রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মানবকল্যাণে পৃথিবীর পুনর্জাগরণ হোক

অনলাইন ডেস্ক
মানবকল্যাণে পৃথিবীর পুনর্জাগরণ হোক

গণনা ও দিন যাপনের সুবিধার্থে মানুষ সূচনা করে বর্ষপঞ্জির। এর ফলে দিনকে যেমন সূর্যের আপন অক্ষে বাঁধা সহজ হয়ে গেলো চব্বিশ ঘণ্টার তকমা দিয়ে, তেমনি বছরকেও তিনশ পঁয়ষট্টি দিন বা বারো মাসের সীমারেখায় আটকানো হলো। প্রতিটি দিন সূর্যোদয় দিয়ে সূচিত হলেও একেক দিনকে একেক নামে, একেক তারিখে ডেকে মনে রাখার ব্যবস্থা করা হলো, ঠিক এখন যেমন নাম দিয়ে ঘূর্ণিঝড়কে মনে রাখা হয়। আগে কত ঘূর্ণিঝড় এলো গেলো, তার কোনো ইয়ত্তা ছিলো না। কিন্তু এখন নামকরণের কারণে ঘূর্ণিঝড়গুলোকে মনে রাখা সহজ হয়ে গেলো। ঠিক তেমনি করেই বছর-মাস-দিনের হিসেবে সময়কে গণনা করে মানুষ নতুন আশা ও পরিবর্তনের প্রতীক্ষায় বুক বাঁধে। ফলে একবছরের ব্যাপ্তি শেষে বছরের শেষ সূর্যকে বিদায় দিয়ে মানুষ প্রতীক্ষা করে নতুন সূর্যোদয়ের। নতুনের জন্যে প্রতীক্ষা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। নতুনকে বরণের আয়োজন মানুষকে উদ্যমী করে তোলে। নানা আশা-আকাঙ্ক্ষায় নতুন দিনকে বরণ করতে গিয়ে মানুষ আসলে দিনটাকে বরণ করে না, বরং বরণ করে সৌভাগ্যের কল্পনাকে। গতকাল দুহাজার তেইশ সালের সূর্যের বিদায়ে একটা বছর বিগত হয়ে গেলো। সুখে-দুখে, আশায়-আনন্দে বছরটি পল্লবিত হয়ে উঠেছিলো মানুষের যাপনে। যদিও বিশ্বব্যাপী আর্থিক অস্থিরতা এবং যুদ্ধ-বিগ্রহ দুহাজার তেইশকে অর্থনৈতিক মন্দার বছর বলে অভিহিত করবে ভাবীকালে, তবুও দুহাজার তেইশ আমাদের জন্যে এনেছে দেশীয় উন্নয়নের মহাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন যা স্বপ্নে দেখাও আগে ছিলো কল্পনাতীত।

মিশরীয় ক্যালেন্ডার মতে, মানুষ সাত হাজার পাঁচশ তেইশ বছর আগে বর্ষ গণনা করতে শিখে। অর্থাৎ খ্রিস্টের জন্মের পাঁচ হাজার পাঁচশ বছর আগে থেকেই বর্ষ গণনা প্রক্রিয়ার সূচনা হয়। বর্তমানে যে খ্রিস্টিয় বছর দিয়ে আন্তর্জাতিক বর্ষপঞ্জি আবর্তিত হচ্ছে তা হলো গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি। আগে রোমান বর্ষপঞ্জিতে মার্চ দিয়ে বছরের সূচনা হতো এবং ফেব্রুয়ারি ছিলো বছরের শেষ মাস। ফলে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষে একদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শেষ মাস তথা ফেব্রুয়ারিতেই বর্তায়। তাই শুরুতে ফেব্রুয়ারি কখনো তেইশ দিন, কখনো পঁচিশ দিনেও গেছে। সবশেষে তা সাতাশ-আটাশ দিনে থিতু হয়েছে। গ্রিক ক্যালেন্ডার অনুসারে তিনশ চার দিনে ছিল এক সৌর বছর। দশ মাসে গণনা হতো বছর। খ্রিস্টপূর্ব সাতশ তিরানব্বই অব্দে আরো ষাট দিন যুক্ত করে তিনশ চৌষট্টি দিনে বছর করা হলো। রোমান স¤্রাট জুলিয়াস সিজার জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি যুক্ত করে বর্ষপঞ্জিকে ঢেলে সাজান। পনেরশ বিরাশি সালে লিপ ইয়ারে একদিন অতিরিক্ত যুক্ত করে পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি বর্ষপঞ্জিকে পূর্ণতা দেন।

মাসগুলোর নামকরণ বেশ সুন্দর। খ্রিস্টিয় বর্ষের মাসগুলোর নাম রোমান পুরাণ হতে নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। জানুস হলো রোমার পুরাণে দ্বার রক্ষক। একে বলা হয় গড অব ডোরস। অর্থাৎ দুই মাথাওয়ালা দ্বার রক্ষাকারী দেবতা জানুস যার এক মাথা তাকিয়ে থাকে অতীতের দিকে আর অন্য মাথা তাকায় ভবিষ্যতের দিকে। এই জানুস থেকেই নাম হলো জানুয়ারি। 'ফেব্রুয়া' নামের এক উৎসব ছিলো প্রাচীন রোমে যার অর্থ শুদ্ধ করা। যেহেতু ফেব্রুয়ারি রোমান ক্যালেন্ডারে শেষ মাস ছিলো তাই আবর্জনার অতীত তাড়িয়ে শুদ্ধতার উৎসব দিয়ে পরবর্তী নতুন বছরের সূচনা করার জন্যে এর নাম হলো ফেব্রুয়ারি। রোমানদের কাছে যুদ্ধের দেবতা হলেন মার্স যার নাম হতে মার্চ মাসকে আমরা পেয়ে গেলাম ক্যালেন্ডারে। সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতির নাম থেকে এলো এপ্রিল আর 'মেইয়্যা' নামের শস্যের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হতে পেলাম মে মাসের নাম। জুন এল জুনো থেকে। জুনো হলেন দেবরাজ জুপিটারের পত্নী। তিনি বিবাহের দেবী। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার দিলেন জুলাই উপহার আর তার অনুগামী সম্রাট অগাস্টাস হতে পেলাম আগস্টের নাম। যেহেতু আগে দশমাসে বছর গণনা হতো তাই 'সেপ্টেম' বা সপ্তম হতে পেলাম 'সেপ্টেম্বর '। 'অক্টো' মানে আট তাই অক্টোবর নাম হলো অষ্টম অর্থে। 'নভেম' হলো নবম আর 'ডিসেম' হলো দশম। এভাবেই ক্যালেন্ডার পেয়ে গেলো নভেম্বর আর ডিসেম্বর মাসকে।

বছর যায় বছর আসে। সবাই নতুন আশার স্বপ্ন বোনে। নতুন বছর নতুন কিছু উপহার আনবে জীবনে। দুহাজার তেইশ বাংলাদেশকে দিয়ে গেছে অনেক কিছু। করোনার উপশম হয়েছে কিন্তু ডেঙ্গু গেছে ভুগিয়ে। মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে দুহাজার তেইশ বাঙালি জীবনে অমর হয়ে থাকলেও আন্তর্জাতিক বিশ্বে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আর ন্যাটোর মোড়লপনায় আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গিয়েছিলো প্রায়, শেষমেষ কোন্দিকে এ যুদ্ধ গড়ায়। মানুষের জীবনের ওপর এ যুদ্ধ সরাসরি চেপে না বসলেও মূল্যস্ফীতি দিয়ে তা আমাদের প্রায় দাবিয়ে রেখেছিলো। তেলের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি আমাদের জনজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভবিষ্যতের পৃথিবী মনে রাখবে, স্যালাইন ড্রপের মতো তেল দিয়ে পরোটা ভাজার কথা। বাংলাদেশের দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কখনো ডিমে, কখনো আলুতে আর কখনো পিঁয়াজে ইঁদুর-বেড়ালের মতো সাধারণ জনগণকে নিয়ে খেলেছে। এখনো সব্জির বাজার হতে শুরু করে নিত্যপণ্যের বাজারে চলছে মূল্যের দাবদাহ। চিনি যে কখন ঊর্ধ্ব গগণ হতে ভূতলগামী হবে তা কেবল ভবিষ্যৎই বলতে পারে।

দুহাজার তেইশের আরেক বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক ঘটনা হলো ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী-শিশু ও সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা। যে দুর্বিষহ মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণ তা ভাষায় প্রকাশযোগ্য নয়। তেইশের এই কলঙ্ক কখনও ইতিহাসে মোচনীয় নয়।

দুহাজার চব্বিশ বাংলাদেশে আসছে নতুন নির্বাচন নিয়ে। নানা দোলাচলে নির্বাচন উৎসবে পরিণত না হয়ে আশঙ্কায় দিন যাপন করছে। একদল নির্বাচনমুখী না হয়ে নির্বাচন বর্জনের লিফলেট বিতরণ করছে আর অন্যদল ভোটকেন্দ্রে ভোটার সমাগমের জন্যে দলের নেতাদের দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র নির্বাচনের কৌশল বাৎলে দিয়েছে। ফলে কোথাও কোথাও তা হিতে বিপরীত হয়ে দেখা দেওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিগত বছরে শিক্ষার রূপান্তর নিয়ে যে অপপ্রচার চলছিলো তা নতুন বছরে যথাযথ পদক্ষেপে স্তিমিত হবে বলে আশা করি। চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অসৎ উদ্দেশ্যে বার্বিকিউ পার্টির আয়োজনও আমাদের নতুন বছরের যাত্রাকে অস্থির করে তুলতে পারে। সকল কিছু ছাপিয়ে দুহাজার চব্বিশের নতুন বছর আমাদের জন্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক এই কামনা করি। যে যেখানে আছে সবাই যার যার অবস্থানে ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক। নতুন বছর যুদ্ধের সমাপ্তি নিশ্চিত করুক এবং মানবকল্যাণে পৃথিবীকে পুনর্জাগ্রত করে তুলুক। জাতিসংঘ সবার সংঘ হয়ে উঠুক। স্বাগত দুহাজার চব্বিশ, স্বাগত হোক নতুন প্রভাতের নতুন সূর্যোদয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়