শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২১, ০০:০০

জন্মনিরোধক পদ্ধতি : ইনজেকশন
অনলাইন ডেস্ক

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন নারীদের জন্যে কার্যকর অস্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। এটি একবার গ্রহণে তিনমাস পর্যন্ত গর্ভরোধ করার ক্ষমতা রাখে। জন্মবিরতিকরণে আগ্রহী নারীরা তিনমাস অন্তর অন্তর ইনজেকশন গ্রহণ করতে পারে। গর্ভনিরোধক খাবার বড়ির অনুরূপ দুই ধরনের (ক. প্রজেস্টরন সমৃদ্ধ, খ. ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টরন সমৃদ্ধ) গর্ভনিরোধক ইনজেকশন থাকলেও বাংলাদেশে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে শুধুমাত্র প্রজেস্টরন সমৃদ্ধ গর্ভনিরোধক ইনজেকশন প্রচলিত রয়েছে, যা ‘স্বস্তি’ নামে পরিচিত। এটির বাণিজ্যিক নাম ‘ডিপো-প্রোভেরা’। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত এবং অত্যন্ত কার্যকর জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি। এই ইনজেকশনটির প্রজেস্টরন হরমোনের নাম ‘ডিপো-মেড্রোক্সি প্রজেস্টরন এসিটেট’। যা ডিএমপিএ নামে পরিচিত। এটি তরল-জাতীয় হরমোন এবং তিনমাস পরপর নারীর দেহের গভীর মাংশপেশীতে প্রয়োগ করে জন্মবিরতি দেয়া যায়।

কার্যকারিতা

প্রতিটি ইনজেকশন ১ মি.লি. ভায়ালে ১৫০ মিলিগ্রাম ডিএমপিএ হরমোন থাকে। প্রতি তিনমাস পরপর এক ভায়াল ইনজেকশন গ্রহণের পর দেখা গেছে প্রতি এক হাজার জন নারীর মধ্যে মাত্র তিন জন নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। তবে বাস্তব ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা খাবার বড়ির চেয়েও বেশি।

কীভাবে কাজ করে

* জরায়ুর মুখে নিঃসৃত রসকে ঘন ও আঠালো করে, যার ফলে শুক্রকীটকে জরায়ুতে প্রবেশে বাধা দেয়।

* ডিম্বস্ফুটনে বাধা দেয়।

* জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামকে গর্ভসঞ্চারের জন্যে উপযোগী হতে দেয় না। এন্ডোমেট্রিয়ামের গ্ল্যান্ডের সংখ্যা এবং আকার কমার ফলে এটি পাতলা হয়ে যায়।

সুবিধা

* অত্যন্ত কার্যকরী ও নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

* গোপনীয়তা রক্ষা করে নেয়া যায়।

* একটি ইনজেকশন তিনমাস পর্যন্ত গর্ভসঞ্চারে বাধা দিয়ে থাকে। তাই প্রতিদিন খাবার বা ব্যবহারের ঝামেলা থাকে না।

* অস্থায়ী পদ্ধতি, কাজেই পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে অন্য পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় বা গর্ভধারণ করা যায়।

* বুকের দুধের পরিমাণ ও গুণগত মানের উপর কোনো প্রভাব ফেলে না। ফলে সন্তান জন্মদানের ৬ সপ্তাহ পরেই এটি ব্যবহার করা যায়।

* জরায়ুর বাহিরে গর্ভসঞ্চারের ঝুঁকি কমায়।

* অনেক সময় মাসিক বন্ধ করে দেয় বলে রক্তস্বল্পতা কমায়।

* জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে (এন্ডোমেট্রিয়াম) ক্যান্সার ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা দান করে।

* জরায়ুতে টিউমার/সিস্ট প্রতিরোধে সহায়তা দান করে।

* ইস্ট্রোজেন নেই বলে রক্ত জমাট বাধা বা হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা দেখা যায় না।

* সহবাসের সাথে এর ব্যবহারের কোন সম্পর্ক নাই।

* অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণের ভয় দূর করে যৌনমিলনকে আরও আনন্দঘন করে তুলতে সাহায্য করে।

* যে কোনো বয়সের প্রজননসক্ষম নারী ইনজেকশন নিতে পারেন।

* অনেক সময় মাসিক বন্ধ করে দেয় বলে রক্তস্বল্পতা কমায়।

অসুবিধা

* মাসিক চক্রে অনিয়ম, যেমন : ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব বা অনিয়মিত রক্তস্রাব, দীর্ঘস্থায়ী বা অতিরিক্ত রক্তস্রাব, মাসিক বন্ধ থাকা এ-জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। সাধারণত একটানা ১ বছর ব্যবহার করার পর কারো কারো মাসিক দীর্ঘদিনের জন্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

* ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।

* ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার পর পুনরায় সন্তান ধারণ করতে সাধারণত ৬-১২ মাস সময় লাগতে পারে।

* দীর্ঘদিন ব্যবহারে অস্থির ঘনত্ব কমে যেতে পারে।

* ইনজেকশন নেয়ার জন্যে ৩ মাস পর পর সেবাকেন্দ্রে যেতে হয় বা পরিবার কল্যাণ সহকারীর জন্যে অপেক্ষায় থাকতে হয়।

* কোনো কোনো গ্রহীতার মাথা ধরে, মাথা ঝিমঝিম করে, স্তন ভারি এবং ব্যথা অনুভূত হয়, মানসিক অবসাদ, মেজাজ খিটখিটে হয়, স্বামী সহবাসের ইচ্ছা কমে যায়।

* যৌনরোগ বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে না।

* অন্যান্য অস্থায়ী পদ্ধতির মতো নিজে নিজে নেয়া যায় না।

যাদের জন্যে উপযুক্ত

* কমপক্ষে একটি জীবিত সন্তান থাকতে হবে।

* যাদের দুই বা তার বেশি সন্তান আছে কিন্তু স্থায়ী পদ্ধতি নিতে আগ্রহী নয়।

* যে সমস্ত ক্ষেত্রে কার্যকরী গর্ভরোধক পদ্ধতি প্রয়োজন অথবা ইস্ট্রোজেন ব্যবহার নিষিদ্ধ।

* খাবার বড়ি নিয়মিত খেতে ভুলে যায় অথবা বড়ি ব্যবহারে অসুবিধা বা বড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ।

* বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় গর্ভরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইলে।

* গ্রহীতার রক্ত স্বল্পতা থাকলে।

* আইইউডি ব্যবহারে প্রজননতন্ত্রে প্রদাহের ভয় থাকলে।

* যারা এন্ড্রোমেট্রিওসিসে ভুগছে তাদের জন্য এই ইনজেকশন উপযোগী।

যাদের জন্যে উপযুক্ত নয়

* অবিবাহিত, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী থেকে পৃথক নারী।

* বর্তমানে কোনো জীবিত সন্তান না থাকলে।

* গর্ভাবস্থায় বা গর্ভবতী বলে সন্দেহ হলে।

* অস্বাভাবিক রক্তস্রাব হলে।

* স্তনে কোনো সন্দেহজনক চাকা বা ক্যান্সার থাকলে।

* জন্ডিস বা লিভারের গুরুতর অসুখ থাকলে বা সাম্প্রতিক অসুখের ইতিহাস থাকলে।

* অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকলে।

* হৃদরোগ থাকলে।

* উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।

* রক্তস্রাব অনিয়মিত, অত্যাধিক বা দীর্ঘায়িত হলে।

* ভায়া (ভিআইএ) পরীক্ষা পজিটিভ হলে।

ব্যবহারবিধি

* মাসিক শুরুর প্রথম ৫ দিনের মধ্যে (১ম ডোজের ক্ষেত্রে)। ৫ দিন পর দিলে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত সঙ্গীনিকে কনডম ব্যবহার করতে হবে।

* গর্ভবতী নন এটা নিশ্চিত হলে মাসিকের যে কোনো সময় যেমন : গত মাসিকের পর সহবাস না করে থাকলে, অন্য কোনো কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করা অবস্থায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে কোনো দিন থেকে শুরু করতে পারেন।

* এমআর বা গর্ভপাতের ৭ দিনের মধ্যে। অথবা সহবাস হয়নি নিশ্চিত হয়ে।

* আধুনিক অন্যান্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়মিতভাবে ব্যবহার বন্ধ করার পরপরই। আরও দেরি হলে গর্ভবতী নন নিশ্চিত হয়ার পর।

* সন্তান হওয়ার ৬ সপ্তাহ পর (যদি সন্তান পুরোপুরি মায়ের বুকের দুধ পান করে এবং মাসিক না হয়ে থাকে)।

* প্রসবের পর থেকে যদি শিশুকে মায়ের বুকের দুধ পান না করানো হয়ে থাকে তাহলে, প্রসবের পরপরই বা প্রথম ৪ সপ্তাহের মধ্যে। ৪ সপ্তাহ পরেও যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নারী গর্ভবতী নন।

* প্রথম ডোজ : ১৫০ মিলিগ্রাম ইনজেকশন গভীর মাংশপেশীতে দিতে হয়। পরবর্তী ডোজ : প্রথমবার দেয়ার পর পরবর্তী ডোজসমূহ তিন মাস পর পর দিতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন : রমজান, বন্যা, বিদেশভ্রমণ, স্থান পরিবর্তন কিংবা অন্য কোনো কারণে ডিউ ডোজের (নির্দিষ্ট তারিখের) পূর্ববর্তী ১৪ দিনের মধ্যে অথবা পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে দেয়া যেতে পারে।

সতর্কতা

* রক্তস্রাব হতে পারে কিংবা কিছুদিন মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। এদিকে খেয়াল রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

* ইনজেকশনের স্থানে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ইনজেকশন গ্রহণের সময় পুশিংয়ের স্থান পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং নন-টাস টেকনিক ও ডিসপোজেবল সুঁই ব্যবহার করতে হবে।

* ইনজেকশনের ভায়ালের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কি না দেখে নিতে হবে।

* নিয়ম মেনে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

* সময় মতো সেবাকেন্দ্রে যেতে হবে কিংবা পরিবার কল্যাণ সহকারীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

তথ্যঋণ : কর্ম ও প্রশিক্ষণ সহায়িকা।

লেখক : পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর

ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়