বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ১১:২৪

বাবুরহাট-মতলব-ঢাকা ও চাঁদপুর-রায়পুর রুট

যাত্রীবাহী বাসের বেপরোয়া চলাচলে বলি হচ্ছে তাজা প্রাণ

অনুমোদনবিহীন সকল গাড়ি চলছে ম্যানেজ করে

সোহাঈদ খান জিয়া
যাত্রীবাহী বাসের বেপরোয়া চলাচলে বলি হচ্ছে তাজা প্রাণ

চাঁদপুরের সড়কগুলোতে প্রতিযোগিতা দিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে যাত্রীবাহী বাস। আর বলি হচ্ছে অনেক তরতাজা প্রাণ। চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে বিভিন্ন নামের যাত্রীবাহী বাস। এসব বাস সড়কে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে বেপরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে। কে কার আগে গিয়ে যাত্রী গাড়িতে উঠাবে সে প্রতিযোগিতা করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। এতে বলি হচ্ছে বহু তরতাজা প্রাণ। অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাসের চালক অদক্ষ, অযোগ্য এবং ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন। স্টিয়ারিং ধরতে পারলেই হেলপার থেকে ড্রাইভার বনে যায়। এদের কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসগুলো বেপরোয়াভাবে চলাচল করে থাকে। এর মধ্যে অনেক গাড়ির কাগজপত্রসহ রুট পারমিট নেই। অযোগ্য অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো হচ্ছে। অনেক গাড়ির অনুমোদন না থাকলেও তারা বিভিন্ন মহলকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে সড়কে চলাচল করছে।

বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই সড়কে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত মতলব এক্সপ্রেস, জৈনপুর এক্সপ্রেস ও জৈনপুর পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসগুলো এতোটা বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে থাকে, যাতে যাত্রীরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাদের বেপরোয়া গতির কারণে সম্প্রতি ৩টি তরতাজা প্রাণ বলি হয়েছে। আর আহত হয়েছে ১০ জন। বড়ো দুর্ঘটনা ছাড়া প্রতিদিন ছোটোখাটো দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সেখানে আহত হলেও গাড়িগুলো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলে যায়। গাড়ির স্টাফরা প্রায় সময় যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকে। এ রুটের অধিকাংশ বাসের নেই অনুমোদন, নেই কাগজপত্র, নেই নির্দিষ্ট বাস স্ট্যান্ড, নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। যার ফলে যেখানে সেখানে সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করে যানজটের সৃষ্টি করে থাকে। সড়কের উপরে টুল বসিয়ে টিকেট কাউন্টার বানিয়ে সড়ক দখল করে গাড়ি রেখে যাত্রী উঠানামা করানোটা নিত্যদিনের ঘটনা। এ রুটে বাসগুলো রুট পারমিট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া বেপরোয়াভাবে চলাচল করলেও প্রশাসন নীরবতা পালন করছে। বাস মালিকরা বিভিন্নজনকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে সড়কে দাবড়িয়ে চলছে। যার ফলে দুর্ঘটনা ঘটানোসহ সকল ঘটনাই মামুলি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা-মতলব-বাবুরহাট রুটে তিনটি পরিবহনের বাস যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে বাবুরহাটসহ মতলব- পেন্নাই সড়কে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূল সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে যাত্রী উঠানামা করে থাকে। ছোট গাড়িকে তারা কোনো সাইড দেয় না। লক্কর ঝক্কর কাগজপত্রবিহীন গাড়ি চলাচল করলেও এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বাবুরহাটে নির্দিষ্ট কোনো বাসস্ট্যান্ড না থাকায় সড়কের পাশে, শারমিন ফিলিং স্টেশন ও বিসিক শিল্পনগরীর সামনে রাস্তার পাশে সড়ক দখল করে বাসগুলো পার্কিং করে রাখে।

বাবুরহাটের প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বাসগুলো চলাচল করে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানায়। বিনিময়ে ওই মহল মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

অপরদিকে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়পুরগামী আনন্দ নামের যাত্রীবাহী বাসগুলোর অধিকাংশের রুট পারমিটসহ কাগজপত্র না থাকলেও বিভিন্ন স্থানে দৈনিক অর্থ দিয়ে চাঁদপুরে প্রবেশ করছে। এমনকি অনেক লক্কর ঝক্কর গাড়ি প্রবেশ করে থাকে। এ গাড়িগুলোর কাগজপত্র সঠিক না থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা ও জরিমানা করতে দেখা যায় না বললেই চলে। এ গাড়িগুলোও বেপরোয়াভাবে চালানো হয়ে থাকে। গাড়ির স্টাফরা যাত্রীদের সাথে ভাড়া নিয়ে খারাপ আচরণ করে থাকে। ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট হতে প্রায়শই হাফ ভাড়া নিতে চায় না, উল্টো খারাপ আচরণ করে।

আনন্দ পরিবহনের গাড়িগুলোর রায়পুর পর্যন্ত অনুমোদন। গাড়ির মালিকরা গাড়িপ্রতি বিভিন্ন স্থানে টাকা দিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রবেশ করে। পরবর্তীতে চাঁদপুর প্রবেশ করার জন্যে শ্রমিক ইউনিয়নসহ বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে চাঁদপুর থেকে চলাচল শুরু করে। কিন্তু এ সকল গাড়ির অধিকাংশই কাগজপত্রবিহীন।

একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর রুটে চলাচলকারী ও বাবুরহাট-মতলব-ঢাকা রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলোর মধ্যে অনেক গাড়ি রাজধানী সহ বড়ো বড়ো শহরে চলাচল করতো। কিন্তু গাড়ির কাগজপত্র মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ার কারণে গাড়িগুলো জেলা পর্যায়ে এনে টাকার বিনিময়ে চালানো হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাবুরহাট থেকে ঢাকাগামী জসিম, হাবিব, আলমগীর, রাজু, নামের যাত্রী বলেন, বাবুরহাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাসগুলো চালক বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে থাকে। এদের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সরু ও অধিক বাঁকসম্পন্ন সড়ক দিয়ে এভাবে চালানো ঠিক নয়। যাত্রীরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালানোর জন্যে বললেও চালকরা কারো কথায় কর্ণপাত করে না। নিজেদের মনমতো যেভাবে পারছে সেভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। আনন্দ পরিবহনের গাড়িগুলোও বেপরোয়াভাবে চালিয়ে থাকে। সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করে থাকে।

চাঁদপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. বাবুল মিজি বলেন, বাবুরহাট থেকে ঢাকায় চলাচলকারী বাসের অনুমোদনের কাগজ এসপি স্যারের কাছে দেয়া আছে।

আনন্দ পরিবহনের কিছু গাড়ির মডেল পরিবর্তন করায় তাদের অনুমোদন নেই।

চাঁদপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের টিআই মাহফুজ মিয়া বলেন, আনন্দ বাসের অনুমোদন আছে বলে তারা চাঁদপুর টার্মিনাল পর্যন্ত আসে। বাবুরহাট-মতলব-ঢাকা রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাসগুলোর অনুমোদন নেই বলে চাঁদপুর টার্মিনাল পর্যন্ত আসতে পারে না। বাবুরহাটে আমরা সেনাবাহিনীসহ যৌথ অভিযান করেছি। মতলবেও আমাদের অভিযান হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

চাঁদপুর বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহর পর্যন্ত উল্লেখিত বাসগুলোর সব ক’টির রুট পারমিট নেই। চাঁদপুরে প্রবেশ করার জন্যে ১০টি গাড়ির অনুমোদন রয়েছে। বাকিগুলো প্রবেশের অনুমোদন নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়