প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
কফের রঙে রোগের পরিচয়
পৃথিবী বর্ণময়। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে এক এক ঋতুতে এক এক রঙ। মেঘের যেমন অনেক রঙ তেমনি কফের রঙও বিভিন্ন রকমের হতে পারে। কফের রঙ দিয়েই জানা যায় রোগের ধরন এবং নির্ণীত হয় প্রতিকার ব্যবস্থা। যাকে আমরা কফ বলি তা আসলে এক ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। সংবেদনশীল শ্বাসতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্যে মিউকাস পর্দাগুলো একধরনের তরল নিঃসরণ করে। এতে মিউসিন ও অন্যান্য প্রোটিন থাকে।
এই তরলের নামই মিউকাস বা শ্লেষ্মা। এতে আরও থাকে শ্বাসনালীর ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষের অংশবিশেষ। এই শ্লেষ্মাই সমন্বিতভাবে কফ নামে আখ্যায়িত হয়। শ্লেষ্মার কাজ হলো শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে ভালো রাখা। নাকের মিউকাস ঝিল্লী ও শ্বাসনালীর গ্রন্থি হতে দিনে প্রায় দুই কোয়ার্ট শ্লেষ্মা বা মিউকাস নিঃসৃত হয় যা পাতলা স্তরের মাধ্যমে নাসারন্ধ্র ও শ্বাসনালীকে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। এক কোয়ার্টে ছেচল্লিশ দশমিক তিন পাঁচ (৯৪৬.৩৫) মিলিলিটারের কাছাকাছি। শ্লেষ্মা ফুসফুসে ময়লা ধূলিকণা, জীবাণু, ধোঁয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য বাহ্যিক অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তু অনুপ্রবেশ করা রোধ করে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া কিংবা জীবাণুর সংক্রমণে শ্লেষ্মা বা মিউকাস নিঃসরণের হার বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু কাশিতে শ্লেষ্মা নিঃসরণ হয়। আবার কোন কোন কাশিতে শ্লেষ্মা বের হয় না। ধূমপায়ীদের কফ বা শ্লেষ্মা জমে গিয়ে স্বাভাবিক প্রবাহ কমে যায়।
কফ বা শ্লেষ্মার বর্ণ, পরিমাণ ও গাঢ়ত্ব একেক রোগে একেক রকম হয়। কফের বর্ণ হতেই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, যক্ষ্মা, ক্যান্সার ইত্যাদি সনাক্ত করা যায়।
কফের স্বাভাবিক বর্ণ : কফের স্বাভাবিক বর্ণ স্বচ্ছ, সাদা বা হাল্কা ধূসরাভ হতে পারে।
গাঢ় হলুদ কফ : কফের রঙ গাঢ় হলুদ হওয়া মানে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ বুঝতে হবে।
সবুজাভ কফ : সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগে কিংবা নিউমোনিয়ায় কফের রঙ সবুজাভ কিংবা গাঢ় হলদে হয়ে যায়।
বাদামী বর্ণের কফ : যারা ধূমপায়ী তাদের কফ বাদামী হয়। ব্ল্যাক লাঙস্ ডিজিজ কিংবা কয়লার ধোঁয়া যাদের নিঃশ্বাসে ঢোকে তাদের কফ কালো বর্ণের হয়।
গোলাপি বর্ণাভ কফ : যাদের পালমোনারী ইডিমা হয়, অর্থাৎ ফুসফুসে জল বা তরল জমে যায় তাদের কফের রঙ গোলাপি বর্ণাভ হয়। হার্ট ফেইলিওর হলেও কফের বর্ণ গোলাপি বর্ণাভ হয়ে ওঠে।
রক্তিমাভ কফ : যদি ফুসফুসের ভেতরে ক্ষত হয় বা আঘাত লাগে তবে কফের রঙ লালচে হয়। ফুসফুসের ক্যান্সার, ফুসফুসের ছোট ছোট রক্তনালীতে রক্তের দলা পাকালে (পালমোনারী এমবোলিজম) কফের বর্ণ লালচে হয়ে ওঠে।
কফে রক্ত নিঃসরণ : যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে কফের মাধ্যমে রক্তক্ষরণ হয়।
সাদা ফেনা ফেনা কফ : জীবাণু সংক্রমণের কারণে নাসারন্ধ্রের কোষগুলো ফুলে গিয়ে কফের বর্ণ থকথকে ও একটু বেশি সাদা হয়ে যায়। ব্রঙ্কাইটিস ও ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা এবং কখনো কখনো সাইনুসাইটিসের কারণে কফের বর্ণ সাদা ফেনা ফেনা হয়। হার্ট ফেইলিওর হলে কফ ফেনা ফেনা হয়। গ্যাস্ট্রো-ইসোফেজিয়াল রিফ্লেক্সেও কফের বর্ণ সাদা ফেনা ফেনা হয়।
স্বচ্ছ কফ : স্বাভাবিক কফের বর্ণ স্বচ্ছ হলেও অ্যালার্জিজনিত নাসারন্ধ্রের প্রদাহ, ভাইরাল নিউমোনিয়া, ভাইরাসজনিত ব্রঙ্কাইটিস রোগে কফ স্বচ্ছ হয়।
কালচে কফ : যাদের ফুসফুসে ছত্রাকের তীব্র সংক্রমণ হয়, যারা কয়লা খনির শ্রমিক, তাদের কফের বর্ণ কালচে হয়।
মরচে রঙের কফ : ফুসফুসে ফোঁড়া হলে অর্থাৎ লাঙস্ অ্যাবসেসে কফের রঙ মরচে ধরা রঙের হয়। মরচে রঙের কারণ হলো কয়েকদিনের পুরোনো রক্ত কফের সাথে মিশে থাকে।