প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:২১
ডিপফেক : প্রযুক্তির সর্বনাশ ডেকে আনছে নাতো?
ডিপফেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি দ্বারা তৈরি ছবি, ভিডিও এবং অডিওসহ সিন্থেটিক মিডিয়া, যা এমন কিছু চিত্রিত করে যা বাস্তবে নেই বা কখনও ঘটেনি। শব্দটি ইংরেজি deepfake থেকে এসেছে। বাংলাতেও ডিপফেক বলা হয়। বাংলা অর্থটি এমন হতে পারে-- ‘গভীর-নকল’ বা নিখুঁত-জাল, নিগূঢ়-কপটতা ইত্যাদি। ডিপফেক শব্দটি ভেঙে গড়লে দুটো আলাদা শব্দ পাওয়া যায়। ডিপ আর ফেক। প্রথম শব্দটি ডিপ-লার্নিং বা গভীর-জ্ঞান-সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর। পুরো বিষয়টি মেশিন লার্নিং-এর ওপর দাঁড়িয়ে। সহজে বললে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির গভীর জ্ঞান-কৌশল কাজে লাগানো। এই প্রযুক্তি বেশ জটিল ও কঠিন।
একাধিক স্তরে বিন্যস্ত উচ্চস্তরের প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনেও কঠোর শ্রম দিতে হয়। দ্বিতীয় শব্দ ‘ফেক’ অর্থ নকল, জাল। সত্য নয় এমন সবকিছুই ফেক শব্দটি দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রযুক্তির ভাষায় ডিপফেক হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সমন্বয়কৃত নকল বিষয়বস্তু। সেটা হতে পারে ভিডিও, ছবি, অ্যানিমেশন, অডিও প্রভৃতি। খারাপ হওয়ার অনেক পথ প্রস্তুত হয়ে আছে। একটু অসতর্কতাই আমাদের জীবনকে, নতুন প্রজন্মকে ধীরে ধীরে চরম বিপদের মধ্যে ফেলতে পারে। শুরুতে মনে হতে পারে যে, এটাই জীবন; কিন্তু একসময় আমরা সব হারিয়ে হা-হুতাশ করবো। আর তখন কোনো লাভ হবে না।
এআই প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন উপকার করছে, তেমনই অনেক অপকারও করছে। এরই একটি ভয়ঙ্কর দিক হলো ডিপফেক ছবি, যা মূলত নারীদের টার্গেট করে কুরুচিকর ফটো তৈরি করে তাদের সমাজ মাধ্যমে হেনস্থা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে। জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক বছরে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে প্রায় ১.৮ কোটি ডিপফেক ছবি তৈরি করেছে। এই ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবহারকারী সংখ্যা সেখানে প্রায় ৫.৯৭ কোটি। এর পরেই রয়েছে ভারত, যেখানে প্রায় ২.৪৫ কোটি ব্যবহারকারী এসব ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন। তৃতীয় স্থানে রয়েছে জাপান (১.৮ কোটি), চতুর্থ স্থানে রাশিয়া (১.৭৫ কোটি) এবং পঞ্চম স্থানে জার্মানি (১.৬৮ কোটি)। ভারত দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জেনে অনেকেই অবাক। কিন্তু অবাক হওয়ার কারণ নেই। প্রায় প্রতিদিনই এই ধরনের অপরাধের খবর উঠে আসে। বলিউডের বড়ো তারকা ক্যাটরিনা কাইফ, রশ্মিকা মান্দানা, কাজল--এমনকি অনেক জনপ্রিয় অভিনেত্রীও ডিপফেকের শিকার হয়েছেন।
সূত্রের দাবি, প্রায় ৮০% ব্যবহারকারী স্মার্টফোন দিয়ে এসব সাইটে প্রবেশ করেন। ছবি আপলোড করার পর, সেই ছবিগুলো যৌনতামূলক বা কুরুচিকর রূপ দিয়ে ভাইরাল করা হয়। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ডিপফেক তৈরি করা ৪১টি সাইটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নতুনভাবে চালু হয়েছে। এ কারণে সাইবার বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং সবাইকে সতর্ক করছেন। এআই যে মানুষের জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহারে সচেতন না হলে, এর অপকারিতা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
এমন ভয়াবহ তথ্যে আমাদের কী করণীয় তা’ আমাদের ভাবতে হবে। এবং তা খুবই দ্রুতগতিতে। অন্যথায় উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। আমরা যাকে আধুনিকতা ভেবে বসে আছি, তা’ কতোটা আমরা গ্রহণ করতে পারছি বা হজম করতে পারছি, সেটাও আমাদের দেখা উচিত। সত্যিকারে আমাদের কী উন্নতি হচ্ছে সেটাও বুঝতে হবে।
ডিফফেকের বিপদে পড়েছেন এমন উদাহরণ অহরহ ঘটছে। প্রত্যেক প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে উপকারই করছে। কিন্তু আমরা মানুষরাই আমাদের বিনোদনের জন্যে, প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে, অন্যকে বিপদে ফেলার জন্যে, স্বার্থের জন্যে ব্যবহার করছি। এটাই মূলত আমাদের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা। অর্থাৎ প্রযুক্তিকে আমরা সঠিকভাবে ও ভালো কাজে কেউ কেউ ব্যবহার করছি না। নতুন প্রজন্মই নয়, আমাদের সকলকে এ বিষয়ে আরো সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।