প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চাঁদপুর জেলা শাখার সম্মানিত উপদেষ্টা, দেবপুর গাউছিয়া হাফেজিয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও দেবপুর দরবার শরীফের পীর হাফেজ মাওলানা ত্বোহা হুজুর ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার সময় তিনি দেবপুর নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি একশ’ বছরের উপরে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। বুধবার বাদ আসর দেবপুর মাদ্রাসা ও মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অসংখ্য আলেমসহ কয়েক হাজার মুসল্লি অংশ নেন। দল-মত নির্বিশেষে রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুসল্লিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পূর্বে বেশ ক’জন আলেম ও বিশিষ্টজন হুজুরের দীর্ঘ কর্মময় জীবনের উপর সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন। বক্তারা বলেন, আমরা এমন একজন আলেমে দ্বীনের চির বিদায়ে অভিভাবকশূন্য হলাম। একজন নক্ষত্রের বিদায়ে আমরা শোকাহত। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের বড় ছেলে হাফেজ মাওলানা এমদাদুল হক। জানাজার পর মাদ্রাসা ও মসজিদের পাশেই পীর সাহেবকে দাফন করা হয়।
হাফেজ মাওলানা ত্বোহা এমন একজন নিভৃতচারী আলেম ছিলেন, যিনি শতায়ু হয়েও নিজের বা দেবপুর দরবার শরীফের ব্যাপক প্রচারে মনোযোগী ছিলেন না। তাঁর যতো মনোযোগ ছিলো নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত হুবহু প্রতিপালন করা এবং সেভাবেই স্বীয় জিন্দেগীকে আমলে আখলাকে সমৃদ্ধ করা। তিনি তাঁর মুরিদ তথা অনুসারীদেরকেও কথার চেয়ে কাজ মানে বেশি আমলের তাগিদ দিতেন। নিজ এলাকায় এবং ওয়াকিবহাল মহলে তিনি ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। সকল দল ও মতের মানুষ এবং অন্য ধর্মের লোকেরাও তাঁর প্রতি অপরিসীম শ্রদ্ধা লালন করতেন। অন্য অনেক ধর্মীয় নেতা, উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাঁর নিজ এলাকার নাম পরিবর্তন করে নিজের পছন্দের নামে নামকরণ করার আইনি-বেআইনি সবধরনের প্রয়াস চালায়। হাফেজ মাওলানা ত্বোহা নিজ এলাকা দেবপুর নামটি পরিবর্তন করার জোর প্রয়াস চালিয়ে সফল হবার সম্ভাবনা থাকলেও তিনি সেটি করতে সোচ্চার হননি। তিনি নামধাম, প্রচার-প্রসার নিয়ে মাথা ঘামানোর চেয়ে নীরবে নিভৃতে ইসলামের প্রকৃত সেবক হবার প্রয়াস চালিয়েছেন আমৃত্যু। এমনটি প্রকৃত পীর-মাশায়েখণ্ড আলেমদের জন্যে যে যথার্থ, সেটি তিনি উপলব্ধি করতেন এবং সে মতে চলতেন। আমরা তাঁর ইন্তেকালে চাঁদপুর জেলাবাসীর পক্ষে গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা মনে করি, হাফেজ মাওলানা ত্বোহা সত্যিকার অর্থেই আলেমকুলের পথপ্রদর্শকরূপী অভিভাবক ছিলেন। তাঁর ইন্তেকালে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সেটা সহজে পূরণ হবার মতো নয়।