প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
সূচীপাড়া উত্তর ইউপি চেয়ারম্যানের ১৩ প্রকার অনিয়ম তুলে ধরলেন সাবেক ও বর্তমান ৪ মেম্বার
শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদারের বিরুদ্ধে ১৩ প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন সাবেক ও বর্তমান ৪ মেম্বার।
|আরো খবর
রোববার রাতে সাবেক মেম্বারদের বেতনের টাকা না দিয়ে টালবাহানাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ও চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন সংরক্ষিত নারী মেম্বার সাবরিনা নুসরাত কবিতা ও ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মোঃ শাহ মিরন।
সাংবাদিকদের কাছে ২ মেম্বার স্বাক্ষরিত সরবরাহকৃত লিখিত বক্তব্যে তারা জানান, সূচীপাড়া (উঃ) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মজুমদার শপথ গ্রহণ করার পর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের এনআইডি কার্ড নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবনে অফিস না করে নিজস্ব ভাড়াটিয়া জায়গায় অফিস করেন। এতে ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ সেবা কার্যক্রম সঠিকভাবে পাচ্ছে না। জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি নিয়মিত অফিস করেন না। ইউনিয়ন পরিষদ নিয়মণ্ডনীতি মেনে পরিচালিত হচ্ছে না। পরিষদের মাসিক, ত্রৈমাসিক সভা না করে চেয়ারম্যান নিজের ইচ্ছামত একতরফা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদে রেজ্যুলেশন বিহীন কাজ ও মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্প কমিটি জমা, জনসংখ্যা অনুপাতে ওয়ার্ডভিত্তিক কাজ ও রিলিফ বন্টন করেন না।
অভিযোগে আরো বলা হয়, জন্ম নিবন্ধনে বেশি টাকা গ্রহণ ও জনগণকে হয়রানি করে যাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ইউনিয়ন পরিষদ প্রকল্প কমিটিতে চেয়ারম্যান নিজের সুবিধার জন্যে নিজস্ব ওয়ার্ড মেম্বারকে সভাপতি না করে অন্য ওয়ার্ড মেম্বারকে প্রকল্প কমিটির সভাপতি করে প্রকল্প কমিটি জমা দেন, যা ইউনিয়ন পরিষদ নীতিমালার পরিপন্থী। ইউনিয়ন পরিষদের এল.জি.এস.পি. কাজ করার জন্য তাঁর নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনের নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স (শাহ এন্টারপ্রাইজ, রমনা কর্পোরেশন, লিমন এন্টারপ্রাইজ ও মজুমদার এন্টারপ্রাইজ)-এর নামে চেকবই স্বাক্ষর সহ তার নিজের হাতে পরিচালনা করেন। যার হালনাগাদ আয়কর নেই, যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত করা যাবে, যা আইনত ভুয়া লাইসেন্স। ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প দেখিয়ে প্রকল্প এরিয়ার বাড়ির লোকজন হতে কাজ করার কথা বলে অর্থগ্রহণ করে যাচ্ছেন। যেমন : রাউৎ বাড়ির রাস্তার সলিং, রাজাউল্লাহ মিঝি বাড়ির পুকুর গাইড ওয়াল প্রকল্প শোরসাক কাচারী বাড়ি থেকে খালপাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য ১৬০০ কেজি চাল বরাদ্দ ছিল, তা আত্মসাৎ করা সহ অন্যান্য প্রকল্প।
অভিযোগে বলা হয়, আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল বাণিজ্য করতে সরকারি ফি ব্যতীত অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ, প্রতি টিউবওয়েলে ২৫/৩০ হাজার টাকা ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি। জনস্বার্থে টিউবওয়েল না দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থে আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল দিয়ে যাচ্ছেন, যা তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণ করা যাবে। ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কাজ, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড ও রিলিফ কার্যক্রম সমভাবে বন্টন না করে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে গুরুত্ব না দিয়ে তার ছোটভাই (হুমায়ন) ও নিকট আত্মীয়-স্বজন দ্বারা রিলিফ কার্ড করা ও বিতরণ করে থাকেন। ২ দিন আগে শাহ মিরন মেম্বারের বিরুদ্ধে সুলতানের নামের চালের কার্ডের যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এসব করা হয়েছে। সাবরিনা নুশরাত কবিতা মেম্বারের বিরুদ্ধে পেয়ারা বেগম ও হারুনুর রশিদ যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
এই মহিলা মেম্বার সাংবাদিকদের আরও জানান, গত শনিবার চেয়ারম্যান ও তার ভাই হুমায়ুন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ আনায় তার উপর হামলা করে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। একই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী মেম্বার শিল্পী বেগম জানান, তার আগের প্রয়াত নূরজাহান মেম্বারের জানাজায় দাঁড়িয়ে চেয়ারম্যান ওয়াদা করেছিলেন, তিনি নূরজাহান মেম্বারের বকেয়া বেতন দিয়ে দিবেন। ওনার বেতন তো দূরের কথা, উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে দায়িত্ব নেয়ার পর আমি ১ মাসেরও বেতন পাইনি। চেয়ারম্যান আমাকে কোনো প্রকল্প দেননি। শুধু শুধু বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হয়ে আমি সেখান থেকে কোনো আর্থিক সহায়তা পাইনি।
৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মোঃ হাতেম আলী জানান, আমার ৫ বছর মেয়াদকালে ৫৪ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে।
উল্লেখ্য, উক্ত ইউনিয়নে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ইউনিয়ন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের আওতায় ৯নং ওয়ার্ডের শোরসাক ফিশারী পুকুর পাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পের কোনো প্রকার কাজ না করে বাস্তবায়ন কমিটির সকলের স্বাক্ষর জাল করে কমিটি জমা দিয়ে বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে ইউনিয়ন কমিটির প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছে। অর্থ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে এমনটি করা হয়েছে মর্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন ৯নং ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার মিরন হোসেন (শাহ মিরন) ও নারী মেম্বার সাবরিনা নুশরাত। অভিযোগের পর তড়িঘড়ি করে চেয়ারম্যান ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন মর্মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়, যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান গত ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেন। এর পরদিনই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আবারও মুখ খোলেন সাবেক ও বর্তমান ৪ মেম্বার।