প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার এতোটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হয় কীভাবে!

আমাদের দেশে বিচার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে গ্রাম আদালত। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে দুপক্ষে দুজন ইউপি সদস্য ও আরো দুজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে সদস্য করে মোট পাঁচ সদস্যের গ্রাম আদালত গঠিত হয়। কিন্তু অধিকাংশ ইউপিতে গ্রাম আদালত প্রচলিত আইনে চলে না। নামকাওয়াস্তে এই আদালত অস্তিত্ব জানান দিয়ে চললেও ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বাররা গতানুগতিক সালিস-দরবারেই বেশি ব্যস্ত থাকেন এবং প্রায় প্রতিদিনই ছোট-বড় জটিল সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রেখে চলেন। তবে কোথাও কোথাও সালিসের নামে চলে আইন/ক্ষমতা/এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এতে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি কম-বেশি শক্তিশালী হলেই প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে গিয়ে থানায়/কোর্টে মামলা করেন কিংবা কোনো না কোনো মিডিয়ার দ্বারস্থ হন। আর তখনই সেটা ব্যাপক জানাজানি হয়ে যায় এবং আইনগত প্রক্রিয়া চলতে থাকে। কখনও কখনও এই প্রক্রিয়ার কঠোরতায় বিস্ময় প্রকাশ করতে হয়। এমন একটি বিস্ময়ই হচ্ছে ‘ফরিদগঞ্জে চাঁদাবাজি মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার কারাগারে’ শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় জেলে যেতে হলো ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১২নং চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান মাস্টার ও একই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুস সাত্তারকে। ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের বিচারিক আদালত-১-এর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মোরশেদুল আলমের আদালতে একটি চাঁদাবাজির মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত ১নং আসামী মোহাম্মদ শাহজাহান মাস্টার ও ২নং আসামী আব্দুস সাত্তারের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন এবং বাকি আসামীদের জামিন প্রদান করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডঃ মোঃ হুমায়ুন কবির জানান, চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের জনৈক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে চাঁদপুর জুডিশিয়াল আদালতে মামলা (সিআর নং ৪৪০/২৩) দায়ের করেন। মামলায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মাস্টার ও ইউপি সদস্য মোঃ আবদুস সাত্তারসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। আদালত মামলা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। পিবিআই চাঁদপুরের পরিদর্শক পুলক বড়ুয়া জানান, আদালত কর্তৃক মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে ব্যাপক তদন্ত করি। মামলার বাদী আলমগীর হোসেন তার স্ত্রীকে বেআইনীভাবে আটকে রেখে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ করেন। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেই।
মামলার বাদী আলমগীর হোসেন জানান, পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটির শুনানির দিন ধার্য করে। শুনানি শেষে আদালত ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মাস্টার ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ আব্দুস সাত্তারের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করে। উল্লেখ্য, মোহাম্মদ শাহজাহান চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাড়াও ফিরোজপুর জনকল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। এছাড়া তিনি ওই ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কারাগারে যাওয়া শাহজাহান মাস্টার যেহেতু পেশায় শিক্ষক ও একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সেহেতু তিনি নিতান্তই চাঁদাবাজ এ কথা ঢালাওভাবে বলা যায় না। তবে তার অবস্থা 'দশচক্রে ভগবান ভূতে’র মতো যে হয় নি সেটা বলা যাবে না। কারাগারে তার সাথে যাওয়া ইউপি মেম্বারসহ অন্যদের ক্ষমতা/আইন বহির্ভূত কোনো সালিসি কাজ বা ভুলের কারণে এবং তাতে সমর্থন বা মৌনতা অবলম্বনের কারণে যে তিনি (চেয়ারম্যান) চাঁদাবাজি মামলায় নিজেকে কলুষিত করেছেন, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। তার মতো অনেক ইউপি চেয়ারম্যান পক্ষপাতিত্ব/উদাসীনতা/ জেদের বশবর্তী হয়ে নেতিবাচক পরিণাম ভোগ করেন কিংবা মাথা নিচু করে আপসরফায় গিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। আমরা মনে করি, ইউপি চেয়ারম্যান/ মেম্বার হতে হলে নিরপেক্ষতা, ধৈর্যশীলতা, ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা, মানুষের মনের কথা পড়ার ক্ষমতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বসহ আনুষঙ্গিক গুণের অধিকারী হতে হয়। এমন গুণ না থাকলে তাদেরকে ফরিদগঞ্জের শাহজাহান মাস্টার ও তার মেম্বারের ন্যায় পরিণতি বরণ করাটাই সঙ্গত হয়ে যায়, যদিও তাতে বিস্ময় জাগে এবং থমকে দাঁড়াতে হয়।