বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২১, ০০:০০

চাঁদপুর শহরে চাঞ্চল্যকর রেহান মিজি হত্যাকান্ড : খুনি গ্রেফতার

জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে রেহানকে খুন করা হয় : পুলিশ সুপার

আবু সাঈদ কাউসার ও মিজানুর রহমান ॥
চাঁদপুর শহরে চাঞ্চল্যকর রেহান মিজি হত্যাকান্ড : খুনি গ্রেফতার

চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাক রোড এলাকায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ হত্যাকা-ের একমাত্র খুনি খোরশেদ আলম (২৭)কে ৩০ জুন গভীর রাতে শহরের প্রফেসরপাড়ার সাধন গাজীর মেস হতে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে খোরশেদ আলমের স্বীকারোক্তি এবং তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ খুনের বিভিন্ন আলামতও উদ্ধার করে। এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে এবং পুলিশ ৭ দিনের মধ্যেই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করে।

গতকাল ১ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে প্রেস ব্রিফিং করে এ তথ্য জানানো হয়। পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ এ প্রেস ব্রিফিং করেন। জানা যায়, আসামী খোরশেদ আলম একজন পেশাদার জুয়াড়ি। পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার শেফালী পাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফা ভূঁইয়ার ছেলে সে।

পুলিশ সুপার জানান, আমরা রেহান উদ্দিন মিজির দ্বিতীয় স্ত্রীর সূত্র ধরে আসামীকে ধরতে পেরেছি। রেহান উদ্দিন মিজির দ্বিতীয় স্ত্রী হাইমচরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঘটনার দিন (২৩ জুন) সকাল থেকে তার কাছে একটি নাম্বার থেকে বার বার ফোন যাচ্ছিল। তিনি ফোন রিসিভ করলে তাকে হাইমচর থেকে চাঁদপুর সদরে আসার জন্য বলা হয়। ঐ কলের সূত্র ধরেই আমরা এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছি। ওইদিন রেহান মিজির দ্বিতীয় স্ত্রীর মোবাইলে আসামী খোরশেদ আলমই বার বার ফোন করছিল। কিন্তু সে তার নিজের মোবাইল থেকে কল দেয়নি। অন্য আরেকজনের মোবাইল ফোন থেকে কল দিয়েছিল। তাদেরকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম।

পুলিশ সুপার জানান, পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং ওই বাড়ির (তামান্না শারমিন ভিলা) ভিডিও ফুটেজের ছবি দেখে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রেহান উদ্দিন মিজি হত্যাকা-ের খুনি খোরশেদকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বিষয়টি আরো কনফার্ম হওয়ার জন্যে আসামী খোরশেদ যাদের মোবাইলে রেহান মিজির দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কথা বলেছে তাদেরকে মুখোমুখি করে দেখালে তারা খোরশেদকে শনাক্ত করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, জুয়া খেলায় হেরে যাওয়ার ক্ষোভ থেকেই রেহান উদ্দিন মিজিকে ধারালো লোহার দা দিয়ে মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে হত্যা করে আসামী খোরশেদ আলম। পরে আমরা অনুসন্ধানের মাধ্যমে পলাতক খোরশেদ আলমকে প্রফেসরপাড়াস্থ সাধন গাজীর মেস থেকে গ্রেফতার করি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আসামীর দেয়া তথ্য মতে আমরা খুনে ব্যবহৃত দা, নিহত ব্যক্তির রক্তমাখা লুঙ্গি, ১টি গেঞ্জি, তাস, ১টি লাইটার, বেনসন সিগারেটের প্যাকেট ও ১টি নীল রঙ্গের মাস্ক আলামত হিসেবে উদ্ধার করেছি। গ্রেফতারকৃত আসামী খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে পূর্বেও ২টি গরু চুরির মামলা রয়েছে। আমরা তাকে বিকেলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে প্রেরণ করবো।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামী খোরশেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, রেহান উদ্দিন মিজি তার পূর্ব পরিচিত। তারা একসাথে বিভিন্ন জায়গায় জুয়া খেলত। গত ২২ জুন খোরশেদ আলম রেহান উদ্দিন মিজির বাসায় জুয়া খেলবে বলে প্রস্তাব দেয়। এরই প্রেক্ষিতে রেহান উদ্দিন মিজি (৫৫) রাজী হয়। ২৩ জুন বেলা আড়াইটায় খোরশেদ আলম (২৭) খুন করার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে ওয়্যারলেছ মোড়ে গিয়ে গাড়ির গ্যারেজের মিস্ত্রী জনৈক মোঃ রফিকুল ইসলামের (৩৩) ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে রেহান উদ্দিন মিজিকে ফোন দেয়। এরপর খোরশেদ ও রেহান উদ্দিন মিজি নিউ ট্রাক রোডস্থ বটতলা মোড় এলাকায় এসে একত্রিত হয়।

বটতলা মোড় হতে রেহান উদ্দিন মিজি ও খোরশেদ আলম একসঙ্গে রেহান মিজির খান বাড়ি সড়কের তামান্না শারমিন ভিলার বাসায় যায়। পরবর্তীতে আসামীর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রেহান মিজির ঘরে থাকা ধারালো লোহার দা দিয়ে রেহান মিজির মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করা হয়। খুনি আলামত নষ্ট করার জন্য ঘরে থাকা জুয়া খেলার তাস, রক্তমাখা কাপড় নিয়ে তামান্না ভিলা হতে বের হয়ে আলামতসমূহ বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে চাঁদপুর-কুমিল্লা রেললাইন সংলগ্ন জঙ্গলে ফেলে দিয়ে নিজ বাড়ি লক্ষ্মীপুরে পালিয়ে যায়।

এদিকে খোরশেদ আলম ৩০ জুন চাঁদপুর শহরে ফিরে আসে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চাঁদপুর শহরের প্রফেসারপাড়া সাধন গাজীর মেস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামী খোরশেদকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ১ জুলাই বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ মা ও শিশু হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে চাঁদপুর-কুমিল্লা রেললাইনের দক্ষিণ পাশে জঙ্গল থেকে তার দেখানো রেহান মিজির ব্যবহৃত একটি লুঙ্গি, একটি গেঞ্জি, তাস, একটি লাইটার, বেনসন সিগারেটের প্যাকেট ও আসামীর ব্যবহৃত একটি নীল রঙের মাস্ক উদ্ধার করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আসিফ মহিউদ্দিন, ডিআইও-১ তোতা মিয়া, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশীদসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

উল্লেখ্য, ২৩ জুন বিকেলে চাঁদপুর শহরের নিউ ট্রাকরোড খান বাড়ি সড়কের তামান্না শারমিন ভিলার ৩য় তলার ভাড়াটিয়া রেহান উদ্দিন মিজি নির্মমভাবে খুন হন। ওই ঘটনায় সদর মডেল থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে মামলা হয়। মামলা নং-৬১/৩৬৮। তাং-২৪/০৬/২০২১। ঐ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে তামান্না শারমিন ভিলার দারোয়ান ও নিহতের ২য় স্ত্রীসহ সন্দেহজনক ৪ জনকে পুলিশ আটক করে। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের কোনো সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদেরকে আইনি প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দেয়া হবে বলে পুলিশ জানায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়