প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আজ আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী (রহঃ)-এর ১০তম শাহাদাতবার্ষিকী
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শহীদ আল্লামা ফারুকী (রহঃ) সুন্নিয়তের সুবাস ছড়িয়েছেন
শহীদ আল্লামা নূরুল ইসলাম ফারুকী [রাহমাতুল্লাহি আলাইহি] ছিলেন সৎ-সাহসী, ন্যায়পরায়ণ, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্বশীল এবং রাসূলপ্রেমে সিক্ত এক বিদগ্ধ আলেমে দ্বীন। তিনি ছিলেন নবী কারীম হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এঁর একজন প্রকৃত আশেক। অপরদিকে তিনি ছিলেন দুশমনে রাসূলদের জন্য চরম বিভীষিকা। সুন্নীয়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে তিনি তাঁর অবস্থান মজবুত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সুন্নীয়তের পক্ষে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। ন্যায় এবং সত্য কথা বলতে কখনো তিনি ভয় পেতেন না। তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল অপরিসীম। প্রতি বছর ১২ই রবিউল আওয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে নাত মাহফিল, আলোচনা ছিল ছিল লক্ষ্যণীয়।
মিডিয়া জগতে যখন বাতেল ফের্কা : মিডিয়া জগতে যখন বাতেল ফের্কার ঘোমটা মৌ-লোভীগুলো সাধারণ মুসলমানকে গোমরাহির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি ইসলামের সঠিক ইতিহাস এবং কুরআন-হাদিসের সঠিক ব্যাখা তুলে ধরে তাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করে ইসলামের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস এবং নবী-রাসূল ও সাহাবাগণের মাজার এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ইতিহাস কুরআন-হাদিসের আলোকে তাঁর কাফেলা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মিডিয়ায় তুলে ধরতেন। তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুন্নিয়তের সুবাস ছড়িয়েছেন।
জন্ম : শহীদ নূরুল ইসলাম ফারুকী ২৪ নভেম্বর ১৯৫৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বড়শশী ইউনিয়নের নাউতারী নবাবগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জামসেদ আলী ছিলেন একজন গুণী আলেম। তিনি এমন একজন সুন্নিয়তের বীর সৈনিক ছিলেন, যিনি লাখো কোটি সুন্নি মুসলমানের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন।
আল্লামা নুরুল ইসলাম ফারুকী (রা:) সারাদেশে ওয়াজ মাহফিল করতেন, সুন্নিয়াতের খেদমত করতেন। সুন্নিয়াতের পক্ষে যুক্তিযুক্ত প্রামাণ্য দলিল উপস্থাপন করতেন। তাঁর মতো সাহসী কথা বলার মতো আলেম সুন্নিদের মধ্যে খুবই কম ছিলো।
শিক্ষা জীবন : শহীদ আল্লামা শায়খ নুরুল ইসলাম ফারুকী তাঁর নিজ গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে নীলফামারী জেলার ডোমার থানার অন্তর্গত চিলাহাটি জামিউল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরবর্তীতে একই মাদরাসা থেকে আলিম পাস করেন। ১৯৭৯ সালে প্রাচীনতম ঐতিহাসিক ছারছীনা দারুসসুন্নাত কামিল মাদরাসা থেকে আলিম ও কামিল (হাদিস বিভাগ) ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৮১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে জগন্নাথ কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে স্নাতক করেন। তাঁর জ্ঞান ও মেধার প্রখরতা এমন ছিল যে তিনি ছাত্রজীবন থেকে লেখালেখি, বক্তৃতা এবং কোরআন তেলাওয়াতে প্রথম স্থান অধিকার করতেন।
দায়িত্ব পালন : তিনি ছারছীনা শরীফের মুবাল্লেগ ও বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রথমে পুরান ঢাকার রায়সাহেবের বাজার জামে মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কিছুদিন পর ঢাকা কেরানীগঞ্জের নূরানীয়া চিশতীয়া আলীয়া মাদরাসার প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৮৯ সালে প্রথম হজ গমনের উদ্দেশে মক্কায় যান। সে বছর জেদ্দা বিমানবন্দর মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান।
শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকী মক্কা মোয়াজ্জামায় আল্লামা সায়েদ মোহাম্মদ মালিকি আলাদি (রাঃ) রওজায় ১০বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন সেখানে কাটিয়ে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন মসজিদে ৩৩ বছর ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। আবার ছারছীনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (রাঃ) মাজারে খেদমত করেন।