রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

চাঁবিপ্রবির জন্যে দখলকৃত শত একর জমি এখন পতিত : ভূমির প্রকৃত মালিকরা বিপাকে

অনলাইন ডেস্ক
চাঁবিপ্রবির জন্যে দখলকৃত শত একর জমি এখন পতিত : ভূমির প্রকৃত মালিকরা বিপাকে

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চাঁবিপ্রবি) করা হবে এমন পরিকল্পনায় চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে শত শত একর কৃষিজমি ও বসতবাড়ি মানুষের কাছ থেকে নামমূল্যে বিক্রয়ে বাধ্য করে সেসব জায়গা নদীর বালি দিয়ে ভরাট করা হয়। আর এসব করেন বালুখেকো হিসেবে পরিচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সেলিম খান। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কাছের লোক। ৫ আগস্ট গণরোষে মারা যান সেলিম খান। তার দখল করা সেই জমি এখন পতিত ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

মেঘনা নদীর পাড়ে আদৌ বিশ্ববিদ্যালয় হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্যে অধিগ্রহণের নামে দখল করা সব ভূমি এখন পরিণত হয়েছে পতিত ভূমিতে। ভূমির প্রকৃত মালিকরা এখন তাদের জমি ফেরত পেতে চান। কিন্তু কীভাবে এবং কোন্ পথে তা ফেরত পাবে তা নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক।

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি দখলের আগে ২০১৮ সালে সেলিম খান এসব ভূমি দখল করেন সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের কথা বলে। সেই সময় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর বেড়িবাঁধের ভেতরে এবং বাইরে প্রায় ৪০০ একর কৃষিজমি জোর করে দখল করে নেন তিনি। অথচ সরকার সেখানে কোনো ধরনের মেডিকেল কলেজ করার চিন্তাও করেনি তখন। মানুষকে ধোঁকায় ফেলে এভাবেই দখলের সূচনা করেন সেলিম খান।

এরপর নদীর তীরবর্তী এলাকায় সেলিম খান একের পর এক কৃষি ও অকৃষি জমি দখল করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণের জন্যে। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্যে লক্ষ্মীপুর গ্রাম ও ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকার বিরাট একটি অংশ জোর করে নিজের নামে লিখে নেন। এরপর সেই জমি সরকারের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলেন। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাটি ভরাটের নামে সরকারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

সেলিম খানের ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি এতোটাই অন্ধ ছিলেন যে, সেলিম খান প্রশ্নে তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি ছিলেন। সেলিমকে দিয়ে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে একাধিক ডিও লেটার দেন। ২০১৮ সালের পর থেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার নাম করে দ্বিতীয়বার মানুষের ভূমি দখল করা শুরু করেন সেলিম। ওই সময় মানুষকে জোর করে বাস্তুচ্যুত ও জোর করে পুনরায় তার নামে ও বেনামে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা শতাংশ মৌজা দর হিসাবে জমি লিখে নেন। কিন্তু সেই জমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা শতাংশ হিসাবে মৌজা দর দেখিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করেন।

চাঁদপুর সাবরেজিস্ট্রি অফিসকে ম্যানেজ করে জালিয়াতির মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরের মৌজা দর ৩০-৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে মৌজা দর জারি করেন সেলিম। শুধু তাই নয়, ওই সময় লক্ষ্মীপুর মৌজায় অন্য সবার জন্যে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও নামজারি নিষিদ্ধ করে রাখেন। সেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয় করার ব্যাপারে যৌক্তিকভাবে বিরোধিতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদসহ অন্যরা। তারপরও মন্ত্রী দীপু মনির ভাই জেআর ওয়াদুদ টিপু এবং সেলিম খানসহ মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্টরা ওই জায়গায় ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিলসহ নানা জালিয়াতি করে ৫৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার থেকে হাতিয়ে নিতে গেলেই ঘটে যত বিপত্তি। এ সময় সরকারের বিপুল অর্থ লুটপাট করার চেষ্টাটি তখন রুখে দেন তৎকালীন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। যে কারণে সেই জেলা প্রশাসককে চাঁদপুর থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়। একপর্যায়ে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে অধিগ্রহণ করা এসব জমি অধিগ্রহণ ও প্রাক্কলন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম শুরু হলে সীমানা নির্ধারণ করে পতাকা টানানো হয়। সীমানার মধ্যে অনেক বসতবাড়িও পড়ে। সেসব বসতবাড়ি থেকেও তাৎক্ষণিক মানুষকে উচ্ছেদ করেন চেয়ারম্যান সেলিম। পাশের বিলসহ কয়েকটি স্থানে কিছু মানুষকে বাড়ি নির্মাণের জন্যে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই বিলের কৃষি জমিগুলোও ছিল অন্য মানুষের। উচ্ছেদকৃতরা বাধ্য হয়ে নতুন বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। মূলত এখন ওইসব মানুষই পড়েছেন বিপাকে। কারণ একদিকে সেলিম জোর করে তাদের বসতবাড়ি ছিনিয়ে নিয়েছেন, অন্যদিকে যে জায়গায় তারা বসবাস করেছেন সেই জায়গাও অন্যজনের। তাই ওই জমির প্রকৃত মালিকরা এখন চাপ দিচ্ছে তাদের জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্যে।

ওই এলাকার ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর জব্বার বলেন, সেলিম আমার জায়গা বিক্রির জন্যে অনেক হুমকি দিয়েছে। আমি জমি বিক্রি করিনি। তার পরও সেলিম আমার জায়গায় জোর করে মাটি ফেলেছে। সবার জমি এখন এক লেভেল হয়ে আছে। ম্যাপ দেখে এসব জায়গা শনাক্ত করতে হবে।

সেলিম খানের মৃত্যুর পর একটি চক্র ওই এলাকার ভূমি নিয়ে নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে বলেও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। সূত্র : যুগান্তর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়