প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪১
আল মাহমুদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

‘সোনালি কাবিন’ লিখে দিয়ে বাংলা সাহিত্যের সাথে তিনি বেঁধে নিয়েছেন আজীবন গাঁট ছড়া। তাঁর কাছে কবিতা হলো মক্তবের চুলখোলা আয়েশা আক্তার। তিনি নামে মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ (১১ জুলাই ১৯৩৬Ñ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) হলেও সাহিত্যের জগতে শুধু আল মাহমুদ নামেই পরিচিত। বার্ধক্যে উপনীত হয়ে ভুগেছেন দেহযন্ত্রের বিবিধ অসুখে। জলবেশ্যার স্রষ্টা কেবল পাথরঘাটার গির্জায় লাল পাথরের ঢেউ গুণেই ক্ষান্ত হননি। বরং শৈশবে কাঁঠাল চাঁপার গন্ধে বিভোর হয়ে পড়াশুনায় মন না দিতে পারার কথাও অকপটে বলে গেছেন। কবিকে কেড়ে নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মতো রোগ যাতে হৃৎস্পন্দন স্থবির হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে হাতে বই নিয়ে পড়ার মতো দৃষ্টি শক্তি তাঁর বলবৎ ছিলো না। প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক আদর্শের সাথে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে শেষের দিকে এসে তিনি বিতর্কের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। তবুও তাঁর সাহিত্যের জ্যোতি এতটুকু ম্লান হয়নি। পানকৌড়ির রক্তে সাহিত্যের প্রসাদগুণ তৈরি করা এই জাদুকর সাহিত্যিকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আজ আমাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কী
হার্টের যখন হঠাৎ করেই স্পন্দন বন্ধ হয়ে যায় তখন তাকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলে। এটি আকস্মিকভাবে সংঘটিত হয়। এর ফলে মস্তিষ্ক ও দেহের অন্যান্য অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তি জ্ঞান হারায়, চলতে অক্ষম হয়ে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যুবরণ করে।
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষ্মণ : কোন কোন ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে রোগী কোন লক্ষণ প্রকাশ করে না। সাধারণত কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায় :
* অবসাদ
* মাথাঘোরা
* শ্বাসকষ্ট ও ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া
* বমি ভাব
* বুকে ব্যথা
* হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি
* চেতনা বিলোপ হওয়া
* জীবনের জন্যে মারাত্মক ঝুঁকির কারণ
* শারিরীক দুর্বলতা দেখা দেওয়া
* আকস্মিক নিস্তেজ হয়ে পড়া
* হৃদপিন্ড ওজন হয়ে যাওয়া
* বুক ধড়ফড়ানো
* হৃদস্পন্দন না পাওয়া
* কোন শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকা
* অজ্ঞান হয়ে পড়া বা চেতনা নাশ হওয়া
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মুখ্য কারণ
* অ্যারিদমিয়া বা হার্ট বেতাল হওয়া। অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন।
* ভেন্ট্রিকুলার ফিব্রিলেশন
* হার্ট আকারে বড় হয়ে যাওয়া
* করোনারি আর্টারির অসুখ
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের গৌণ কারণ
* রক্তক্ষরণজনিত কারণে রক্ত স্বল্পতা
* হার্টের ভাল্বের অসুখ
* রক্তে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি
* রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতা
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকিসমূহ
* অ্যালকোহল সেবন বা মাদকাসক্তি
* কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হৃদরোগের পারিবারিক ইতিহাস
* হৃদরোগ
* উচ্চ ও অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ
* রক্তে কোলেস্টেরলের উচ্চ মাত্রা
* রক্তে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ঘাটতি
* মেদস্থূলতা
* ধূমপান
* অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস
* নিষ্কর্মা জীবন ধারণ পদ্ধতি
* পূর্বের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট
* কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পারিবারিক ইতিহাস
* হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব ইতিহাস
* জন্মগত হৃদরোগ
* হার্ট ফেইলিওর
* হৃদ স্পন্দন তালহারা হওয়া
* বার্ধক্য
* লিঙ্গ : পুরুষ
* নিষিদ্ধ ঔষধ তথা কোকেইন, অ্যাম্ফিটামিন সেবন
* ঘুমে নিঃশ্বাস আটকে যাওয়া
* ক্রনিক কিডনি রোগ
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে করণীয়
* হৃদপিণ্ড-ফুসফুস পুনশ্চালন নিশ্চিত করা বা সিপিআর প্রয়োগ
* ডিফব্রিলেটর যন্ত্রের মাধ্যমে হৃদপিন্ডে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে স্বাভাবিক স্পন্দন ফিরিয়ে আনা যাতে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসে
কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধে করণীয়
* হৃদপিণ্ডের পক্ষে স্বাস্থ্যকর আহার গ্রহণ
* শরীরের ওজন কমানো
* শারিরীক ব্যায়াম
* ধূমপান রোধ করা
* মদ্যপান বন্ধ করা
* প্রতিনিয়ত রক্তচাপ পরিমাপ
* হৃদরোগ আছে কি না স্ক্রিনিং করে রাখা
কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের জটিলতাজনিত ফলাফল
* মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
* মৃত্যু