বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সার্ভার বন্ধ থাকায় স্কুল শিক্ষকের কাছে মার খেয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা!
তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ প্রতিবেদক ॥

রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়। ইআইআইএন : ১০৩৭১৮। চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ ইউনিয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত একটি শিক্ষানিকেতন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির সুনাম ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে তলানিতে। বিদ্যালয়টির একটি ওয়েবসাইট (www.rampurhs66.edu.bd) আছে, কিন্তু সেখানে নেই পর্যন্ত কোনো তথ্য। ওয়েবসাইটে স্কুলের প্রতিষ্ঠার সঠিক ইতিহাস কলামে কোনো সঠিক ইতিহাস লেখা নেই। তাছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন ক্লাস রুটিন, রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা--এসব কোনো কিছুই সেখানে পাওয়া যায়নি। কিছু কিছু শিক্ষকের ছবি দিয়ে দায়সারা গোছের একটি সাইট তৈরি করা হয়েছে, যাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এই স্কুলের নেই কোনো নিয়মণ্ডকানুন। বিদ্যোৎসাহী মরহুম জুনাব আলী সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং রামপুরের চৌধুরীদের জমিদান ও এলাকার গুণীজনদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির সুনাম এক সময়ে ছিলো শুধুমাত্র ভালো শিক্ষকগণের সেবামূলক উদারতার কারণে, আজ আর সেই অবস্থা নেই। নেই সেই আদর্শিক শিক্ষক, আর নেই সেই ভালো পড়াশোনা। আদর্শিক শিক্ষকের অভাবে স্কুলটির পতন হয়েছে। আর সেই স্কুলের এক শিক্ষক ‘উদোরপিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন করছেন। যা কোনো নিয়ম বা শাসনের মধ্যে পড়ে না। শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপি জমা না দিতে পারার কারণে একজন শিক্ষক কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মারবেন, এটা কোনো অভিভাবকই সহ্য করতে পারেন না।

এ বছরের জানুয়ারিতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে ছাত্র-ছাত্রীরা। তাই পিতার এনআইডি কার্ড, মাতার এনআইডি কার্ড, পূর্বের স্কুলের প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে। আরও জমা দিতে হবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্মনিবন্ধনের ছায়াকপি। তো ওই সময় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্র চাঁদপুর পৌরসভার জন্মনিবন্ধনের বাংলা কপি জমা দিয়েছে, তাতে হবে না। জন্মনিবন্ধনের ইংরেজি কপি লাগবে।

ফেব্রুয়ারিতে চাঁদপুর পৌরসভায় ওই ছাত্রের বাংলা জন্মনিবন্ধন কপি জমা দিয়ে ইংরেজি জন্মনিবন্ধনের কপির আবেদন করা হয়েছে। গত কয়েক মাসেও ‘সার্ভার ডাউন’ সমস্যার কারণে মিলেনি ওই জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপি।

তাতেই হয়েছে কাল। গত মাসে রামপুর স্কুলের রাসেল নামের শিক্ষক ধরে ধরে ছাত্র-ছাত্রীদের কয়েকবার পিটিয়েছেন জন্ম নিবন্ধনের ইংরেজি কপির জন্য। এই পেটানোর ভয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছিল। মাস্টারের বেতের ভয়ে তারা এখন স্কুলে যেতেই ভয় পায়।

বিষয়টি জানতে রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন সরকারের সাথে কথা হয়। তিনি অভিযুক্ত শিক্ষককে তলব করে এর কারণ জানতে চান। ওই শিক্ষক জানান, ছাত্র-ছাত্রীরা কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় তিনি বেত্রাঘাত করছেন।

প্রধান শিক্ষক বললেন, আসলে যেহেতু সার্ভার বন্ধ, তারা কাগজপত্র দিতে পারছে না, আপনি বিষয়টি আমাকে জানালেই হতো। বোর্ড থেকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বেত্রাঘাত করা নিষেধ করা হয়েছে। যেহেতু দোষটা তাদের নয়, তাই তাদেরকে বেত্রাঘাত করা যাবে না। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়েছে।

তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো তথ্যপ্রযুক্তির স্মার্ট বাংলাদেশের এই নতুন যুগে জন্ম নিবন্ধনের সার্ভার বন্ধ থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের শিক্ষকের কাছে কেনো অযথা মার খাবে? আরো একটি বিষয়, যে বাংলা ভাষা রক্ষার জন্যে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার শহীদ হয়েছেন, সেই বাংলা ভাষায় জন্ম নিবন্ধন কেনো স্কুলে গ্রহণ করবেন না? কেনো ইংরেজি জন্ম নিবন্ধনের জন্য এই দুর্দশা হবে? এটা জানার অপেক্ষায় অভিভাবকগণ। তাছাড়া বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই স্কুলে দক্ষ কোনা আইটি শিক্ষক নেই, যিনি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে সঠিকভাবে তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে যোগ্য করে তুলবেন। শুধু গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যা ছাড়া এখানে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক আর কিছু হয় না।

তবে, আশার কথা গত মাসের শেষের দিকে সার্ভার সচল হওয়ায় ওই শিক্ষার্থী নতুন করে জন্ম নিবন্ধন পেয়েছেন এবং বিদ্যালয়ে তা জমা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, রামপুর স্কুল গত বছর উপজেলায় ৩৩ নাম্বার হয়েছে। অর্থাৎ উপজেলার সব স্কুলের শেষে রামপুর স্কুলের অবস্থান। এই স্কুলে আগের বেশিরভাগ যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক অবসরগ্রহণ করায়, মৃত্যুবরণ করায় যেমন বর্তমানে যোগ্য শিক্ষকের অভাব, তেমনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিরও অযোগ্যতায় স্কুলটি চরম অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়েছে। তাই এই স্কুলটির বিষয়ে জরুরি সঠিক ব্যবস্থাগ্রহণ করা আবশ্যক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়