রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

বাস্তবতার নিরিখে নারায়ণপুর পৌরসভা
অনলাইন ডেস্ক

‘উচ্চ আদালতে নারায়ণপুর পৌরসভার পক্ষে রায় বহাল’ শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদে মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ লিখেছেন, সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবং আইনী জটিলতা শেষে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নবগঠিত নারায়ণপুর পৌরসভার রায় বহাল রেখেছে উচ্চ আদালত। গত ৪ সেপ্টেম্বর ওই রায়ের একটি কপি হাতে পেয়েছেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রধানসহ পৌরসভার পক্ষে রিট করা ব্যক্তিরা। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রায়ের কপিটি প্রকাশ পেলে নারায়ণপুর পৌরসভার একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সাধারণ জনগণ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল আবেদন করার সুযোগও রয়েছে। জানা যায়, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের প্রচেষ্টায় বিগত ২০১০ সালে নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৫ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নারায়ণপুর পৌরসভার গেজেট প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়। পরে পৌরসভার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার। পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর উচ্চ আদালতের রায়ে পৌরসভার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। ইউনিয়ন ও পৌরসভা নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষের দায়ের করা মামলা নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের বিচারপতি নাঈমা হায়দার রাজিক আল দলিলের বেঞ্চে নারায়ণপুর ইউনিয়নের পক্ষে দায়ের করা মামলা খারিজ করে নারায়ণপুর পৌরসভা বহাল রেখে ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি পৌরসভার পক্ষে রায় ঘোষণা করেন।

নারায়ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন প্রধান বলেন, মামলার বাদী ও আমার প্রচেষ্টায় এই রায়ের কপি হাতে পেয়েছি। এ রায়ের কপি হাতে পাওয়ায় এই পৌরসভার সাধারণ জনগণ দীর্ঘ ২০ বছর পর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে আশা করছি। এই নারায়ণপুরের জনগণ শুধু তাদের ভোটটুকু দিতে চায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস বলেন, নারায়ণপুর পৌরসভার রায়ের বিষয়ে আমরা এখনো কোনো অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবো।

চাঁদপুর জেলার সব উপজেলায় পৌরসভা নেই। অথচ মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে মতলব পৌরসভা থাকার পরও এই উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়েছে ১৩ বছর আগে। কিন্তু এই পৌরসভার বাস্তবতা চ্যালেঞ্জ করে ৭ বছর ধরে ক্ষমতাসীন নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল মোস্তফা তালুকদার আদালতে রিট আবেদন করার পর গেল গত ১৩ বছর মিলিয়ে মোট ২০ বছরে এই ইউনিয়নে নেই নির্বাচন। অথচ পার্শ্ববর্তী অন্য সকল ইউনিয়নে চারবার ইউপি নির্বাচন হয়েছে এবং নূতন চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ভোট দিতে না পারার একটা হাহাকার ইউনিয়নবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে।

নারায়ণপুর ইউনিয়নে রয়েছে নারায়ণপুর বাজার, জোড়পুল বাজার, পয়ালী বাজার ও কাশিমপুর বাজার। এর মধ্যে নারায়ণপুর বাজার উপজেলার সর্ববৃহৎ বাজার। হাজীগঞ্জ থেকে ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ রক্ষা করে যে বোয়ালজুরি খালটি মতলবের ধনাগোদা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, সেটি এই নারায়ণপুর বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আর বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কটি এই বাজার ভেদ করে গেছে। নৌপথ ও স্থলপথের যোগাযোগেই এই বাজারটি কেবল সমৃদ্ধ নয়, ভৌগোলিক কারণেও সমৃদ্ধ। মতলব দক্ষিণ উপজেলার এই বাজারটি চাঁদপুর জেলার কচুয়া ও হাজীগঞ্জ উপজেলার সীমানা ঘেঁষে এবং নারায়ণপুর, নায়েরগাঁও (দঃ) ও খাদেরগাঁও ইউনিয়নের মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এখানে লোক সমাগম অনেক বেশি। প্রায় এক হাজার দোকানপাটের এ বাজারটি ঘিরে নগরায়নও হয়েছে কম-বেশি। ফলে উপজেলা সদরের চেয়ে নারায়ণপুর বাজার এবং চারপাশের জায়গার মূল্য বেশি। দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে দুদশক আগে যাঁরা নারায়ণপুরকে পৌরসভা করার কথা ভেবেছেন, তারা ভুল কাজ করেছেন--এ কথা বলার অবকাশ নেই। তবে তারা কেবল নারায়ণপুর ইউনিয়নকে পৌরসভা করার কথা না ভেবে নাায়ণপুর বাজার ও পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন সমূহের নগরায়ন হওয়া স্থান সমূহকে নিয়ে যদি নারায়ণপুর বাজারকেন্দ্রিক পৌরসভা করার কথা ভাবতেন, তাহলে নারায়ণপুর ইউনিয়ন পুরোপুরি বিলুপ্তির প্রশ্ন উঠতো না, বিক্ষুব্ধ কোনো জনপ্রতিনিধি বাস্তবতা বিবেচনা করে মামলা-মোকদ্দমার কথা মনে হয় ভাবতেন না। এতে দূরদর্শীদের ভাবনা টেকসই ও বাস্তবতার আলোতে খুব দ্রুতই উদ্ভাসিত হতো বলে আমরা মনে করি। বলা দরকার, নারায়ণপুর মামলার জটিলতা কাটিয়ে পৌরসভা হলেও বোয়ালজুড়ি খালের উত্তর পাড়ে অবস্থিত বাজারের কিছু অংশ ইউনিয়নের অংশই থেকে যাবে। যেটিতে পরিলক্ষিত হবে সম্ভাব্য উন্নয়ন-বঞ্চনা এবং অধিবাসীদের মাঝে সৃষ্টি হবে কম-বেশি ক্ষোভ। এ বিষয়টি অবশ্যই সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ভেবে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়