প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কি হালনাগাদ ?
আমাদের দেশের প্রাচীন একটি সরকারি দপ্তর হচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ দপ্তরটির এতোটা সুন্দর নাম আগে ছিলো না। ক’বার পরিবর্তনের পর বর্তমান শ্রুতিমধুর নামটি পেয়েছে। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন। এ দপ্তরটির মুখ্য কাজ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ শিল্পের তদারকি করা। ১৭৯৫ সালে তথা ব্রিটিশ আমলে একটি পশু চিকিৎসা ইউনিটের সাথে যাত্রা শুরু হয় দপ্তরটির। ১৮৮৩ সালে ব্রিটিশ সরকার এটিকে সিভিল ভেটেরিনারি বিভাগে পরিণত করে। এর সদর দপ্তর ছিলো কলকাতায়। ১৯৪৭ সালে এই সদর দপ্তর কুমিল্লায় স্থানান্তরিত হয়। ভারত বিভাগের পর এর নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান পশুপালন অধিদপ্তর নামকরণ করা হয়। এক যুগ পর ১৯৬০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নামকরণ করা হয়।
|আরো খবর
১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে স্থাপিত হয় দেশের প্রথম কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। এর অনেক আগে ১৯৩৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার শেরেবাংলা নগরে ‘দি বেঙ্গল এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’ স্থাপিত হয়। তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক এটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে এটি ‘পূর্ব পাকিস্তান এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট’ এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ‘বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট’ নামধারণ করে। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই এই প্রতিষ্ঠানকে ইনস্টিটিউট থেকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। এই দুটি বিশ^বিদ্যালয়ে ও ক’টি কলেজে প্রাণিসম্পদ বিষয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ‘ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্সেস’ বিভাগে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারতো। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজকে দশ বছরের মাথায় ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হলে এটি হয়ে যায় কেবল প্রাণিসম্পদ বিষয়ে লেখাপড়ার জন্যে দেশের বিশেষায়িত সরকারি বিশ^বিদ্যালয়। পরবর্তীতে চালুকৃত ক’টি কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও ভেটেরিনারি কলেজেও প্রাণিসম্পদ তথা ভেটেরিনারি বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ তৈরি হয়।
প্রাণিসম্পদ বিষয়ে লেখাপড়ার এতোটা সুযোগ তৈরির পর অনেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে দেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এক সময় এ সকল কর্মকর্তাকে ‘পশু ডাক্তার’ বলা হলেও এখন তেমনটি বলা হয় না। এক সময় ‘পশু হাসপাতাল’ থাকলেও বর্তমানে রয়েছে ‘প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল’। দিনের পর দিন আধুনিক বিশে^র সাথে তাল মিলাতে গিয়ে দেশের কৃষি বিভাগ কৃষিক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন কিংবা আমদানি করে হালনাগাদ থাকার চেষ্টা করে চলছে। কিন্তু আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগ সেভাবে হালনাগাদ হবার দৃশ্যমান চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ শিল্প হিসেবে দেশে মৎস্য খামার, হাঁস-মুরগির খামার, গরুর খামারসহ অন্যান্য পশুর খামার আধুনিকভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ যতোটা না প্রণোদনামূলক ভূমিকা রেখেছে, তারচে’ বেশি ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘মাটি ও মানুষ’ এবং চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠান। চাঁদপুরের কৃতী সন্তান শাইখ সিরাজসহ তাঁর অনুষ্ঠান-সহযোগীরা এক্ষেত্রে রেখেছে ও রেখে চলছে অবিস্মরণীয় ভূমিকা, যে ভূমিকার ধারে-কাছেও নেই আমাদের দেশে এককভাবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিবেদিতপ্রাণ কোনো কর্মকর্তা।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে লিখা হয়েছে, গরুর প্রধান খাদ্য হচ্ছে খড় আর ঘাস। এক সময় জমিতে এক ফসলি চাষ হতো। এছাড়াও প্রচুর পতিত জমি ছিলো। সেখানে প্রচুর ঘাস হতো। বর্তমানে তেমন কোনো পতিত জমি নেই। তাই ঘাস সঙ্কট তীব্র। বিকল্প ঘাস চাষ পদ্ধতি থাকলেও সরকারের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের তেমন ভূমিকা নেই। পরিণতিতে প্রাকৃতিক খাদ্য সঙ্কট ও খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে গরু-ছাগল পালন ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। এ উদ্বেগ নিরসনে আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রাকৃতিক খাদ্য ঘাস চাষের ব্যাপারে হালনাগাদ ভূমিকা রাখার জন্যে জোর অনুরোধ রাখছি।