প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অপরিকল্পিত নগরায়নে ভাসছে গ্রামীণ জনপদ-১
নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ
গ্রামে এখন আর রাস্তা দেখা যায় না, সবই যেন শহরের গলি
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নের ফলে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণ মানুষের আয় ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় ক্ষমতাও বেড়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে জীবন-জীবিকার রুচিবোধ। বিলাসী জীবনের প্রায় সকল উপায়-উপকরণ গ্রামের মানুষের হাতের নাগালে। ফলে সহজেই তারা নিজেদের বাড়ি-ঘরসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের আধুনিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে শহরের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে।
এক সময় গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি বসতঘর ছনের ছিল। সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারে টিনের চৌকাঠ করা ঘর ছিল। ক্রমে ছনের ঘর বিলুপ্ত হয়ে সবাই টিনের ঘর তৈরি করে। তখন সম্ভ্রান্ত ধনী পরিবারে ইটের দেয়াল করা উপরে ছাদ বা টিনের চাল দেয়া ঘর ছিল। কেবল জমিদার বাড়ি বা এ জাতীয় উচ্চ শ্রেণির পরিবারে লাল ইটের বাড়ি শোভা পেত। এ জাতীয় বাড়ি-ঘরগুলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধারণ করে গড়ে উঠেছিলো। বাড়ির সামনে কাচারি ঘর বা মেহমানখানা থাকতো প্রায় সবার বাড়িতে। সেই পরিবেশ এখন আর কোথাও নেই।
এক সময় রাস্তার পাশে কেউ বাড়ি-ঘর তৈরি করতো না। মূল রাস্তা থেকে অনেকটা ভেতরে গিয়ে বাড়ি তৈরি করা হতো নিরিবিলি পরিবেশে। যাতে সহজে অপরিচিত কেউ বাড়িতে প্রবেশ করতে না পারে। আবার এর ফলে বাড়ির নারী-পুরুষ স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে ঘোরাফেরাও করতে পারতো।
এখন বদলেছে মানুষের চিন্তাধারা। মানুষ এখন পায়ে হেঁটে এক হাতও যেতে চায় না। গাড়ি থেকে নেমে ঘরে প্রবেশ করতে চায়। তাই রাস্তার পাশে বাড়ি করার প্রতিযোগিতা বেড়েছে। মাইলের পর মাইল সরকারি রাস্তার পাশে বাড়ি তৈরি হচ্ছে। দখল হচ্ছে সরকারি জায়গা। আবার রাস্তার দুপাশে অপরিকল্পিত বাড়ি তৈরি হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হচ্ছে রাস্তার পিচ। পানি জমে রাস্তায় তৈরি হচ্ছে বড়ো বড়ো গর্ত। এতে পথচারী ও যানবাহন চলাচলে ঘটছে বিঘ্ন। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য।
এছাড়া রাস্তার পাশে পুকুর এবং ডোবা ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের ফলে পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক কোনো ব্যবস্থা অবশিষ্ট নেই বললেই চলে। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই গ্রামের রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এ চিত্র চাঁদপুর জেলাসহ সারাদেশের প্রায় সর্বত্র।
এ ব্যাপারে কথা হয় মতলব দক্ষিণ উপজেলার নিভৃত পল্লী পুটিয়া গ্রামের রাস্তার পাশে বাড়ি করা সুফিয়া বেগমের সাথে। স্বামী ইন্তেকাল করেছেন অনেক আগে। তিনি জানান, এক সময় তার বাড়ি রাস্তার পাশে ছিল না। বাড়ি থেকে রাস্তায় আসতে নৌকা ব্যবহার করতে হতো। এখন ছেলেরা বিদেশে কাজ করে। ভালো উপার্জন করে। যাতায়াতের সহজতার জন্যে রাস্তার পাশে বাড়ি করেছি।
গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদের নজরদারির কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইকবাল হোসেন হাওলাদার বলেন, পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা বজায় রেখে দালান বা বহুতল ভবন তৈরির ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নেয়ার আইন আছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে মানুষ এটা করছে না। এতে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।