রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

বাল্যবিবাহ বিরোধী  অভিযান কম কেন?
অনলাইন ডেস্ক

সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুর জেলায় বাল্যবিবাহ বিরোধী অভিযান অনেক কম হচ্ছে। অবশ্য বাল্যবিবাহ বিগত করোনাকালীন সময়ের চেয়ে যে অনেক কম হচ্ছে, সেটা সহজভাবেই বলা যায়। করোনাকালে সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীরা যখন ঘর ও বাড়িকেন্দ্রিক অলস সময় কাটাতে থাকে, তখন বন্ধের আওতামুক্ত ও সরকারি অনুদানবহির্ভূত মাদ্রাসাগুলোতে মুসলিম অভিভাবকদের অনেকে তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে/মেয়েদের ভর্তি করিয়ে যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। আর যে সকল অভিভাবক মেয়েদের মাদ্রাসায় ভর্তি বা অন্য কিছুতে নিয়োজিত/ব্যস্ত রাখতে না পেরেছে, তারা বয়স বিবেচনা না করেই বাল্যবিবাহের সুযোগ গ্রহণ করেছে। করোনাকালে দারিদ্র্যের কারণে পরিবারের কর্তাব্যক্তি তাদের মেয়ে সদস্যদের যতোটা না বাল্যবিবাহের শিকার করিয়েছে, নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্ন তুলে তার চেয়ে বেশি করিয়েছে। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সরব ভূমিকা কিংবা প্রতিবাদী ও সচেতন মানুষের সক্রিয়তায় স্থানীয় প্রশাসন বাল্যবিবাহ বিরোধী অভিযান চালায় এবং জেল-জরিমানা করে। প্রায়শই এই অভিযান চলতো বলে জনমনে বাল্যবিবাহের আধিক্যে রীতিমত উদ্বেগ তৈরি হয়।

বর্তমানে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত এই উদ্বেগ অবশ্য খুব বেশি নেই। তার অর্থ বাল্যবিবাহ অস্বাভাবিক কমে গেছে? শহুরে জনপদে দারিদ্র্যপীড়িত বাসিন্দাদের অবস্থান সম্বলিত বস্তি, নিম্নবিত্তদের এলাকা, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বাল্যবিবাহ বন্ধ না হয়ে জনপ্রতিনিধি ও সমাজের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে সময়-সুযোগমত সম্পন্ন হয়। এমন সব স্থানে কোথাও কোথাও পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট যাওয়ার পথ বা সুযোগ থাকে না। কথিত আছে, কোথাও কোথাও অসাধু গণমাধ্যম কর্মী ও প্রশাসনের কাউকে কাউকে ম্যানেজ করে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয়।

ইসলাম ধর্মে বাল্যবিবাহ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বয়সের চেয়ে মেয়ের শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতা এবং বিয়ের বাস্তবানুগ প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয়ায় দেশের প্রচলিত আইনে ১৮ বছরের পূর্বে বাল্যবিবাহ প্রদানের বিষয়টিকে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ কড়াকড়ি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে নিজেদের প্রকাশ্য জোরালো সমর্থন জানাতে খুব একটা দেখা যায় না। এটা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কম-বেশি কিংবা পরোক্ষ প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে। সেজন্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনেকটা কৌশলগত। তারা বাল্যবিবাহ রোধের প্রধান উপায় হিসেবে মেয়েদের শিক্ষাগ্রহণ, বিবাহের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত আইন কার্যকর করা এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকি, বিশেষ করে অল্প বয়সে সন্তানধারণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিতকরণের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্বারোপ করেছে। এতে অবশ্য কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্জনের মাধ্যমে মেয়েদের আত্মসচেতন, স্বাবলম্বী হওয়া এবং স্বাস্থ্যগত সচেতনতা সৃষ্টির ফলে বাল্যবিবাহে নিজস্ব প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। এই প্রতিরোধে বাবা-মা/ অভিভাবকও হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। এজন্যে তথ্য অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক সংগঠনকে বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। আর মাঝে মধ্যে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানও চালাতে হবে। একটি কথা সবসময় মনে রাখতে হবে, বাল্যবিবাহ কিন্তু পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সেজন্যে বাল্যবিবাহ রোধ সংক্রান্ত কার্যক্রমে কোনোভাবেই শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়