শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২১, ০০:০০

বিশ্ব জনসংখ্যা বিলুপ্তির পথে ?
অনলাইন ডেস্ক

হাজার হাজার বছরের দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম শেষে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০ কোটিতে উন্নীত হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে করতে একসময় পৃথিবীর জনসংখ্যা কয়েক হাজারে নেমে এসেছিলো। সেই মহাসঙ্কটকালে মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে সাহসের সাথে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলো।

একের পর এক বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও আবিষ্কার মানুষের বেঁচে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করে। মানুষ ক্ষুধা, ভয়, রোগ, শোক মোকাবিলা করে মানব সভ্যতার বিকাশে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে।

গোষ্ঠীগত স্বার্থে, সম্পদ রক্ষায়-অর্জনে, খুন-মারামারি, যুদ্ধ-বিগ্রহ আর মহামারীতে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বড়ো ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি করতে পারেনি। মাত্র ১৮৭ বছরের ব্যবধানে ১৯৮৭ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৫০০ কোটিতে উন্নীত হলো। জাতিসংঘ ১৯৮৭ সালে সাধারণ অধিবেশনে ৪৫/২১৬ রেজুলেশন মোতাবেক ১১ জুলাইকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান আর চিকিৎসায় নতুন নতুন আবিষ্কার মানুষের দীর্ঘ জীবন লাভে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করলো। পৃথিবীর জ্ঞানী-গুণী, শাসক-গবেষক, পণ্ডিত-অধ্যাপকবৃন্দ জনসংখ্যার মারাত্মক বিস্ফোরণে আঁতকে উঠলেন। কীভাবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে তা নিয়ে শুরু হলো গবেষণা-পরিকল্পনা। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো পৃথিবীতে শিশুর আগমন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পাঠ্যপুস্তকে লেখা হলো জনসংখ্যা বিস্ফোরণে মানবজাতির কত ভয়াবহ ক্ষতি হবে তার বিস্তারিত বিবরণ। রাষ্ট্রসমূহ সিদ্ধান্ত নিলো, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু হলো। জনসাধারণকে স্থায়ী বন্ধ্যাকরণে উৎসাহিত করতে নগদ টাকা, লুঙ্গি-শাড়ি উপহার দেয়া হলো। মানুষকে বুঝানো হলো, অতিরিক্ত সন্তান মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অভাব-অনটনে মা ও শিশু পুষ্টিহীনতার শিকার হয়। ফলে শিশু খর্বকায়, কম ওজন, অসুস্থ হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করে।

মূলত মানুষ অভাব-অনটনকে মোকাবিলা করতেই সন্তান জন্ম দিতেন। ভবিষ্যতে ভাত-কাপড়ের সঙ্কট মোকাবিলা করতে, শস্য উৎপাদনে, গৃহস্থালি কাজে সহায়তার কথা ভেবে সন্তান জন্ম দিতে চাইতেন। চারদিকে আওয়াজ উঠলো, দুটি সন্তানই যথেষ্ট।

শিশুর আগমন ঠেকাতে ১৯৭৯ সালে চীন এক সন্তান নীতি কঠোরভাবে চালু করে। ছেলেসন্তান নিশ্চিত করতে শুরু হয় ভ্রুণহত্যা। যেসব দম্পতি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একাধিক সন্তান জন্ম দিয়েছে তারা রাষ্ট্রের নিপীড়নের শিকার হয়েছে। নিপীড়নের ভয়ে দম্পতিরা একাধিক সন্তান নিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে ছেলে শিশু জন্মের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে চীনে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৪৯ লাখ বেশি ছিলো। বিপুলসংখ্যক যুবকের বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক যুবতী সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। চীনে ২০২০ সালে ১ কোটি ২০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় জন্মহার কমে যাচ্ছে।

বিশ্বে ১৯৭০ সালে নারী গড়ে সন্তান জন্ম দিতো ৪.৫ জন আর ২০১৫ সালে জন্ম দিয়েছে ২.৫ জন। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, থাইল্যান্ড, জার্মানি ও গ্রিসে জন্মহার আশংকাজনক ভাবে কমছে।

জাতিসংঘের মতে, পৃথিবীর জনসংখ্যা ২০২১ সালে ৭৯০ কোটি, ২০৩০ সালে ৮৫০ কোটি, ২০৫০ সালে ৯৭০ কোটি আর ২১০০ সালে হবে ১০৯০ কোটি।

সম্প্রতি বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত গবেষণা রিপোর্ট ল্যানচ্যাটে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর পৃথিবীর জনসংখ্যা আর বাড়বে না বরং কমতে থাকবে।

গবেষকরা বলছেন, ২০৬৪ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে ৯৭৩ কোটি আর ২১০০ সালে হবে ৮৭৯ কোটি।

পৃথিবীর প্রধান পাঁচটি জনবহুল দেশ হবে যথাক্রমে ভারত ১০৯ কোটি, নাইজেরিয়া ৭৯ কোটি, চীন ৭৩ কোটি, আমেরিকা ৩৩ কোটি, পাকিস্তান ২৪ কোটি।

২১০০ সালে প্রবীণ (৬৫+) জনসংখ্যা হবে ২৩৭ কোটি আর ২০ বছরের নিচে তরুণ জনসংখ্যা হবে ১৭০ কোটি।

বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, ২০২০ সালে জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ আর ২০২১ সালে ১৬ কোটি ৯১ লাখ। পার্থক্য মাত্র ৯ লাখ। জন্মহার ছিল যথাক্রমে ২০১৯ সালে ১.৩৩ শতাংশ, ২০২০ সালে ১.৩২ শতাংশ, ২০২১ সালে ১.৩০ শতাংশ। বাংলাদেশের জন্মহার ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের মধ্যে বিয়ের প্রতি অনাগ্রহ, সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে সন্তান জন্ম দেবার অনীহা, একটি সন্তান নেবার প্রবণতা, সন্তান লালন পালনের ঝামেলা, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার আগ্রহ ইত্যাদি কারণে জন্মহার কমে যাচ্ছে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা, তালাক, নির্যাতন, আতঙ্ক, বিশ্বাসহীনতা, সন্তানের দায়ভার গ্রহণ নারীকে সন্তান জন্মদানে নিরুৎসাহিত করছে।

বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য, চিকিৎসা, ওষুধপত্র, বাসস্থান, সেবা, সুপেয় পানি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। প্রবীণদের সেবা-যত্ন নিশ্চিত করতে বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য সেবা কর্মী লাগবে। ফলে কৃষি উৎপাদনে, কলকারখানায়, সেবা খাতে শ্রম ঘাটতি দেখা দিবে।

একদিন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে ব্যাপক কর্মসূচি বিশ^ হাতে নিয়েছিল। আজ আবার জনসংখ্যা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আনতে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

অন্যথায় একদিন পৃথিবী মানব শূন্য হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র : ল্যানচেট, জাতিসংঘ রিপোর্ট, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান।

লেখক : লেখক ও গবেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়