প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

অকালে হারিয়ে যাওয়া/চিরতরে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের প্রতি মানুষের আকুতিকে কবিগুরু তাঁর ‘বলাকা’য় যেন দিয়েছেন এক চিরন্তন রূপ--অতীতের চির অস্ত-অন্ধকার/আজিও হৃদয় তব রেখেচে বাঁধিয়া?/বিস্মৃতির মুক্তিপথ দিয়া/আজিও সে হয়নি বাহির?/সমাধিমন্দির/এই ঠাঁই রহে চিরস্থির;/ধরার ধূলায় থাকি'/স্মরণের আবরণে মরণেরে যত্নে রাখে ঢাকি’।
আমাদের সমাজে প্রয়াত পিতামাতার নামে সন্তানদের কতো কিছু করার আকুতিই না লক্ষ্য করা যায়। তবে অকাল প্রয়াত সন্তানদের জন্যে শোকাহত পিতামাতার সচরাচর খুব বেশি কিছু করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় না। বিরলদৃষ্ট এমন প্রবণতা দেখা গেছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। যেটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়। সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘পার্থ সারথি দেবনাথ অনিকের সপ্তম প্রয়াণ দিবসে অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ’। সংবাদটিতে পাপ্পু মাহমুদ লিখেছেন, পার্থ সারথি দেবনাথ অনিকের সপ্তম প্রয়াণ দিবসে অসহায় ও দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন পার্থ সারথি (অনিক) মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। গত শুক্রবার সকালে হাজীগঞ্জের শ্রীরামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের এ ত্রাণসেবা কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ২শ’ ২০ জনের মাঝে এ ত্রাণসেবা দেয়া হয়। প্রতিজনকে চাল ৫ কেজি, আলু ৩ কেজি, লবণ ১ কেজি, ডাল ১ কেজি, তেল ১ লিটার ও চিড়া ১ কেজি বিতরণ করা হয়। ত্রাণসেবা কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম।
ট্রাস্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছর থেকে এ ত্রাণসেবা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত করা হবে এবং ত্রাণ কর্মসূচির পাশাপাশি প্রতি বছর চার থেকে ৫ জন অসহায় সম্বলহীন বেকার যুবককে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হবে। এছাড়া হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে নবনির্মিত পাঁচতলাবিশিষ্ট ট্রাস্ট ভবনে সেলাই ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট চালু করা হবে। ট্রাস্ট ভবনের নিচতলায় অবস্থিত ছয়টি দোকান এবং ছয়টি ফ্ল্যাটের ভাড়া থেকে প্রাপ্ত আয় এবং ট্রাস্টের কর্পাস ফান্ড থেকে এসব ব্যয় নির্বাহ করা হবে। জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই মাত্র ৩১ বছর বয়সে পার্থ সারথি দেবনাথ অনিক ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। হাজীগঞ্জ উপজেলার ১০নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে পার্থ সারথির পৈত্রিক নিবাস। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অমূল্য কুমার দেবনাথ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা প্রতিমা মজুমদারের একমাত্র সন্তান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার সহকারী ম্যানেজার ছিলেন।
একটি সাধারণ শিরোনামের সংবাদের গভীরে এক দুর্ভাগ্যপীড়িত পিতামাতার পক্ষ থেকে অকাল প্রয়াত গুণী পুত্রের স্মৃতিরক্ষার কী অসাধারণ পদক্ষেপের কথাই না বিধৃত হয়েছে! সে পদক্ষেপ আবার নিতান্তই সাময়িক কিছু নয়, একেবারে টেকসই পদক্ষেপ। সারাদেশে বহুল পরিচিত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জন্যে যেখানে তাঁদের মৃত্যুবার্ষিকীতে দোয়া/ আশীর্বাদ ও গতানুগতিক আলোচনার বাইরে তাঁদের পরিবার/ ভক্তদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু করা হয় না, সেখানে অকাল প্রয়াত পার্থ সারথি (অনিক)-এর জন্যে তার বাবা-মা যা কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছেন, তাকে বলতে হবে ব্যতিক্রম, অসামান্য, অসাধারণ, সর্বোপরি টেকসই। স্মরণের আবরণে প্রিয়জনের মরণকে যত্নে ঢেকে রাখতে সে কী হার্দিক প্রয়াস! আমরা এজন্যে স্যালুট জানাই উদ্যোক্তাদের।