রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্কিত বই বিতরণ প্রসঙ্গে
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুরের বহুল পরিচিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় প্রতিদিন ৭ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির কোনো না কোনো পিরিয়ডে নির্দিষ্ট শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে কর্তৃপক্ষীয় প্রশ্রয়ে ঢুকে যেতো জামাত-শিবিরের লোকজন। তারা প্রথমে শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই এবং পরে তাদের সংগঠনের জন্যে পাঠ্য বইগুলো বিতরণ করতো। জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীর নেতৃত্বে গঠিত গভর্নিং বডির মাধ্যমে চলতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। সেজন্যে ওপেন সিক্রেট পদ্ধতিতে উল্লেখিত বই বিতরণ এবং শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলতো দেদার। অভিভাবকদের প্রতিবাদের মুখে এবং স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার ক্ষমতাসীন হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে জামাত-শিবিরের বই বিতরণ ও শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে গোপনে যে এখনও চলে না, সেটা হলফ করে বলা যায় না। কারণ, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জামায়াতের নেতৃস্থানীয় অনেক লোক শিক্ষক-কর্মচারী হিসেবে এখনও কর্মরত আছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ এমন বেপরোয়া যে, নিজের ব্যক্তিত্ব ও পেশাগত সুনামকে ক্ষুণ্ণ করে হলেও দলীয় স্বার্থরক্ষায় কাজ করেন। এদের ন্যায় বেপরোয়া ২/১ জন শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে। যাদের কাছে চাকুরির মায়ার চেয়ে দলের মায়া বেশি। যার প্রমাণ পাওয়া গেল চাঁদপুর কণ্ঠে সোমবার প্রকাশিত এক সংবাদে।

‘লাইব্রেরী থেকে জামায়াতের বিপুল বই জব্দ ॥ হাজীগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে জামায়াতের বই বিতরণ!’ শিরোনামের সংবাদে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, হাজীগঞ্জের ৭নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর কাসেমিয়া সিদ্দিকীয়া ফাযিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান জামায়াতের বই বিতরণ করেছেন। ২৯ অক্টোবর রোববার সকালে ৭ম শ্রেণিতে এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বিতরণকৃত বইগুলো জব্দ করে। এই শিক্ষক জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তিনি দীর্ঘ ২২ বছর যাবৎ ওই মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি চাঁদপুর সদর উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা গ্রামের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ বিষয়টি জানতে পেরে ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়ে বিতরণকৃত বইগুলো জব্দ করেন এবং অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শামসুদ্দিনসহ জব্দকৃত বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মেহেদী হাসান মানিকের কাছে নিয়ে যান। এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম, হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরে ওই শিক্ষক ও অধ্যক্ষের দেয়া তথ্যমতে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ রজনীগন্ধা মার্কেটে ইসলামীয়া লাইব্রেরি থেকে জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট প্রায় ৫শ’ পিচ বই জব্দ করা হয়। জব্দকৃত বইগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি নাগরিক জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর লেখা ইসলামী আন্দোলনের প্রাথমিক পুঁজি, নামাজ রোজার হাকিকত, জামায়াতে ইসলামের গঠনতন্ত্রসহ অন্যান্য বই রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শিক্ষকের অপকর্মের জন্যে তিনি নিজে দায়ী থাকবেন এবং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে। মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাসেম জানান, জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ সংগঠন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ করা হলো, এর কঠিন শাস্তি হবে।

আমাদের জানা মতে, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের উদাসীনতা, প্রশ্রয় কিংবা মৌন সম্মতি তথা নীরবতার সুযোগে তার অধীনস্থ শিক্ষকরা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ নানা গ্রহণযোগ্য /অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হবার সুযোগ নেয় এবং অপরিণামদর্শিতার সাথে বিতর্কিত কাজ করার মতো দুঃসাহস দেখায়। যেমনটি দেখিয়েছেন হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার পুরানো শিক্ষক মিজানুর রহমান। তিনি তার কর্মস্থল মাদ্রাসায় জামায়াত তথা শিবিরের পাঠ্যবই বিতরণ করছিলেন ঝুঁকি নিয়ে। তবে তিনি অধ্যক্ষের উদাসীনতায় এতোদিন ধরা পড়েন নি। অধ্যক্ষ জেনেও ধরিয়ে দেননি হয়তো কোনো ভয়ে। অবশেষে পুলিশ ধরতে সক্ষম হয়েছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে। এতে ওই শিক্ষক মামলা এড়াতে পারবেন বলে মনে হয় না। মামলায় শিক্ষক যতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তার কম-বেশি নিজে তো ভুগবেনই, পরিবারকেও ভোগাবেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দল প্রকাশ্য-গোপনে সহযোগিতা করে ব্যক্তিকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও পরিবারের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পারে না। এটা মিজানুর রহমানের মতো শিক্ষকদের বুঝতে হবে, আর না বুঝলে পস্তাতে তো হবেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়