প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
শাহরাস্তি উপজেলার প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত উপলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শত বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে বিদ্যালয়টি। ১৯৩৩ সালে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। মেহের উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার বলিষ্ঠ পরিচালনায় প্রতিদিন বেজে ওঠে স্কুলের ঘণ্টা। প্রতিদিন সকালে স্কুল ড্রেস পরে শতভাগ শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়। সকাল ৯টায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়। সমাবেশে মুসলিম ও হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ পাঠের পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করা হয়। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুদীপা মূৎসুদ্ধি বৌদ্ধধর্মের পবিত্র গ্রন্থ পাঠ করে থাকে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ৪ শিক্ষার্থীসহ ৮ জন শিক্ষিকার পরিচালনায় পাঠদান চলছে। স্কুলটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী কাজল রাণী চক্রবর্তী ২০১১ সালে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টির পাশেই তার বাড়ি। ছোটবেলায় যে প্রতিষ্ঠানে হাতেখড়ি হয়েছিলো আজ সেই প্রতিষ্ঠানের চাবিই তার হাতে। এলাকার মেয়ে হিসেবে দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা চিন্তা করে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ছাড়াও শ্রাবন্তী চক্রবর্তী, শুভ্রা চক্রবর্তী, সালমা আক্তার নিজ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেয়ে খুশি। তাদের সাথে সমানতালে আলো ভট্টাচার্য, উম্মে হাওয়া, তানজিনা আক্তার, নাসরিন আক্তার নিজের সন্তানের মতো করেই তাঁরা শিক্ষার হাত প্রসারিত করেছেন। অভিভাবক মহল তাদের হাতে সন্তানদের তুলে দিয়ে অনেকটাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন।
শিশু শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষগুলো রয়েছে পরিপাটি। শিশুদের জন্যে রয়েছে খেলনাসামগ্রী, দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে শিক্ষণীয় বিভিন্ন চিত্র। রয়েছে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য। এছাড়া স্কুলটির শ্রেণীকক্ষের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতার ছবি, জাতীয় ৪ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা চিত্র।
বিদ্যালয়টির লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রীড়ায় রয়েছে ব্যাপক সাফল্য। ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়। ২০১১ সাল থেকে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজে ধারাবাহিকভাবে এ বিদ্যালয় প্রথম স্থান অর্জন করে। ২০২২ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলায় হয় চ্যাম্পিয়ন। এছাড়াও দুবার আন্তঃক্রীড়া প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে।
এ গ্রেডের বিদ্যালয়টি থেকে ২০১৯ সালে একজন ট্যালেন্টপুলে ও ৬ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে।
কাব ইউনিট লিডার শ্রাবন্তী চক্রবর্তীর পরিচালনায় বিদ্যালয়ে নিয়মিত কাব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি বছর দীক্ষা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও কাব ব্যাজ প্রদান অনুষ্ঠান, কাব ওন অনুষ্ঠান নিয়মিত হয়ে থাকে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্কাউটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাব সোনামণিরা অংশগ্রহণ করে থাকে।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সাথে রয়েছে শিক্ষক-অভিভাবক মহলের আন্তরিক সম্পর্ক। যে কোনো কাজে বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়ান সভাপতি আঃ মান্নান বেপারী। প্রধান শিক্ষিকা কাজল রাণী চক্রবর্তী জানান, বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে পাশে থাকেন সভাপতি। যে কোনো সমস্যায় এগিয়ে আসেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। ৩শ’ ৫২ জন শিক্ষার্থী যাতে নিরাপদে পাঠদান করতে পারে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি থাকে সদস্যদেরও।