শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে প্রধান শিক্ষক নূরে আলম!

শামীম হাসান ॥
ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনার নেপথ্যে প্রধান শিক্ষক নূরে আলম!

ফরিদগঞ্জের ৯নং গোবিন্দপুর (উত্তর) ইউনিয়নের নয়াহাট বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে ৪ জন আহত ও পুরো ফরিদগঞ্জ উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যের কারিগর চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম। এমনই অভিযোগ বিভিন্ন মহলের।

২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন উপলক্ষে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকারের নেতৃত্বে নয়াহাট বাজারের চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে কেক কাটা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এই জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের মাঝে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। উত্তপ্ত হতে থাকে পরিস্থিতি। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে আওয়ামী লীগের ১ জন এবং বিএনপির ৩ জন আহত হয়। সংঘর্ষে গুরুতর আহত অবস্থায় দুজন ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার গাব্দেরগাঁও, রূপসা, বদরপুর, রুস্তমপুর ও গৃদকালিন্দিয়া বাজারে সংঘর্ষ হয়। এতে প্রায় ২০/২৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

৫ আগস্টের পর ফরিদগঞ্জের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক থাকলেও নয়াহাট বাজারের সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিকভাবে ফরিদগঞ্জ অশান্ত হওয়ার নেপথ্যের ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্যে অনুসন্ধানে নামে সাংবাদিকরা। ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাহেদ সরকার ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি পুতুল সরকারের নেতৃত্বে আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কক্ষে পালন করা হয়েছে--এমনটি জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির অফিস সহকারী ও নৈশপ্রহরী ফারুক সরকার।

একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষে রাজনৈতিক দলের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের নিয়ম আছে কিনা, প্রধান শিক্ষক কীভাবে একটি সরকারি স্কুল কক্ষে একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিলেন তা জানতে চাইলে চির্কা চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূরে আলম বিদ্যালয়ের কক্ষ ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তারা তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে অনুষ্ঠানটি করেছে (সরজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা সেই কক্ষের দরজা ও তালা লাগানোর হুক সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে)। এদিকে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য মতে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করার মতো ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি তিনি জানার পরও উপজেলা শিক্ষা অফিসের কোনো কর্মকর্তাকে জানানো কিংবা আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন কি না এমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে আমি ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। 'আপনার বক্তব্য অনুযায়ী যেখানে আপনার বিদ্যালয়ের কক্ষের তালা ভেঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের দলীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনের পরও আপনার দায়িত্বের জায়গা থেকে কি কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেননি' এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। বরং তিনি বলেন, বিষয়টি আমি সেভাবে চিন্তা করিনি। একজন প্রধান শিক্ষকের স্কুল কক্ষ ব্যবহার করে রাজনৈতিক দলের একটি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সমগ্র উপজেলার রাজনৈতিক অবস্থা অশান্ত হওয়ার পর ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কোনো ব্যবস্থাগ্রহণ করা তো দূরের কথা, এমনকি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাউকে জানানোও প্রয়োজন মনে করেননি ওই প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয়দের সাথে কথা হলে তারা জানান, পূর্বেও এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টির কক্ষ ও মাঠ ব্যবহার করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দলীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

বিদ্যালয় কক্ষ ব্যবহার করে রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির সভাপতি ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহাবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি এই প্রথম আমি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনার পর এতোদিন অতিবাহিত হওয়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কেউই এ বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই জানায়নি। অফিসিয়াল নিয়মানুযারী আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহার ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। প্রধান শিক্ষক কার অনুমতি নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের জন্যে বিদ্যালয় কক্ষ ব্যবহার করতে দিয়েছেন? আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করার জন্যে নির্দেশ দেবো। অপরাধ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়