প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
ইউএনওর শিশু-অবান্ধব কাণ্ড
![ইউএনওর শিশু-অবান্ধব কাণ্ড](/assets/news_photos/2024/04/24/image-47161.jpg)
ইউএনও বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনেক দায়িত্ব। দায়িত্ববলেই তিনি উপজেলার প্রায় সব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। খোঁজ নিয়ে একটি উপজেলায় শতাধিক কমিটির নাম পেয়েছি, যেখানে ইউএনও হয় সভাপতি, না হয় আহ্বায়ক।
প্রাসঙ্গিকভাবে কয়েকটি কমিটির নাম বলা যেতে পারে– উপজেলা শিশুশ্রম নিরসন কমিটি, উপজেলা পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনা কমিটি, উপজেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড, উপজেলা পর্যায়ের শিশু প্রতিযোগিতা কমিটি। তবে শরীয়তপুর সদরের ইউএনওর দায়িত্ব সম্ভবত আরেকটু বেশি।
তিনি জেলা প্রশাসনের একটি পার্কও দেখাশোনা করছেন। এ দায়িত্ব পালনে তিনি এতটাই সচেষ্ট, টিকিট ছাড়া পার্কে প্রবেশের দায়ে স্থানীয় শিশুদের তিনি জনসমক্ষে কান ধরিয়ে ছাড়লেন! দীর্ঘসময় কান ধরিয়ে কয়েকটি শিশুর কাছ থেকে অর্থ আদায় করে এবং অর্থ দিতে অক্ষম দুই শিশুকে আরও বেশি সময় ‘শাস্তি’ দিয়েই তবে দায়িত্বের ষোলোকলা পূর্ণ করলেন।
কিন্তু উপজেলা নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি হিসেবে ইউএনও নিশ্চয় জানেন, কোনো অবস্থায়ই একজন শিশুকে শারীরিক এমনকি মানসিক শাস্তিও দেওয়া যায় না; অন্তত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনামতে, শিশু-কিশোরদের প্রতি এমন যে কোনো আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর তিনি কিনা সে অপরাধই করে বসলেন!
সাংবাদিকদের কাছে অবশ্য ইউএনও এ অপরাধ এক প্রকার অস্বীকারই করেন। তিনি বলেছেন, ‘ওরা ভয়ে হয়তো কানে হাত দিয়েছে’। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে আসলেই সত্য আড়াল করা কঠিন। ঘটনার ছবি পার্কের দর্শকরা তুলেছেন; সে ছবিই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
শিশুদের ‘অপরাধ’, তারা দেয়াল টপকে পার্কে প্রবেশ করেছে। প্রশ্ন হলো, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত ঠুনকো কেন? নিরাপত্তারক্ষীরা তো সহজেই বুঝিয়ে-সুজিয়ে শিশুদের পার্ক কর্তৃপক্ষের এহেন ‘বাণিজ্যিক ক্ষতিসাধন’ থেকে বিরত রাখতে পারতেন। তবে একটি শিশু অভিযোগ করেছে, একজন নিরাপত্তারক্ষী তাকে দেয়াল থেকে ঠেলে পার্কের ভেতরে ফেলে দিয়েছেন। এ অভিযোগের কোনো সুরাহা হলো না কেন?
পার্কটি একটি সরকারি সম্পত্তি। নিয়ম অনুযায়ী, একটা শহরে এমন উন্মুক্ত জায়গায় শুধু শিশু নয়, সবারই অবাধ প্রবেশাধিকার থাকার কথা। তাই সে স্থানটির বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত এলাকায় রূপান্তর কতটা নিয়মসংগত– এ প্রশ্ন তোলাই যায়। এ প্রেক্ষাপটেই আমরা মনে করি, শিশুরা স্বাভাবিক কৌতূহলবশত পার্কে যখন প্রবেশ করেই ফেলল, তখন তাদের ভয় ভাঙানোই ছিল ইউএনওর দায়িত্ব। তিনি শিশুদের শারীরিকভাবে কষ্টই দেননি; জনসমক্ষে অপমানও করেছেন, যা প্রচলিত শিশু আইনেরও লঙ্ঘন।
শিশুদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ আমরা কেউই করতে পারি না। তবে ইউএনও বলেই এর সমালোচনা বেশি হচ্ছে। তা ছাড়া ইতোপূর্বে বিভিন্ন স্থানে ইউএনওদের ক্ষমতার উগ্র প্রদর্শনীও মানুষ দেখেছে। আলোচ্য ঘটনায় তারই ছায়া কেউ কেউ দেখছেন।
শিশুবান্ধব যে মানবিক সমাজ আমরা চাই, সেখানে ইউএনওর মতো দায়িত্বশীলদেরই পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করা উচিত। শিশুশ্রম আমাদের বড় সমস্যা। শিশুদের ঝরে পড়া এখনও উদ্বেগের; পথশিশুদের সামনে শুধুই হাহাকার। অমানুষিক নির্যাতনে শিশুমৃত্যুর ঘটনা তো কম ঘটেনি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও শিশুরা নির্যাতনের শিকার। সেখানে একজন ইউএনও এমন কাণ্ড করলে শিশুরা যাবে কোথায়!