প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

আমাদের সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক আছেন, যারা চাকুরি করেন শুধু গতানুগতিক দায়িত্বপালন করে মাসশেষে বেতনভোগের জন্যে। এরা যে কতোটা অজুহাতপ্রবণ তার একটি নমুনা খুঁজে পাওয়া গেছে ফরিদগঞ্জে। সেজন্যে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ, যার শিরোনাম হয়েছে ‘ফরিদগঞ্জে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলায় বিপাকে প্রবাস-ফেরতরা’। সংবাদটিতে শামীম হাসান লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন শত শত প্রবাসী। জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় ফরিদগঞ্জ উপজেলায় প্রবাসীর সংখ্যা বেশি। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব খোন্দকার মোঃ রুহুল আমিন স্বাক্ষরিত প্রেরিত এক নোটিসে বিদেশ-ফেরত প্রবাসী যুবদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়। নোটিসের বর্ণনায় বলা আছে, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তাপুষ্ট একটি প্রকল্পে বিদেশ-ফেরত যুবদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যে তথ্য প্রয়োজন। ২৪ আগস্ট স্বাক্ষরিত নোটিসে ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সফ্টকপি ই-মেইলে প্রেরণের নির্দেশনা দেয়া হয়। নোটিস প্রাপ্তির পর অন্যান্য উপজেলা থেকে প্রবাসীদের তালিকা করার বিষয়ে মাইকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা এবং ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্রে নোটিস আকারে দেয়া হলেও ফরিদগঞ্জে এর চিত্র পুরো উল্টো। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি। এমনকি নোটিস প্রেরণ করা হয়নি বলে অনেক ইউনিয়ন পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা জানান কিংবা কেউ-ই এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানেনও না। অন্যান্য উপজেলায় তালিকা করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কয়েকজন প্রবাসী নিজ উপজেলা ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এসে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর একজন দুজন থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রবাস-ফেরত অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সেমতে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা দিতে আসা শত শত প্রবাসীর উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। তথ্য জমা দিতে আসা ক’জনের সাথে কথা হলে এই প্রতিবেদককে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাইকিং অথবা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে যদি তাদের বিষয়টি জানানো হতো, কিংবা তারা জানতে পারতো, তাহলে তারা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিতে পারতেন। যখন জানতে পারলেন তখন তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির সময়সীমা শেষ। তথ্য জমা দিতে আসা অন্য ক’জনের সাথে কথা হলে তারা আক্ষেপ করে বলেন, কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় তো অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমাদের নামের তালিকা বা কাজপত্রগুলো পৌঁছাবে কি না তা অনিশ্চিত হয়েও এখন আমরা নির্ধারিত কাগজপত্র জমা দিচ্ছি।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ মেজবাউদ্দিনের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বের কর্মস্থল থেকে গত ২৯ আগস্ট ফরিদগঞ্জ অফিসে যোগদান করেন। নতুন যোগদান করায় এবং জনবল সংকট ও সময় স্বল্পতায় প্রচার কাজ করা সম্ভব হয়নি। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও এখন যে সকল প্রবাসফেরত লোকজন তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে আসছেন আমরা এখনও তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা নিচ্ছি, কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রেরণ করবো।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার উল্লেখিত অজুহাত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা তার সমপর্যায়ের অন্য উপজেলাগুলোর কর্মকর্তারা যদি মাইকিংসহ প্রয়োজনীয় প্রচারণা করতে পারেন, তাহলে তিনি পারলেন না কেন? তিনি মাইকিংয়ের টাকা সংস্থান করতে না পারলে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সেক্রেটারীকে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়ে যদি নিতান্তই জনস্বার্থে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের অনুরোধ জানাতেন, তাহলে তারা কি সে অনুরোধ রাখতেন না? আসলে অজুহাত খুঁজে দায় সারবার যে চেষ্টা ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা করেছেন, এটা ক্ষমার অযোগ্য। আমরা কাণ্ডজ্ঞানহীন এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।