প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

‘কচুয়ায় ফাটল আতঙ্ক নিয়ে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা’ এমন শিরোনামে চাঁদপুর কণ্ঠের কচুয়া ব্যুরো ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত সংবাদে লিখেছেন, কচুয়া উপজেলার ১১৮নং বাছাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে পাঠগ্রহণ করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিদ্যালয়টি থেকে শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর ভালো ফলাফল অর্জন করে আসছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক ও ১২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ভবনটি ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে পুনঃনির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালের ৪ জুন ওই বিদ্যালয়টি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপজেলা শিক্ষা অফিস। পুরানো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও এখনো পর্যন্ত নতুন ভবন হয়নি। ফলে ওই বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে বড় আকৃতির ফাটল দেখা দেয়। ইতিমধ্যে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালীন ছাদের পলেস্তরা খসে খসে নিচে পড়েছে। বিভিন্ন সময় পলেস্তরার অংশ গায়ে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সমস্যায় জর্জরিত। বিশেষ করে নতুন ভবন নেই, নেই কোনো আধুনিক শৌচাগার ও ওয়াশ ব্লক। ওয়াশ ব্লক না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছি। কিছুদিন পূর্বে ক্লাসে পাঠদানের সময়ে ছাদ থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে। দ্রুত ওই বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের দাবি জানান তারা। প্রধান শিক্ষক সহদেব চন্দ্র সরকার বলেন, বিদ্যালয়ে একটি ভবনে ৩টি কক্ষ রয়েছে। আমাদের মোট প্রাক-প্রাথমিকসহ ৬টি কক্ষ প্রয়োজন। কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস বিদ্যালয়টির ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা দিলেও এখনো নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বিদ্যালয়ে চলছে শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট, নেই আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল ও শৌচাগার। নতুন ভবন নির্মাণের জন্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি মিথুন সরকার বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার পর থেকে বেশ ক’বার উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে নতুন ভবন নির্মাণের জন্যে আবেদন-নিবেদন করেছি। একটি মাত্র ভবন হওয়ায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরাতন ভবনে পাঠদান চলছে। তবুও নতুন ভবন পাওয়ার আশায় স্বপ্ন দেখছি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাছিমা আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে কচুয়া উপজেলায় কয়েকটি বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
১৯৮৩ সালে কচুয়ার বাছাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের পর মাত্র ১০ বছরের মাথায় ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে পুনঃনির্মাণ করা হয়। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ১৯৮৩ সালে নির্মিত ভবনটির কতোটা নিম্নমানের কাজ হয়েছে। তারপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে পুনঃনির্মিত ভবনের কাজও একই মানের হওয়ায় প্রায় ১০ বছর বয়সে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। এতোটা কম সময়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুটি নূতন ভবন নির্মাণ এবং সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হবার ঘটনা অন্য বিদ্যালয়গুলোতে খুব কমই দেখা যায়। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকের, সর্বোপরি সচেতন অভিভাবক ও এলাকাবাসীর উদাসীনতায় নিয়োজিত ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করে ভবন বুঝিয়ে বিল তুলে নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে কার্যত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী লাভবান হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ১০ বছর পূর্বে পরিত্যক্ত ও ফাটল ধরা ভবনটি ধসে পড়ে যদি শেষ পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী হতাহত হয়, তাহলে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের অস্বাভাবিক টনক নড়বে, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই হবে না। কেননা ঠিকাদার ও তার সহযোগীরা সব দিক থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আমরা ডিজিটালাইজ্ড হয়েছি, স্মার্ট হবার পথে এগুচ্ছি। কিন্তু নির্মাণ দক্ষতায় যে অনেক পিছিয়ে আছি, সেটা আমাদের দেশে শত শত বছরের পুরানো ভবন ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অস্তিত্ব এবং বাছাইয়া সপ্রাবির নূতন ভবনগুলোর স্বল্পায়ু দেখে সহজে আন্দাজ করতে পারি। কথা হলো, এই পিছিয়ে থাকা কতোটা ঠিক?