রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

এতোটা করুণ দশায় কলেজটির জন্যে দুঃখবোধ--

এতোটা করুণ দশায় কলেজটির জন্যে দুঃখবোধ--
অনলাইন ডেস্ক

১৯৪৬ সালের ১ জুন চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার দুযুগের মধ্যে যে ক'টি কলেজ প্রতিষ্ঠা তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মাঝে অনেক আশার সঞ্চার করেছিলো, তন্মধ্যে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ অন্যতম। কলেজটির বয়স পঞ্চাশোত্তীর্ণ হলেও আশানুরূপ উন্নয়ন ও অগ্রগতি কলেজটিকে তেমন ঋদ্ধ করতে পারে নি--এটা কেউ সংক্ষুব্ধ হলেও অকপটে বলা যায়। ১৩ জুলাই চাঁদপুর কণ্ঠে কলেজটিকে নিয়ে প্রকাশিত শীর্ষ সংবাদ পড়লে এমন মন্তব্য করাটা আমরা কেনো, যে কোনো সচেতন মানুষের জন্যে কষ্টকর হয় না।

‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে বিপাকে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ’ শীর্ষক সংবাদে ফরিদগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত চাঁদপুর জেলার বৃহৎ জনপদ ফরিদগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি আজ পর্যন্ত অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। সরকারিকরণের কারণে রয়েছে শিক্ষক স্বল্পতাও। কিন্তু এগুলো থেকে বেশি সমস্যা কক্ষ সঙ্কট । ২৫ বছর পূর্বে নির্মিত ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। ফলে একাডেমিক ভবন এবং পুরানো একটি ভবনেই চলছে পাঠদান কার্যক্রম। পরিত্যক্ত তথা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি নিয়ে বিপাকে পড়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে ১৯৭০ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও পৌর মেয়র যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারীসহ বেশ ক’জন শিক্ষানুরাগী বঙ্গবন্ধুর নামে এই কলেজটি স্থাপন করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয় নামকরণ নিয়ে জটিলতা। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এটি ফরিদগঞ্জ কলেজ এবং পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ নামে পরিচিত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে কলেজটিকে মূল নামে ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর আবারো তা থেমে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ২য় বারের মতো ক্ষমতায় আসলে কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আবুল খায়ের পাটওয়ারীর উদ্যোগে শুরু হয় বঙ্গবন্ধু নাম ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া। অবশেষে সেই প্রক্রিয়া সফল হয়। ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজ নামে শুরু হয় কার্যক্রম। ইতিমধ্যে দেশের প্রতিটি উপজেলা সদরের কলেজকে সরকারিকরণের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু কলেজটি সরকারি কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। চলতি বছরের জুন মাসে তা পূর্ণাঙ্গতা পায়। বর্তমানে কলেজে একাদশ, দ্বাদশ এবং ডিগ্রি পর্যায়ের ক্লাস হচ্ছে নিয়মিত। কলেজটি সরকারিকরণ হলেও এর অবকাঠামোগত অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। বর্তমানে কলেজে মোট ৪টি ভবন রয়েছে। এরমধ্যে একটি একতলা ভবন, দোতলা বিশিষ্ট একটি ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন এবং কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত একাডেমিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরে নির্মাণ করা প্রশাসনিক ভবনটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। সরেজমিন ভবনটির অবস্থা দেখতে গেলে দেখা যায়, সামনে থেকে ভবনটিকে এখনো ভাল দেখা গেলেও ভেতরের অবস্থা ভীতিকর। প্রশাসনিক ভবনটিতে ইতিপূর্বে নিচতলায় অধ্যক্ষের কক্ষ, লাইব্রেরী, অফিস কক্ষ ছিল। দ্বিতীয় তলায় শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। কিন্তু গত দুই-তিন বছর পূর্ব সময়ে ভবনটির বিভিন্নস্থানে ফাটল, ছাদের আস্তর খসে পড়তে শুরু করায় বাধ্য হয়ে নতুন একাডেমিক ভবনে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড স্থানান্তর করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

ভবনটির নিচতলা ও দোতলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কক্ষেরই ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়েছে। জরাজীর্ণতা পুরো ভবনটিকে ঘিরে ধরেছে। ব্যবহার না করায় ভবনটি ক্রমশ আরো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে। মাত্র ২৫ বছরের কিছুটা বেশি সময় পূর্বে নির্মাণ করা ভবনটি কেন এখনই পরিত্যক্ত হয়ে গেল তা নিয়ে প্রশ্ন সকলের। ওই ভবনের দক্ষিণ পাশের ভবনটি ১৯৮৬ সালে তৈরি হলেও এখনো ব্যবহার উপযোগী রয়েছে। সেখানে নিচতলায় শিক্ষক মিলনায়তন, উপাধ্যক্ষের কক্ষ, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, মেয়েদের কমন রুম এবং দোতলায় শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চলমান। কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জানান, দূর থেকে কলেজের চারটি ভবন দেখা গেলেও বাস্তবে দুটি ভবনই ভালোভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। প্রশাসনিক ভবনটিতে যখনই সমস্যা দেখা দিয়েছিলো তখনই মেরামত করা হলে এটি এখনো ব্যবহার করা যেত। কিন্তু শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের লোকজন কয়েকবার এসে দেখে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তারা আরো বলেন, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভবন থাকলেও ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজে নতুন ভবনের প্রয়োজন হলেও নেই। এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সর্বশেষ শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের একজন প্রকৌশলী এসে ভবনটির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এটি মেরামত অনুপযোগী বলে জানান। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ভবনটিকে পরিত্যক্ত হিসেবে ঘোষণার আবেদন করেছেন। বর্তমানে জরাজীর্ণ ভবনটি বাদ দিয়েই আমরা শ্রেণি শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের চেয়েও এক বছর বেশি বয়সী হচ্ছে ফরিদগঞ্জ সরকারি কলেজ। এই পুরানো কলেজটির ভবনের দুরবস্থা ও কক্ষ সঙ্কটের কথা জানতে পেরে আমরা কেনো, সুধী পর্যবেক্ষক মাত্রই কম-বেশি বিস্মিত এবং অনেক দুঃখিত। উন্নয়নের দৃশ্যমান জোয়ারে সারাদেশের কথা বাদই দিলাম, চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কক্ষ সম্বলিত ভবন নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে। অথচ ফরিদগঞ্জের এই কলেজটি সরকারি হওয়ার পরও এখানে নির্মিত হয়নি প্রয়োজনীয় ভবন কিংবা টেকসই ভবন। এজন্যে আসলে কে দায়ী? এই প্রশ্নের জবাব অনুসন্ধান করতে গেলে নিশ্চয়ই তিক্ত এমন সত্য বেরুবে, যাতে অনেকেরই আঁতে ঘা লাগবে। উপজেলা সদরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি কলেজের চাইতেও দূরবর্তী অন্য কলেজকে এগিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধি কিংবা অন্য কারো উদ্দেশ্য কাজ করেছে কিনা সেটা নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। এ ছাড়া ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে কিংবা অস্থানীয় অধ্যক্ষ দিয়ে কলেজ পরিচালনাসহ আনুষঙ্গিক কিছু কারণে কলেজটি কম-বেশি অবহেলার শিকার হয়েছে কিংবা আপনত্বের সঙ্কটে ভুগেছে--এমনটি বললে কি খুব বেশি দোষের কিছু হবে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়