সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৩২

হাজীগঞ্জে ওড়পুরের শরীফ আতঙ্কে তটস্থ গ্রামবাসী

হাজীগঞ্জ ব্যুরো
হাজীগঞ্জে ওড়পুরের শরীফ  আতঙ্কে তটস্থ গ্রামবাসী

হাজীগঞ্জের কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের ওড়পুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম প্রকাশ্যে শরীফ আতঙ্কে তটস্থ গ্রামবাসী। তবে এলাকায় তিনি উশৃঙ্খল শরিফ নামে বেশি পরিচিত। শরীফ সব বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন, তার মোটা গলা, তাই তার কথা অন্যদের কাছে এমন মনে হয়। এলাকাবাসী, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান কিংবা থানার ওসি শরীফের বেপরোয়া চলার বিষয়ে কথা বলেছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দেড় লাখ ও ভেকু জসিম নামের অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন শরীফ। এলাকার আরো দুই ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন। তিনি মানুষের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়ায় জড়ান। এতে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে তেড়ে আসেন এবং মারধর করেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস না পেলেও সম্প্রতি ইউপি সদস্যের সাথে শরিফের বিবাদের জেরে স্থানীয়রা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

শরীফের ভয়ে অধিকাংশজন কথা বলতে আতঙ্কবোধ করেন, তারপরও বেশ কয়েকজন স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছেন গণমাধ্যমের কাছে। শরীফের আপন চাচা বয়োবৃদ্ধ জাকির হোসেন জানান, সে শুধু গায়ে পড়ে ঝগড়া-বিবাদ করে। এ পর্যন্ত আমাকে কতোবার মারধর করেছে, তার হিসেব নেই। কিছুদিন আগে আমার ছেলেকে পানিয়ে চুবিয়ে (ডুবিয়ে) মারতে গেছে, কিন্তু লোকজনের কারণে মারতে পারেনি। আমরা তার কাছে অসহায়। কেউ তার ভয়ে মুখ খোলে না। স্থানীয় জসিম ভুইয়া জানান, সে (শরিফ) মানুষকে ধরে ধরে মারে। মানুষকে মানুষ মনে করে না। কথায় কথায় দা, কোদাল (দেশীয় অস্ত্র) নিয়ে তেড়ে এসে মারধর করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগায়। আকবর হোসেন নামের আরেকজন জানান, শরীফ মানুষের প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে, চাঁদাবাজি করে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে সে তাকে একা কিংবা নিরিবিলি পেলে ধরে বসে। যার কারণে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। আপনাদের (সংবাদকর্মী) কাছে বক্তব্য দেওয়ার কারণে আমিই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেছি। পারভেজ নামের অপর এক ব্যক্তি জানান, শরীফ ইচ্ছেকৃতভাবে মানুষের সাথে ঝগড়া করে। কথায় কথায় মানুষকে গালাগাল দেয় ও মারধর করে। বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সে ভালো লোক নয়। তার বিরুদ্ধে যে কথা বলবে, তাকেই সে সাইজ করে দিবে। এখন আমি আপনাদের (সংবাদকর্মী) কাছে বক্তব্য দিয়ে মনে হয় বিপদে পড়ে গেছি। সেলিম হোসেন নামের এক ব্যক্তি জানান, শরীফ ইচ্ছেকৃতভাবে তার ১৫/২০টা গরু ছেড়ে দেয় এবং সেই গরুগুলো মানুষের গাছ-গাছালি ও ফসল খেয়ে ফেলে। এতে আমার ৩০ হাজার টাকা ক্ষতি করেছে। আমি প্রতিবাদ করার কারণে সে আমাকে গালাগাল দেয় এবং মারতে আসে। আমি তার সাথে শক্তিতে পারবো না বলে মেম্বারকে জানিয়েছি।

হাদিস নামের এক দোকানী জানান, তার দোকানে চার বছর ধরে বাকি খাচ্ছিল শরীফ। কিন্তু টাকা দেয় না। বাকি দেয়া বন্ধ করার কারণে শরীফ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গালাগাল দেন ও মারধর করতে আসেন। দোকানী হাদিস আরো জানান, তার ভাই পারভেজ ও চাচা মাসুদের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শরীফ। বৃদ্ধ আবুল বাসার ভুইয়া জানান, বিদ্যালয় মাঠে খেলার একটি বিষয় নিয়ে শরীফ গায়ে পড়ে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন এবং তাকে মারধর করার জন্যে তেড়ে আসেন। তাই আমরা আমাদের নিরাপত্তার জন্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি কামনা করছি।

দেড় লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে অভিযুক্ত শরীফ জানান, আওয়ামী লীগের আমলে আমি ক্ষতির শিকার হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমার কাছ থেকে ঐ সময়ে টাকা নিয়েছে, ৫ আগস্টের পর আমি আবার সেই টাকা ফেরৎ নিয়েছি এটুকুই। তাছাড়া ওই সময়ে আমার বাড়ি-ঘরে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। যারা এসব কাজ করেছে, আমি তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়েছি।

অপর অভিযোগগুলো অস্বীকার করে এবং এক প্রশ্নের জবাবে শরীফ হোসেন বলেন, দলে আমার পদ নেই। তবে আমি বিএনপি করি এবং আমি প্রতিবাদী। আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় করি না। যার কারণে কোথাও অন্যায় দেখলে আমি প্রতিবাদ করে থাকি। আমি কোনো হারাম কাজের সাথে জড়িত নই । তাছাড়া আমি এমনিতেই দরাজ গলায় কথা বলি (কণ্ঠস্বর চড়া)। তাই অনেকে মনে করে, আমি ঝগড়া-বিবাদ করে থাকি। ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শরীফ বলেন, তার সাথে আমার সমস্যা হয়েছে। এই সমস্যার কারণে সে (ইউপি সদস্য) এলাকার লোকজনকে আমার বিরুদ্ধে লাগিয়েছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশিদ বলেন, তার (শরীফ) বিরুদ্ধে লোকজন অহরহ অভিযোগ নিয়ে আসেন। সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে কিছু বিষয় সমাধান করে দিয়েছি, আবার কিছু করতে পারি নি। কারণ, সে বেপরোয়া টাইপের। ডাক-দোহাই (নিষেধ করলে) দিলে শুনে না এবং মানে না। আর এই ডাক-দোহাইয়ের কারণে সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছেন। কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, শরীফ উশৃঙ্খল টাইপের। দলে তার কোনো পদ-পদবি নেই। হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, কিছুদিন পূর্বে শরীফ একটি বিষয়ে মুচলেকা দিয়ে গেছে। এখন আবার তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ শুনেছি, বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়