প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৩
ঈদের স্বাস্থ্য সচেতনতা

এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশির ঈদ সমাগত। কিন্তু খুশির আতিশয্যে লাগামছাড়া জীবনাচরণ আর ইচ্ছেমতো খাবার খেলে ঈদেও খুশিও পরিণত হতে পারে ভোগান্তিতে। গরমের এই সময়ে দিনের বেলায় পোশাক হতে হবে হাল্কা রঙের। ঈদে বাইরে বের হলে ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করতে হবে। টুপি বা স্কার্ফ কিংবা অন্য কিছু দিয়ে মাথা ও চুল ঢেকে রাখলে ভালো কাজে দিবে। রোদ চশমা ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় খেতে হবে প্রচুর পানি। রসালো ফল, তরমুজ, বাঙ্গি ইত্যাদি খেতে পারেন। ঈদে ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপে রোগীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এমন কিছু সতর্কতা আর স্বাস্থ্য পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি যা আপনার ঈদকে নিরাপদ আর আনন্দ দায়ক করবে।
উচ্চ রক্তচাপের রোগী
উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা গরুও মাংস কম খেতে পারেন। এ সময় রান্নার জন্য ব্যবহৃত তেল ভেজিটেবল অয়েল হলে ভালো। অন্য প্রোটিন যেমন ডিম, ডাল ও ননি তোলা দুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রচুর শাকসবজি, লেবুর রস ও সালাদ খেয়ে নিন। দেহের ওজন বেশি থাকলে ভাতের পরিমাণও কমিয়ে দিন।
ডায়াবেটিক রোগী
ডায়াবেটিস রোগীদের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেডজাত খাবারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রোটিন বা ফ্যাট খাবারে বাধা কম তবে পরিমাণে বেশি গ্রহণ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। তাই এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত ফ্যাটের চেয়ে অসম্পৃক্ত ফ্যাট পরিমাণে বেশি গ্রহণ করা যায়। সেই সঙ্গে ডাল ও ডিম খাওয়া যাবে। যারা টেবলেট খান তাদের চেয়ে যারা ইনসুলিন নেন তাদের বিপদ বেশি। তাই ঈদে সারাদিনে অন্তত ২-৩ বার রক্তের গ্লুকোজ দেখে নিতে হবে।
হজমের সমস্যা
ঈদে পেটের গণ্ডগোল একটি সাধারণ ঘটনা। পেটের সমস্যা এড়াতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত ধুবেন। এরপরও বিপদ এড়াতে পর্যাপ্ত স্যালাইন আর মেট্রোনিডাজল টেবলেট রাখুন। ঈদে এসিডিটি একটা বড় সমস্যা। অতিরিক্ত ঝাল, মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করবেন। দু’বেলা খাবার আধাঘণ্টা আগে আলসারের ওষুধ যেমন ওমেপ্রাজল, ইসমিপ্রাজল, রেনিটিডিন ইত্যাদি খেয়ে নেবেন। প্রয়োজনে খাবার পর দুই চামচ এ্যান্টাসিড খেতে পারেন। পেট ভরে খাবেন না, গোগ্রাসে না খেয়ে সময় নিয়ে চিবিয়ে খাবেন, খাবার সঙ্গে সঙ্গে পানি না খেয়ে একটু পরে খাবেন, রাতে খাবার পর পরই ঘুমাতে যাবেন না, কিছুক্ষণ হাঁটা চলা করতে পারেন, দুই তিন ঘণ্টা পর ঘুমাবেন।
ঈদে সঙ্গী ওষুধ
ভ্রমণে অনেকের বমি হয় তারা ভ্রমণের আধ ঘণ্টা আগে ও পরে এভমিন টেবলেট একটা করে খেয়ে নেবেন। এ ছাড়া ঈদ ভ্রমণে যেসব প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আপনার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া উচিত তা হলো জ্বর, শরীর ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল (ডোজ : ১টা করে দৈনিক ৩ বার)/ পেটের পীড়ার জন্য মেট্রোনিডাজল ৪০০ মি.গ্রা, (ডোজ : ১টা করে দৈনিক ৩ বার) আথবা সিপ্রোফ্লক্সাসিন (ডোজ : ১টা করে দৈনিক ২ বার), ডায়রিয়ার জন্য খাবার স্যালাইন, কাশির জন্য যেকোনো একটি কফ সিরাপ। হাপানির রোগীরা ইনহেলার আর ডায়াবেটিক রোগীরা টেবলেট বা ইনসুলিন নিতে ভুলবেন না।
ঈদে চিকিৎসকদের চেম্বার বন্ধ থাকলেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকে। তাই আপনার আশেপাশের হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ফোন নাম্বার জেনে নিন। পরিচিত ডাক্তারের নাম্বরও রাখতে পারেন। প্রয়োজনীয মুহূর্তে এসব কাজে দিবে। ঈদে এত সব নিয়ম মানতে হবে শুনে অনেকে হয়তো বিভ্রান্ত হতে পারেন। আসলে ব্যাপার তেমন কঠিন কিছু নয়, মূলত এদিন এমনভাবে চলতে হবে যেন ঈদের আনন্দও মাটি না হয় আবার শরীরও ভালো থাকে।