রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

মানবিকতা যেন আসক্তিতে পরিণত না হয়
অনলাইন ডেস্ক

গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিকের তৎপরতায় ৬ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে পরিবারের কাছে তুলে দিলো জেলা পুলিশ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে এক ভবঘুরে ব্যক্তি দীর্ঘদিন অবস্থান করছিলেন। চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক গত ৩০ জুলাই হতে অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন পুরুষকে দেখাশোনা করে আসছিলেন। অবশেষে গত ৩ আগস্ট কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক তাকে আদালত চত্বর হতে উদ্ধার করে নিজ হাতে দাড়ি, চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন জামা কাপড় পরিয়ে চিকিৎসার জন্য অর্পণ মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র, চাঁদপুরে নিজ খরচে ভর্তি করে দেন। তারপর নিজের ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ার মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা ভবঘুরে ব্যক্তির পরিবারের সন্ধানে প্রচারণা চালান। অবশেষে গত ৭ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় মোঃ টিপু (২৮), পিতা মোঃ ছবির মিয়া, মাতা নাসিমা খাতুন, সাং পুরাতন চৌধুরী পাড়া, ৫নং ওয়ার্ড, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, থানা কোতয়ালী, জেলা কুমিল্লা বলে জানা যায়। টিপুর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের চাঁদপুর আসার জন্যে যোগাযোগ করা হয়।

কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক কক্সবাজার জেলা পুলিশে কর্মরত থাকাকালীন ৯ জন, চট্টগ্রাম শহর হতে ৩ জন, নোয়াখালী সদর হতে ১ জন, লক্ষ্মীপুর সদর হতে ৪ জন এবং চাঁদপুর জেলা সদর হতে টিপুসহ ৫ জন সর্বমোট ২২ জন অজ্ঞাতনামা মানসিক ভারসাম্যহীন পুরুষ ও মহিলা উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়ে তাদের অভিভাবকদের নিকট হস্তান্তর করে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া তিনি এ যাবত ২৯ বার স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানার রোকনপুর গ্রামের রুহুল আমিন ও নূরজাহান দম্পতির ছেলে। তিনি ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে যোগদান করেন। তিনি জানান, ‘ভবিষ্যতে আমার সামর্থ্য অনুযায়ী বেতনের টাকার কিছু অংশ দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন, দুঃস্থ, এতিম, গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে চাকুরির পাশাপাশি দাঁড়াতে চাই’। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম জানান, এ মহৎ কাজটি পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ ধরনের মানবিক কাজ চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রতিনিয়ত করবে। এছাড়া টিপুর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন পুলিশ সুপার।

নিঃসন্দেহে কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিক একজন মানবিকতাসম্পন্ন মানুষ। ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’ এমন উপলব্ধিতে ঋদ্ধ তিনি। তার মতো পুলিশে আরো অনেকে এমন মানবিকতা লালন করেন। তন্মধ্যে কনস্টেবল শওকতের কথা উল্লেখ করতে হয় সর্বাগ্রে। যিনি মানবিক পুলিশ শওকত হিসেবে সমগ্র দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। নোয়াখালীর কবিরহাটের বাসিন্দা এই শওকত তার মানবিকতা প্রদর্শনকে আসক্তির পর্যায়ে নিয়ে কর্মস্থলে টানা অনুপস্থিত ছিলেন ৭১ দিন। সে কারণে চলতি বছরের এপ্রিলে তিনি পুলিশের চাকুরি হারান। এই শওকত লক্ষ্মীপুর তথা বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিকের আইডল কিনা জানি না। আমরা চাই, মানিকের মানবিক কাজ অব্যাহত থাকুক নিজের চাকুরিতে সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকার মধ্য দিয়ে, কর্মস্থলে কাজে ফাঁকি ও অনুপস্থিত থাকার মধ্য দিয়ে নয়। নিজ পেশায় সর্বোচ্চ কর্তব্যপরায়ণতার পাশাপাশি কেউ যদি তার ভালো গুণগুলোর বিকাশ ঘটায় পরিমিতি বোধ ও নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধতার মধ্যে, তাহলে তিনি প্রকৃত সফল মানুষ। আমরা কনস্টেবল আবুল হোসেন মানিকের কাছে আরো মানবিকতা প্রত্যাশা করি, তবে আসক্তি বিবর্জিতভাবে। আমরা কনস্টেবল মানিকের জন্যে মহান আল্লাহর দরবারে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত প্রত্যাশা করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়