প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
বালু সন্ত্রাসীরা দমছে না কেন?

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘ফরিদগঞ্জে বালু সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার মানব জমিন সাংবাদিক’ শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ফরিদগঞ্জে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে ডাকাতিয়া নদীর বালু সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক মানব জমিন-এর ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এ ব্যাপারে রাতেই থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ডাকাতিয়া নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা তাকে উদ্ধার করে।
জানা যায়, পুটিয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ডাকাতিয়া নদী থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করে আসছে। এ খবর পেয়ে দৈনিক মানবজমিন ও দৈনিক চাঁদপুর দর্পণ পত্রিকার ফরিদগঞ্জ অফিস প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল ওই স্থানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। এ সময় অবৈধ ড্রেজার ও বালু ব্যবসায়ী সোহেল ও সোলাইমানের কাছে তথ্য জানতে চাইলে তারা সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করে এবং আটক করে রাখে। এরপর থানা পুলিশের এসআই রুবেল ফরাজী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামালের ওপর বালু ব্যবসায়ীদের হামলার ঘটনায় ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামালকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।
ডাকাতিয়া নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ঘটনা চাঁদপুর জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে ফরিদগঞ্জে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেকটা স্রোতহীন ও কচুরিপানায় ঠাসা ডাকাতিয়া নদী থেকে মিনি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনকে বালু সন্ত্রাসীরা নিরুপদ্রব ও নিরাপদ ভাবে। হাজারো কাজে ব্যস্ত স্থানীয় প্রশাসন কালেভদ্রে যে অভিযান চালায়, তাতে বালুসন্ত্রাসীরা ভয় পায় না। তারা সরকারের ভূমি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা কৌশলে ম্যানেজ করে এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত করে নিজেদের শক্তিধর ভেবে কখনো থেমে থেমে, কখনো নিরবচ্ছিন্নভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে। সেজন্যে বালু উত্তোলনে প্রতিবাদী কেউ বাধা দিলে কিংবা কেউ সংবাদ করতে গেলেই বালুসন্ত্রারীরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে এবং হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বেপরোয়া আচরণ করে। যেমনটি গত ২৪ ডিসেম্বর ফরিদগঞ্জের সিনিয়র সাংবাদিক আবু হেনা মোস্তফা কামালের সাথে করেছে। এতে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে তাকে উদ্ধার ও মামলা গ্রহণ করেছে এবং ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু বালুসন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙ্গে দিতে, তাদেরকে দমিয়ে দিতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও সাংবাদিক সমাজকে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততার জন্যে এই পদক্ষেপ গ্রহণে কারো শৈথিল্যের অজুহাত থাকতে পারে, কিন্তু নির্বাচনি ব্যস্ততা কমার পর যাতে আর কোনো অজুহাত না থাকে, আমরা এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, ছিঁচকে চোরকে প্রশ্রয় দিলে সে যেমন একদিন ডাকাত হয়ে যায়, অর্থাৎ ছোট অপরাধীকে প্রশ্রয় দিলে বড়ো অপরাধী হয়ে যায়, তেমনি বালুসন্ত্রাসীদের দমনে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এরা নিজেদের অপ্রতিরোধ্য ভেবে একদিন সাংবাদিক নয়, বালুসন্ত্রাসবিরোধী আভিযানিক দলের ওপরও হামলে পড়ার সাহস দেখাবে।