মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

তিনি কি অভিজ্ঞ না বিশেষজ্ঞ?

তিনি কি অভিজ্ঞ না বিশেষজ্ঞ?
অনলাইন ডেস্ক

গত ক’দিন যাবৎ চাঁদপুর কণ্ঠের প্রিন্টিং ও অনলাইন সংস্করণসহ বিভিন্ন অনলাইনের একটি খবর জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুকে’ ভাইরাল হয়েছে। ‘একাই ১৪ রোগের বিশেষজ্ঞ ইফতেখার উল আলম’ শীর্ষক খবরে খোদ চিকিৎসকরাই বিস্মিত ও বিব্রত হয়েছেন। সবার একই কথা, এটা কীভাবে সম্ভব?

১৯৫৩ সালের ৮মে জন্মগ্রহণকারী ভারতের দেবী শেঠী কার্ডিয়াক সার্জারিতে বিশেষজ্ঞ বিশ্বখ্যাত একজন চিকিৎসক। তিনি একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞতার মাধ্যমে ২০১২ সালে ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘পদ্মভূষণ’ পেয়েছেন। তিনি হৃদরোগের বাইরে অনেক রোগ নিয়েই স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে কথা বলেন। এমনকি বৈশি^ক মহামারী করোনা নিয়েও কথা বলেছেন। অথচ কার্ডিয়াক সার্জারিতে বিশেষজ্ঞতার বাইরে অন্য রোগের বিশেষজ্ঞতা নিয়ে নিজে কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কেউ তাঁর পরিচিতি তুলে ধরেন নি।

চিকিৎসকদের মধ্যে যারা জেনারেল ফিজিশিয়ান তারা অনেক রোগের বিষয়ে অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়ে পড়েন। তারপরও বিশেষ কিছু রোগের নাম উল্লেখ করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেকে অভিজ্ঞ বলে দাবি করে ভিজিটিং কার্ডে সেগুলো উল্লেখ করেন। এই রোগের সংখ্যা বড় জোর ৫-৬টি হয়ে থাকে। কিন্তু একজন চিকিৎসক নিজেকে ১৪টি রোগের বিশেষজ্ঞ দাবি করে ভিজিটিং কার্ডসহ সকল প্রচারপত্রে সেগুলো উল্লেখ করার ঘটনা বিরল। চাঁদপুরের ডাক্তার মোঃ ইফতেখার উল আলম নির্দ্বিধায় সে কাজটিই করেছেন।

ডাঃ ইফতেখার চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোডে টিএন্ডটি অফিস সংলগ্ন নিউ আল-কারীম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। তিনি তার ভিজিটিং কার্ডে নিজের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি হিসেবে লিখেছেন-এমবিবিএস, এফসিজিপি (মেডিসিন), সিসিডি (বারডেম), এমআরসিপি লন্ডন, এফএমডি (ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ), ডিপ-ইন-অ্যাজমা ও সিও পিডি, ডি.এম.ইউ. (আলট্রাসনোগ্রাফী)। এই ডিগ্রির নিচে তিনি লিখেছেন-মেডিসিন, বক্ষব্যাধি, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, বাতজ্বর, কিডনী, গ্যাস্ট্রোলিভার, পরিপাকতন্ত্র, ব্রেইন, প্যারালাইসিস, ডায়াবেটিস, বাতব্যথা, চর্ম-যৌন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।

ডাঃ ইফতেখার নিজেকে উপরোক্ত ১৪টি রোগে অভিজ্ঞ দাবি করে ভিজিটিং কার্ডসহ প্রচারণা চালালে গণমাধ্যম কর্মীর শ্যেন দৃষ্টির আওতায় আসার বিশেষ সুযোগ ছিলো না। কিন্তু তিনি বিশেষজ্ঞ দাবি করায় ঘটলো যতো বিপত্তি। বেরসিক গণমাধ্যম কর্মীর বিশেষ খবরের উপজীব্য হয়ে গেলেন তিনি। ডাঃ ইফতেখারের বক্তব্য হচ্ছে, এত্তোসব রোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্র তথা প্রমাণাদি তিনি চাঁদপুর জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। অথচ সিভিল সার্জন বিস্ময়ের সাথে সেটি অস্বীকার করেছেন। শুধু তা-ই নয়, চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ডাঃ ইফতেখারসহ আরো অনেক ডাক্তারের কিছু ডিগ্রি ও ট্রেনিং কোর্সকে প্রতারণামূলক বলে উল্লেখ করে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এসব ডিগ্রি বিএমডিসি স্বীকৃত নয়।

‘বিশেষজ্ঞ’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন বা পা-িত্য সম্পন্ন। ডাঃ ইফতেখার যদি সত্যিই ১৪টি রোগের বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি একটি অখ্যাত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার চেম্বার পরিচালনা করার কথা নয়। এছাড়া তার বিশেষজ্ঞতার খ্যাতিতে তিনি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ইতোমধ্যে ছোট-বড় পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা কি ‘জ্যাক অব অল ট্রেডস্, মাস্টার অব নান?’ আমাদের মতে, ডাঃ ইফতেখার হয়তো অনেক রোগে অভিজ্ঞ, তবে বিশেষজ্ঞ নন। সেজন্যে তার প্রচার সামগ্রীতে সংশোধনী আনা বাঞ্ছনীয়। সেটি করলে রোগীরা বিভ্রান্ত হবেন না এবং তিনিও বিতর্কিত হবেন না। আমরা বহু রোগের বিষয়ে ডাঃ ইফতেখারের অভিজ্ঞতার ফলস্বরূপ চাঁদপুরসহ সন্নিহিত অঞ্চলের রোগীরা উপকৃত হোক-সে প্রত্যাশা করছি।  

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়