প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের মধ্যপোঁয়া গ্রামের মৃত মুখলেছুর রহমানের ছেলে বাবুল মিয়া (৩৯) গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার পর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি পেশায় নির্মাণশ্রমিক এবং ২ মেয়ে ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার আত্মহত্যাটি অন্যান্য আত্মহত্যার মতো নয়। সেজন্যে এর পেছনে কোনো প্ররোচনা রয়েছে কি না সেটি অনুসন্ধান করা দরকার। কিন্তু কে করবে এই অনুসন্ধান, পুলিশের কাছে যদি এমন অনুসন্ধানের তাগিদ অনুভূত না হয়। তবে আশার কথা এই যে, ফরিদগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
নির্মাণশ্রমিকরা অনেকটা প্রাত্যহিক পারিশ্রমিক অর্জনের ওপর নির্ভরশীল সাধারণ শ্রমিক। বাবুল মিয়ার আয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণ পোষণ এবং ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চলতো। তার আত্মহননের পর শোক ও অনিশ্চয়তা তার পরিবারকে হতাশায় নিমজ্জিত করবে। তার মাধ্যমিক স্কুল পড়ুয়া মেয়ে রিমা আক্তারের পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হবে। এছাড়া অন্য দু সন্তানের অবস্থা একই হবে। বাবাহীন ছেলে-মেয়েরা দারিদ্র্যের কষাঘাতে নিপতিত হবে। এটা কি বাবুল মিয়া জানতেন না?-নিশ্চয়ই জানতেন। তাহলে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ কোনো করতে গেলেন? অবশ্যই এর পেছনে প্ররোচনা আছে, যেটি ঘটনার পরম্পরা থেকে ধারণা করতে কারো অসুবিধা হবার কথা নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী বাবুল মিয়ার আত্মহত্যা সংক্রান্ত যে সংবাদ চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশন করেছেন, তাতে তিনি লিখেছেন, গত তিনদিন পূর্বে বাবুল মিয়ার সাথে তার বাড়ির অন্য পরিবারের সদস্যদের ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে বাবুল মিয়াকে তার স্ত্রী ও মেয়ের সামনে মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে বিক্ষুব্ধ হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করতে যান। অভিযোগ লেখানোর পর থানায় জমা না দিয়ে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিয়ে বিচারের দাবিতে বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হন বাবুল মিয়া। প্রশ্ন হলো, তিনি অভিযোগটি থানায় জমা দিলেন না কেন? এ সময় কে তাকে থানা থেকে তার অভিযোগের বিচার করার জন্যে স্থানীয় সালিসদের কাছে পাঠালেন? তিনি কি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা, না থানার দালাল সেটি অবশ্যই তদন্তযোগ্য বিষয়। কেননা ইউপি সদস্য মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, বাবুল মিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে আমি শুনেছি। কিন্তু থানা থেকে ফিরে তিনি কিংবা তার প্রতিপক্ষ আমার কাছে বিচারের জন্যে আসেন নি। ইউপি সদস্যের এমন বক্তব্যে প্রশ্ন হলো, তাহলে বাবুল মিয়া ইউপি সদস্যদের মতো প্রভাবশালী লোককে বাদ দিয়ে অন্য এমন কোন্ কোন্ লোকের কাছে বিচারের জন্যে গিয়েছেন?-নিশ্চয়ই এরা বাবুল মিয়ার অভিযোগের আলোকে বিচার করেননি, কিংবা বিচার করতে গড়িমসি করে কালক্ষেপণ করেছেন, যাতে বাবুল মিয়ার ক্ষোভ ও অপমান কোনোটাই প্রশমিত হয়নি। ফলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তিনি নিজ ঘরে পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করলেন।
বাবুল মিয়ার আত্মহত্যার ঘটনায় তার পরিবারের কোনা সদস্য বা আত্মীয়-স্বজন যদি থানায় কোনো অভিযোগ ও মামলা নাও করেন, তারপরও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, চৌকস পুলিশ ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ শহীদ হোসেন গণমাধ্যমকে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্যের আলোকে বিষয়টিতে তদন্ত করবেন বলে বিশ^াস রাখি। বাবুল মিয়ার আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে গ্রাম্য সালিসরা যদি চিহ্নিত হয়, তারা যদি শাস্তি নাও পান, তারপরও বিভিন্ন গ্রামে সালিসের নামে কালক্ষেপণ, গড়িমসি, পক্ষাবলম্বনের মানসিকতাসম্পন্ন খারাপ সালিসরা সতর্ক হবেন এবং ভালো সালিসরা উৎসাহিত হবেন বলে আমরা মনে করি।