প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
![ফরিদগঞ্জে পিতার সম্পত্তির ওয়ারিশ চায় বঞ্চিত পুত্র-কন্যারা](/assets/news_photos/2023/02/01/image-29086.jpg)
অসুস্থ পিতাকে সেবা শুশ্রƒষার সুযোগে পিতার কাছ থেকে হেবা মূলে এক ছেলে সম্পত্তির এক বড় অংশের মালিক হয়ে যায়। এতে বঞ্চিত হয় পিতার অন্য ছেলে ও দুই মেয়ে। অসুস্থ পিতা সুস্থ হয়ে রাগ-ক্ষোভে বড় মেয়ের কাছে চলে যান। সেখানে থাকাকালীন মৃত্যুবরণ করলেও মৃত্যুর পূর্বে বড় পুত্রের কারণে অন্য ছেলেমেয়েরা বঞ্চিত হওয়ার কথা জানিয়ে যান। পিতার মৃত্যুর পর জানাজার পূর্বে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানানো হয়। চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে সকল ভাই-বোন সম্পত্তির সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে রাজি হয়। কিন্তু সেই বিরোধ নিষ্পত্তি আজও হয়নি। বরং দুই ভাইয়ের পরিবার নিজেরা মামলায় জড়িয়ে পড়েছে। বড় ভাইয়ের পরিবার আদালতের মাধ্যমে এর সমাধানের পক্ষে থাকলেও অপর ভাই-বোনেরা মানবিক দিক বিবেচনা করে পিতার সম্পত্তির নৈতিক ওয়ারিশ দাবি করেছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামের।
জানা গেছে, ধানুয়া গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির সাবেক সরকারি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ ৫৫শতক জমি ক্রয় করে সেখানে আধাপাকা ঘর নির্মাণ করেন। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের সংসার ছিল। বড় ছেলে মোস্তফা পাটওয়ারী ও ছোট ছেলে মর্তুজা পাটওয়ারী ওই বসত ঘরে বসবাস করতেন। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে আলেয়াকে কুমিল্লা ও ছোট মেয়ে সাফিয়াকে চাঁদপুর সদরে বিয়ে দেন। বয়সজনিত কারণে হারুনুর রশিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ছেলের পরিবারের সদস্যরা সেবা শুশ্রƒষা করেন। সেবা শুশ্রƒষার সুযোগে ২০১৮ সালে এবং পরবর্তী কয়েক দফায় হারুনুর রশিদ বড় ছেলেকে ৪২ শতক জমি হেবা মূলে দলিল করে দেন। বিষয়টি পরবর্তীতে তিনি বুঝতে পেরে অনুশোচনায় ভোগার এক পর্যায়ে বড় মেয়ের বাসায় চলে যান। সেখানেই আবারো অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পূর্বে হারুনুর রশিদ বড় মেয়ে ও তার জামাতার কাছে হেবার বিষয়টি জানিয়ে তার ভুল ছিল বলে জানান বলে দাবি করেন ছোট মেয়ে সাফিয়া বেগম। জমির শোকে পিতার মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি সাফিয়ার। পিতার মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে ১২দিনের মাথায় মা মারা যান।
সাফিয়া বেগমের স্বামী আজম খান জানান, তার শ্বশুর একদিন হঠাৎ করেই ২০২২ সালে জুন মাসে নিখোঁজ হন। পরে ওইদিন রাতে তারা জানতে পারেন তিনি কাউকে কিছু না বলে কুমিল্লায় বড় মেয়ের বাসায় চলে যান। সেখানেই তিনি জানান, বড় ছেলে ও তার পুত্রবধূ তার কাছ থেকে কৌশলে হেবা করে তিনবারে ৪২ শতক জমি নিয়ে গেছে। পরবর্তীতে শ্বশুরের জানাজার সময়ে বিষয়টি উত্থাপিত হয়। সেখানে চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় সম্পত্তি নিয়ে হারুনুর রশিদের বড় ছেলে অন্য ভাই-বোনদের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তিতে রাজি হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে তার শাশুড়ি মারা যান। কিন্তু সম্পত্তি সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে বড় ছেলে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন নি।
ছোট মেয়ে সাফিয়া বেগম জানান, তারা বার বার বড় ভাইয়ের সাথে সম্পত্তির ঝামেলা নিয়ে বসতে চেয়েছেন। কিন্তু সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, আমরা সম্পত্তি বঞ্চিত ভাই-বোনেরা পিতার ওয়ারিশ অনুযায়ী ন্যায্য হিস্যা চাই। এটা আমাদের মানবিক আবেদন। আশা করছি আদালতসহ সকলে আমাদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিবেন।
ছোট ভাই মর্তুজার স্ত্রী নাজনিন বেগম জানান, তার অনুপস্থিতির সুযোগে তার বড় জা শ্বশুরের দেখভালের সুযোগে ভাসুরকে দিয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান আদালতে ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু তার ভাসুর উপস্থিত না হওয়ায় সমাধান হচ্ছে না।
অন্যদিকে মোস্তফা পাটওয়ারীর স্ত্রী রেহানা পারভীন জানান, তারা তাদের সম্পত্তির অবৈধ দখল মুক্ত করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। সম্পত্তি নিয়ে আদালত যেই সিদ্ধান্ত দিবে তা তারা মেনে নিবেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোঃ শাহ আলম বলেন, হেবা মূলে হারুনুর রশিদের সম্পত্তির বড় অংশের মালিক মোস্তফা পাটওয়ারী-এটা সত্য। তবে ভাই ও বোনদের পিতার ওয়ারিশ থেকে বঞ্চিত করা অমানবিক। আমি হারুনুর রশিদের জানাজায় সকল পক্ষকে রাজি করিয়ে ছিলাম। পরবর্তীতে আমার আদালতে ছোট ছেলে মর্তুজা পাটওয়ারী লিখিত অভিযোগ করায় আমি সমাধানের জন্য বড় ছেলে মোস্তফাকে আসার জন্য বললেও সে আসে নি।