প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৯
হাজীগঞ্জে ২ শিশুর ধস্তাধস্তিতে প্রাণ গেলো একজনের

দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে শিশু শাহাদাত হোসেন আর রিযাদ হোসেন। দুজনের বয়স ৮ বছর, বাড়িতে সারাক্ষণ একে অপরের খেলার সাথী। বাড়ির সামনের টং দোকান থেকে একজন কিছু কিনলে আরেক জনকে রেখে খায় না, স্কুলে যায় এক সাথে, আবার আসে একসাথে, ক্লাসে বসেও পাশাপাশি, বাড়ির পুকুরে সাঁতার কাটে একসাথে। রাতে আলাদা ঘুমানো ছাড়া সবই বলা চলে একত্রে করে তারা। এমনকি ভোর বেলা বাড়ির সামনের মক্তব্যে পড়তে যায় একত্রে, ফিরে একত্রে। দুজনের সবই ষোলআনা ঠিকঠাক ছিলো। বিধিবাম, বিপত্তি ঘটে একটু ধস্তাধস্তিতে। এতে একজন (শাহাদাত) চিরদিনের জন্যে দুনিয়া ছাড়বে কে জানে? এ ঘটনায় জীবিত রিয়াদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) শাহাদাত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। একইদিন ভোরে ধস্তাধস্তির ঘটনাটি ঘটে হাজীগঞ্জের ৭ নং বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের নাটেহরা গ্রামের বশির মেম্বার বাড়িতে। নিহত শাহাদাত এ বাড়ির টিটু মিয়ার ছেলে ও রিয়াদ পাশের ঘরের শিপন হোসেনের ছেলে। তারা উভয়ে বাড়ির সম্পর্কে মামা-ভাগিনা। বুধবার (৫ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২৫) দুপুরে সরজমিনে বশির মেম্বার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির উঠানের পশ্চিম পাশে একটি স্টিলের খাটিয়াতে চাদর দিয়ে শাহাদাতের মরদেহ ঢেকে রাখা হয়েছে। আরেক পাশে হাজীগঞ্জ থানার একদল পু্লিশ আইনী প্রক্রিয়ার কাজ করছেন। পুরো বাড়ি লোকে লোকারণ্য, আর নিহতের ঘরে চলছে মা-বাবাসহ নিকটাত্মীয়দের গগনবিদারী আর্তনাদ। এ সময় বাড়ির অন্যরা জানান, গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকালে শাহাদাত আর রিয়াদ বাড়ির সামনের মক্তবে আরবী পড়তে যায়। মক্তব ছুটি হওয়ার পরে দুজনে দুষ্টামির ছলে ধস্তাধস্তি করে। এ সময় শাহাদাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিক সবাই ধরাধরি করে শাহাদাতকে প্রথমে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখান থেকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও সর্বশেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে নয়টায় মারা যায় শাহাদাত। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাড়পত্রে হার্ট ফেইলিউর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে ঘরের সামনে পাকা সিঁড়িতে দেখা মিলে রিযাদের। এ সময় তার চোখেমুখে স্পষ্টত আতঙ্কের ছাপ দেখে আর কোনো কিছু বলা সম্ভব হয়নি। নিহতের দাদী রিনা বেগম (৫৫) জানান, আমার নাতি আল্লাহর ডাকে চলে গেছে। আর দুজনেই অনেক ছোট, কী অভিযোগ দেবো? হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উভয় পরিবারের কোনো রকম অভিযোগ না থাকায় লিখিত নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হবে।