শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৪

তরুণদের শক্তি আর বয়স্কদের বুদ্ধি উন্নয়নের সহায়ক

রিপন কুমার সাহা
তরুণদের শক্তি আর বয়স্কদের বুদ্ধি উন্নয়নের সহায়ক

মোবাইলের ব্যস্ততার কারণে এখন আর মা- বাবা তাদের সন্তানদের গল্প শোনান না, বরং তাদের সন্তানদের হাতে মোবাইল তুলে দিচ্ছেন। আমরা যখন ছোট ছিলাম, সেই সময়ে প্রতি রাতেই মা বা বাবা আমাদের বিভিন্ন গল্প শোনাতেন। সেই গল্পের উপজীব্য ছিলো নীতি ও নৈতিকতার আলোতে আলোকিত হবার উপদেশ সমৃদ্ধ।

           বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বাবা’র বলা একটি গল্প মনে পড়ে গেলো। সেটার কিছু অংশ লিখে দিলাম, যদি কারো কাজে আসে তাই।

           একবার এক গ্রামের তরুণদের মধ্যে কয়েকজনের ভাবনায় আসলো যে, আমাদের গ্রামের সকল কায়িক কাজই তো আমরা করে থাকি। বিশেষ করে মাঠে ফসল ফলানো, গৃহ নির্মাণ, বেচাকেনা, বহিঃশত্রুর হাত থেকে গ্রাম রক্ষায় যুদ্ধ করা ইত্যাদি আর বয়স্করা বসে বসে সেই সুবিধা মাতব্বরি করে গ্রহণ এবং বসে বসে খেয়ে আর খোশগল্প করে সময় অতিবাহিত করেন। অতএব গ্রামের বয়স্কদের মাতব্বরি আমরা বরদাস্ত করবো না এবং তাদের কথাও শুনবো না। আমরা সব বদলে দেবো আমাদের মতো করে।

           যেমন ভাবনা তেমন কাজ। কয়েক জনের ভাবনা গ্রামের সকল তরুণকে সমবেত করে প্রকাশ করার পর সিদ্ধান্ত নিলো, গ্রামের সকল বয়স্ককে এলাকাছাড়া করা হবে। এমন সিদ্ধান্ত নেবার পর সকল তরুণ গ্রামের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে সকল বয়স্ককে ধরে এনে একত্রিত করে নির্বাসিত করার মানসে তাদের গ্রামের শেষ সীমানায় থাকা একটি পাহাড়ের ওপরে রেখে আসলো বা নির্বাসিত করে গ্রামে ফিরে না আসার ফরমান জারি করলো।  বয়স্করা অসহায়ের মত তরুণদের ফরমান মানলেন বটে! কিন্তু কোনো প্রকার বিরোধিতা না করে কেবলই মিটিমিটি হাসলেন। তরুণরা বয়স্কদের সেই হাসির মর্মার্থ অনুধাবন করেনি।

           পাহাড়ের ওপরেই বয়স্করা একত্রিত হয়ে সেই আগের স্বভাবের মতো করেই খোশগল্পে সময় অতিবাহিত করে চলছেন, আর তরুণরা তাদের গ্রামে ফিরে এসে ৪/৫ জনের নেতৃত্বে দায়িত্ব বন্টন করে  খুব আনন্দেই সময় অতিবাহিত করছেন নিজেদের সর্বময় কর্তা সাজিয়ে।

           কয়েক মাস যাবার পর পাশের গ্রামের শত্রুরা তরুণদের গ্রামে হামলা করে এবং সেই হামলায় তরুণরা তাদের সর্বময় শক্তি প্রয়োগ করা সত্ত্বেও পেরে উঠ নি। কারণ, তরুণদের দেহে প্রবল শক্তি ছিলো, কিন্তু যুদ্ধ জয়ের কৌশল জানা ছিলো না। ফলে তাদের গ্রামের কিছু উর্বর অংশ হাতছাড়া হয়ে যায়। যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে এক তরুণের ভাবনায় আসে যে, আগেও পাশের গ্রামের যোদ্ধারা আমাদের গ্রামে হামলা করেছিলো এবং সেই সময়ের তুলনায় আমরা এখন আরো বেশি শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও তাদের সাথে পেরে উঠছি না কেন? তবে সেই সময়ে আমরা  বয়স্কদের পরামর্শ মোতাবেক যুদ্ধ করেছি এবং তাদের পরাস্ত করে তাড়িয়ে দিয়ে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম।

           সেই তরুণের ভাবনা নেতৃত্ব প্রদানকারী সকল তরুণের সাথে শেয়ার করলো এবং গ্রামের নির্বাসিত বয়স্কদের পরামর্শ বা উপদেশ নেবার জন্যে গ্রামের শেষ সীমানায় থাকা পাহাড়ে গমন করে তাদের গ্রামের অবস্থা এবং বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও কিছু অংশ হাতছাড়া হবার বিষয়টি অবহিত করলো। বয়স্করা তরুণদের কথা শুনে মিটিমিটি হেসে তাদের যুদ্ধ জয়ের কিছু টিপস বা কৌশল শিখিয়ে দিলেন। সেই কৌশল সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তরুণরা সমবেত হয়ে গ্রামের হাতছাড়া অংশে হামলা করে তাদের অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে শত্রু- গ্রামের কিছু অংশও দখল করে নিলো। এতে তাদের গ্রামের সীমানা বৃদ্ধি পাওয়ায় সমৃদ্ধিও বৃদ্ধি পেলো। তরুণরা বেজায় খুশি হয়ে নির্বাসিত বয়স্কদের কাছে গিয়ে নিজেদের অতীত কর্মের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনাকরত বয়স্কদের গ্রামে ফিরিয়ে আসার জন্যে অনুরোধ করলো এবং বয়স্কদের ফিরিয়ে এনে তাদের হাতে গ্রামের সকল নেতৃত্ব প্রদান করে অনুশোচনা করে বললো, আমরা তরুণরা দৈহিক শক্তি বলে নিজেদের সর্বময় কর্তা মনে করে আপনাদের নির্বাসিত করেছিলাম, এজন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আমরা বুঝতে পেরেছি, নিজেরা না বদলিয়ে  সবাইকে বদলানো যায় না, বদলানোর জন্যে প্রয়োজন কৌশল এবং বয়স্কদের উপদেশ ব্যতীত কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না।

           বিঃ দ্রঃ শক্তি নয় অভিজ্ঞতাই মানুষকে বয়স্ক করে তোলে। তরুণদের শক্তি আর বয়স্কদের বুদ্ধি  (সঞ্চিত জ্ঞান) ছাড়া সমৃদ্ধি আসে না।

 

রপন কুমার সাহা : সভাপতি, শারদাঞ্জলি ফোরাম,  চঁাদপুর। রচনাকাল : ২৬/০৩/২০২৫ খ্রি.।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়