প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:১৮
ঢাকায় উত্তাল প্রতিবাদ, ‘বুলডোজার মিছিলের’ ডাক
আজ রাতে কী ঘটতে যাচ্ছে?
ছয় মাস আগে বাংলাদেশে সংঘটিত ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করে আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় ছাত্রসমাজের উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ভাষণকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, যা বাস্তব আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বুলডোজার মিছিল’ আহ্বান করা হয়েছে, বিশেষত ধানমন্ডি ৩২-এ এই মিছিলের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড়: ফেসবুক, টুইটার ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ও ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’-র পক্ষ থেকে মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, শেখ হাসিনার ভাষণ দেশের জনগণের প্রতি আরেকটি রাজনৈতিক অপমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে লিখেছেন—
"হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।"
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ লিখেছেন—
"আজ ৫ ফেব্রুয়ারি, ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ এর ছয় মাস পূর্ণ হলো। এই দিনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা প্রকাশ্যে আসার ঘোষণা দিয়েছে। এখন সময় এসেছে আমাদের জেগে ওঠার। আসুন, ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটাই।"
ধানমন্ডি ৩২-এ ‘বুলডোজার মিছিল’:ধানমন্ডি ৩২-এর দিকে বুলডোজার মিছিলের ডাক দিয়েছে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সংগঠন। ফেসবুকে অনেকে মন্তব্য করেছেন, এই স্থানে গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের স্মৃতি চিরতরে মুছে ফেলার সময় এসেছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব ডা. মাহমুদা মিতু লিখেছেন—
"আজকে যদি ৩২ শেষ না হয়, তাহলে আমিই সব গুলারে চুড়ি কিনে দেবো! ৩৬ বা ৩২, আজ ফয়সালা হবে।"
একই সংগঠনের নেতা রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন—
"ধানমন্ডি ৩২-এর নাম বদলে ‘ফ্যাসিস্ট চত্বর’ ঘোষণা করা উচিত, যেন মানুষ আজীবন এ স্থানকে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে দেখে।"
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন—
"৩২-এর সঙ্গে সঙ্গে সমাধি সৌধটাও হিসেবের মধ্যে রাখুন। ৬ মাসে একটা, এক বছরে আরেকটা। মুখ খুললেই বুলডোজার।"
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের’ ভিডিও প্রদর্শনী:বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায়, আজ রাত ৯টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর ভিডিও, ছবি ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে।
সংগঠনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়—
"ঢাকা শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, বাজার ও জনবহুল স্থানে আমরা ‘জুলাই গণহত্যার’ চিত্র তুলে ধরবো। সব টিভি চ্যানেলের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে, তারা যেন এই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বিশেষ বুলেটিন প্রচার করে।"
প্রশ্ন উঠছে— কী ঘটতে যাচ্ছে আজ রাতে? শেখ হাসিনার ভাষণের ঘোষণার পর গণমানুষের ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আজ রাতের পরিস্থিতি নতুন রাজনৈতিক মোড় নিতে পারে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীদের জমায়েত হতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিক্ষোভ রাতের মধ্যেই বড় ধরনের সংঘর্ষের দিকে যেতে পারে।
আসন্ন পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে শঙ্কা: ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী পদক্ষেপ নেবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে, কিন্তু ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আপসহীন থাকবে।
ভবিষ্যৎ রাজনীতির মোড় ঘোরানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন একটাই— আজ রাতে কী ঘটতে যাচ্ছে?
ডিসিকে/এমজেডএইচ