শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

এক সাহিত্যসেবীর প্রতিকৃতি
মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল

অনেক বিষয়ে পারঙ্গমতা থাকলেও বিশেষত শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে পীযূষ কান্তি বড়ুয়াকে মাস্টার বলতে হবে। চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত থাকাকালে যে অল্প কয়েকজন মানুষকে আমি অত্যন্ত সৃজনশীল ও কর্মতৎপর দেখেছি তাদের অন্যতম পীযূষ কান্তি বড়ুয়া। ডাক্তারি পেশার ব্যস্ততা ও বিড়ম্বনার পাশাপাশি ছড়া, কবিতা, প্রবন্ধ এবং বক্তৃতার ক্ষেত্রে তার মুন্সিয়ানা দেখে মুগ্ধ হয়েছি। আমি সেসময়ই ভেবেছি, তার মতো গুণী লেখক প্রকৃত সমাদর ও সুযোগ পেলে দ্রুত সুনাম ও সুখ্যাতি ছড়াতে পারবে। সেখানে সাড়ে তিন বছরের কর্মকালে যখনই তাকে কোনো কাজের বিষয়ে বলা হয়েছে তৎক্ষণাৎ সে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছে এবং কাজটি সুসম্পন্ন করেছে। তার দ্রুত অনুধাবন দক্ষতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা আমাকে অবাক করেছিল। ব্যক্তি হিসেবে পীযূষ বড়ুয়া অত্যন্ত শান্ত, সৌম্য, ভদ্র ও মেধাবী। সে অনেক কাজ করেছে, নিশ্চয়ই এখনও তার সক্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। কোনো বিষয়ের জিস্ট (নির্যাস) সে দ্রুত বের করে আনতে পারে। কাব্যিক অনুভূতিও সে খুব সহজভাবে সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করতে পারে। তার ছন্দজ্ঞান অসাধারণ। উপযুক্ত শব্দ চয়নের ক্ষেত্রেও সে দারুণ পারদর্শী। সে স্বল্পভাষী, পরিমিতি বোধ ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ তথা জেলা ব্র্যান্ডিং কর্মযজ্ঞে তার ভূমিকা অপরিসীম। ব্র্যান্ডিং কনসেপ্ট নিয়ে প্রথম যখন আমাদের প্রকাশনাটি বের হলো, এটা তখন একদম নতুন একটি ব্যাপার ছিল। এটি ইতিহাস বা কোন পর্যটন বিষয়ক গ্রন্থ ছিল না। এটি ছিল জেলা ব্র্যান্ডিং পুস্তক। এরকম একটা নতুন আইডিয়ার সমন্বয় পীযূষ কান্তি বড়ুয়াসহ প্রকাশনা কমিটি করেছে, এ কাজটি শুধু চাঁদপুর নয় সারাদেশের জন্যই একটি চমক ছিলো। সেখানে পীযূষ বড়ুয়া অনেকগুলো অনুচ্ছেদ লিখেছে। তার বিষয়ভিত্তিক ছড়াগুলোর কথা বলতেই হবে; বিষয়, শব্দচয়ন ও ছন্দগুণে সেসব দুর্দান্ত ছিল। আমাদের ব্র্যান্ডিং কনসেপ্টটি সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছাতে এই প্রকাশনা এবং ছড়াগুলো কার্যকরী ভূমিকা রেখেছিল। আমরা সেসময় সাংস্কৃতিক মাস ও ক্রীড়া মাস উদযাপন করেছিলাম, সেখানেও পীযূষ বড়ুয়া ভূমিকা রেখেছিল। কবি, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক আবার পেশাগতভাবে ডাক্তার। সৃষ্টিমুখরতার এ রকম সমন্বয় খুব কম দেখেছি। কর্মব্যস্ততা তার ক্রিয়েটিভিটিকে এতটুকু কমাতে পারেনি। আমরা যারা ২০১৫ থেকে ২০১৮ সময়কালে চাঁদপুরে কাজ করেছি, আমাদের জন্যও এমন সৃজনশীল মানুষের সাথে কাজ করাটা বড় প্রাপ্তি। আমার মনে হয়েছে সে সাধারণ মানুষের সাথে মিশলেও সাহিত্য ক্ষেত্রে তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য রয়েছে। তাকে আমরা দ্রুত উদ্ভাবন করতে পেরেছি এবং যখন-তখন তাকে কাজে-কর্মে পেয়েছি। সেসময় বিভিন্ন পত্রিকায়, প্রকাশনায় তার প্রচুর লেখা বের হতো এবং বইও প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা বোধগম্য ও সুপাঠ্য। জেলা ব্র্যান্ডিং ইতিহাসের সাথে চাঁদপুরের প্রসঙ্গ এলে অনিবার্যভাবে তার নাম আসবে।

চাঁদপুরে যে ব্র্যান্ডিং মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে, সেখানেও বড়ুয়ার ভূমিকা ছিল। ইলিশকে বিশ্বের কাছে সাহিত্যের মাধ্যমে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে। আমার মনে আছে, সে সময় সৌম্য সালেক, কাদের পলাশ এবং মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘জলপুষ্প’ নামের একটি লিটলম্যাগ। সেখানেও পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার ইলিশ নিয়ে দারুণ একটি লেখা ছিল। এছাড়াও ইলিশ নিয়ে সে পুরো একটি ছড়ার বই লিখেছে। একটা বিষয় নিয়ে এতো বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধিৎসা! তার এই অভিনব শিল্পকীর্তি আমাকে মুগ্ধ করেছে। যখনই প্রশাসন বা অন্যান্য বিষয়ে তাকে কোনও কাজ দেয়া হয়েছে, সেটি সে সম্পন্ন করেছে অত্যন্ত সুচারুভাবে। তার লেখায় কখনও অতিরঞ্জিত কিছু দেখিনি, সব টু দ্য পয়েন্টে যথাশব্দে সাবলীলভাবে লিখেছে। জেলা ব্র্যান্ডিং ইস্যু নিয়েও বিভিন্ন প্রকাশনায় এবং পত্রিকার পাতায় পীযূষ যা লিখেছে সবই সাহিত্যমান সমৃদ্ধ, প্রাঞ্জল এবং পাঠযোগ্য ছিল।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘সহজ কথা লিখতে আমায় কহ যে সহজ কথা যায় না লেখা সহজে।’ সহজ কথায় লেখা সহজ না হলেও পীযূষ কান্তি বড়ুয়া সকল মানুষের জন্য সহজ করে লেখার নিরন্তর সাধনা চালিয়ে যাচ্ছে। তার সাধনা পূর্ণ হোক। পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিবাদন। আমি তার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি। শুধু চাঁদপুরবাসী নয়, সারাদেশের মানুষ তার সাহিত্য রস আস্বাদন করে এবং তার বই পাঠ করে তৃপ্তি লাভ করুক, এই কামনা করছি।

লেখক পরিচিতি : সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত; সাবেক জেলা প্রশাসক (২০১৫-২০১৮), চাঁদপুর। ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ জেলা ব্র্যান্ডিং-এর রূপকার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়