সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৬

অবস্থান হাইমচরে মেঘনার দুর্গম চর সৌদির বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের নামে মোবাইল হাসপাতাল কার্যক্রম উদ্বোধন

অবস্থান হাইমচরে মেঘনার দুর্গম চর সৌদির বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের নামে মোবাইল হাসপাতাল কার্যক্রম  উদ্বোধন
মো. মিজানুর রহমান ও মো. সাজ্জাদ হোসেন রনি

হাইমচর উপজেলার মেঘনার দুর্গম এলাকা মিয়ার চরে চলছে ভাসমান ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের মাধ্যমে চরাঞ্চলবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। একটি জাহাজে আধুনিক চিকিৎসা সম্বলিত সকল উপকরণ দিয়ে এই হাসপাতালটি বানানো হয়েছে। এটির নাম দেয়া হয়েছে সৌদির বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ মোবাইল হাসপাতাল বাংলাদেশ-৫ । বুধবার (৯ এপ্রিল ২০২৫) দুপুরে ভ্রাম্যমাণ এই হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে।

হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিমপাড়ের চরে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রকল্পের ভাসমান হাসপাতাল উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা সচিব মো. সাইদুর রহমান। এ সময় সচিব বলেন, নদীবেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় না। এ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই বাদশাহ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজের নামে ভ্রাম্যমাণ ভাসমান হাসপাতাল কার্যক্রম শুরু হয়। সব মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবা পায় পরিকল্পিতভাবে আমাদের কার্যক্রম সেভাবেই চলছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, বেসরকারি সংস্থা ফেন্ডশিপের প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান, কিং আব্দুল্লাহ হিউম্যানিটিরিয়ান ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলায়মান আব্দুল আজিজ আজ্জাবিন এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের স্পেশাল ও ট্রাস্ট ফান্ড বিভাগের পরিচালক আদিল এম. আলশারিফ। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএমসহ সৌদি সরকারের প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হাইমচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা নাজনীন তৃষা।

মেঘনা নদীবেষ্টিত হাইমচরের মিয়ার বাজার ও নীলকমল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, চরাঞ্চলের মানুষদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকিতে ফ্রেন্ডশীপ নামে সংস্থার মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রম পাঁচ বছর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে চলে যাবে। গত জানুয়ারি মাস থেকে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চলছে। তবে ৯ এপ্রিল থেকে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হলো। এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, এই চরে বেশিরভাগ রোগী টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারে না। এখন শহরে না গিয়ে চিকিৎসক সেবা নিতে পারছেন। দুর্গম চরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন চিকিৎসা সেবা পেয়ে তারা খুশি।

ফ্রেন্ডশীপ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান এবং এডমিন রেজাউল করিম জানান, হাসপাতালে ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ৩২ জন চিকিৎসক ও নার্সের সমন্বয়ে চিকিৎসা সেবা চলছে। প্রতিদিন ১৫০-২০০ রোগী এই ভাসমান হাসপাতালে চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছে।

ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান তাঁর বক্তব্যে জানান, তাদের পাঁচটি হাসপাতাল সমন্বিত এই প্রকল্পটি আগামী পাঁচ বছরে দক্ষিণ উপকূলীয়, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বের নদীবেষ্টিত ১২টি জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় ৩২.৭ লাখ মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই উপজেলাগুলো হলো বাকেরগঞ্জ, আমতলী, কলাপাড়া, জগন্নাথপুর, আজমিরিগঞ্জ, বেড়া, কুমারখালী, মলো, দাকোপ, হাইমচর, রামগতি, ভোলা সদর ও দৌলতখান।

চাঁদপুর জেলা সিভিল সার্জন নূর আল দ্বীন বলেন, ভবিষ্যতে সরকার তার নিজস্ব জনবল দিয়ে নিজস্ব তদারকিতে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্যেই এগুলো স্থাপন করা হয়েছে। আশা করি এ হাসপাতাল থেকে মানুষ তাদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, যতক্ষণ এই দুর্গম অঞ্চলের মানুষ সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা না পায় বা স্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে না উঠে, ততদিন ভাসমান ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালের কার্যক্রম চলমান থাকবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে যারা এতদিন মানসম্মত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, এই ভাসমান হাসপাতাল তাদের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন সুধী পর্যবেক্ষক মহল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়