সবাই বলে গেলো, বেস্ট পিকনিক উপভোগ করলাম। যেটি সারাজীবন মনে থাকবে।

ধন্যবাদ তাদের, যাদের পরিশ্রমে মাল্টি ক্লাব পিকনিক সম্পন্ন হয়েছে। বিশেষ করে ধন্যবাদ আল-আমিন ভাই, দেলোয়ার হোসেন সুমন ভাই, রেজাউল ইসলাম রকি ভাই, মঞ্জুর আলম ভাই, আব্দুর রহমান অনিক ভাই, ওবায়েদুর রহমান ভাই, বন্ধু সামিউল প্রধান, তাহমিনা আক্তার সায়েমা, জিসান আহমেদ, অভয় সিং, অর্নবকে এবং সকল রোটারিয়ান ও রোটার‌্যাক্টরকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়