শনিবার, ০৩ মে, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

নারায়ণপুর বাজারের দিকে সুনজর দিন
অনলাইন ডেস্ক

মতলব চাঁদপুর জেলার দ্বিতীয় ছোট উপজেলা। কিন্তু ভৌগোলিক অবস্থান ও সড়ক মানচিত্রে এ উপজেলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাটে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগ রক্ষা করে যে সড়কটি পেন্নাই নামক স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের সাথে মিলিত হয়েছে, সে সড়কটির বিরাট অংশ মতলব দক্ষিণকে ভেদ করেই গেছে। এ সড়কের পাশেই অবস্থিত মতলব দক্ষিণের প্রসিদ্ধ বাজার নারায়ণপুর বাজার। যে বাজারটিতে চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ ও কচুয়া উপজেলার প্রান্তিক এলাকার বাসিন্দারা যাতায়াত ও কেনাকাটা করেন। বাজারটির প্রসিদ্ধি ও গুরুত্ব বিবেচনায় সরকার নারায়ণপুরকে পৌরসভায় উন্নীত করেন, যেটি আইনি জটিলতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এই নারায়ণপুর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক দিক দিয়েও অনেক খ্যাতিমান। অথচ নারায়ণপুর বাজার অবহেলিত ও উন্নয়ন-বঞ্চনার শিকার। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদে।

‘সমস্যার আবর্তে প্রসিদ্ধ নারায়ণপুর বাজার : চাষ করা জমির মতো রাস্তার বেহাল দশা’ শিরোনামের সংবাদে প্রতিবেদক মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ লিখেছেন, সামান্য বৃষ্টিতেই জনচলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার প্রসিদ্ধ নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো। বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা চরমে পৌঁছে। চাষ করা জমির মতো বাজারের এ রাস্তার বেহাল দশা দেখার যেনো কেউ নেই। যানবাহন, পথচারী, শিক্ষার্থী সকলেই চরম ভোগান্তিতে পড়েন বৃষ্টির এ সময়টাতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণপুর বাজারের প্রতিটি সড়ক যেনো মানুষের ক্ষতবিক্ষত শরীর। রাস্তাগুলোর পিচ নষ্ট হয়ে গেছে। ইট-পাথরের কণা উঠে গেছে। ছোট-বড় গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানির সাথে কাদা মাটি মিশ্রিত হয়ে নষ্ট করে দেয় পথচারী ক্রেতা সাধারণের জামা-কাপড়। এতে এই বাজারের প্রতি দিন দিন মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলে বিক্রেতাদের অভিযোগ। রাস্তার বেহাল দশার কারণে বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতার মতো স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীরাও চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কারণ এই বাজারের উত্তর পাশে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজারের অভ্যন্তরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন, বাজারের দক্ষিণ পাশে নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ এবং সামান্য দূরত্বে বাজারের দুই পাশে দুটি ফাজিল মাদ্রাসাসহ একাধিক কওমী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো ব্যবহার করে চলাচল করতে হয়। অনেক সময় শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের পরনের কাপড় বাজারের রাস্তায় চলাচলকারী সিএনজি অটোরিকশার চাকার পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্যে বাজার সংশ্লিষ্টদের নিকট শিক্ষার্থী ও ক্রেতা সাধারণের একান্ত দাবি, রাস্তাগুলো যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়। একই দাবি বাজারের ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দোকানে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তাদের বক্তব্য হলো, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ক্রেতা সাধারণ বাজারের একটি সুন্দর পরিবেশ প্রত্যাশা করে। যদি তারা তা না পায় তাহলে এই বাজারের প্রতি আগ্রহ হারাবে। বিশেষ করে বাজারের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মূল এবং শাখা রাস্তাগুলোর সংস্কার করা একান্ত প্রয়োজন।

নারায়ণপুর বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্যে বাজার সংলগ্ন বোয়ালজুড়ি খাল ও ছোট খাল থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে বাজারের অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এর থেকে উত্তরণের জন্যে পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার দাবি ব্যবসায়ীদের। নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাজারের ভেতরের ভেঙ্গে যাওয়া পথেই আমাদের কলেজে যেতে হয়। এ রাস্তায় বর্ষা মৌসুমে চলাচলে কষ্ট সবচে’ বেশি। বাজারের ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বাজার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন আন্তরিক হলে নারায়ণপুর বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তার বেহাল দশা দূর করা সম্ভব। নারায়ণপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ সফিকুল ইসলাম স্বপন মজুমদার বলেন, বাজার উন্নয়নের জন্যে আমার নিকট কোনো বরাদ্দ নেই। বাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পাহারাদারের বেতন দিতেই আমাকে হিমশিম খেতে হয়। তিনি বলেন, নারায়ণপুর বাজারের যে অংশ যে ইউপি চেয়ারম্যানের আওতায় তিনি ওই অংশের উন্নয়ন কাজ করবেন। ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন হাওলাদার বলেন, নারায়ণপুর বাজারে আমার ইউনিয়নের যে অংশটুকু আছে, এটা নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে জনদুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করবো। মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেনু দাস বলেন, নারায়ণপুর বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র। এ বাজারের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যাটি দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাজার কমিটি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।

মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের চাঁদপুর-২ আসনের কৃতী সন্তান, দেশবরেণ্য কৃষি অর্থনীতিবিদ, বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলম এবং এই আসনের বর্তমান এমপি, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুলের নারায়ণপুর বাজারের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া অতীব প্রয়োজন। নারায়ণপুর পৌরসভা আইনি জটিলতামুক্ত হয়ে যাতে কার্যক্রম শুরু করতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক হওয়া দরকার। এটি পৌরসভা হলে পৌরসভার সদর হিসেবে নারায়ণপুর বাজারের রাস্তাঘাটসহ অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়নই করা সম্ভব হবে। যদি এটি দ্রুত সম্ভব না হয়, তাহলে নারায়ণপুর বাজারের উন্নয়নের জন্যে বিশেষ বরাদ্দ প্রাপ্তিতে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ও এমপি মহোদয়কে আন্তরিক ভূমিকা রাখা বাঞ্ছনীয়। এ জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধও থাকলো আমাদের ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়