প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাজীগঞ্জ দক্ষিণাঞ্চলের আতঙ্ক গোলাম কিবরিয়া গ্রেফতার ॥ এলাকায় স্বস্তি
হাজীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের নিরীহ লোকজনের কাছে আতঙ্কের নাম ছাত্রলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া। তার আতঙ্কে এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করতে পারতো না। বহু হামলা ও মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করা তার পেশা হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। হাজীগঞ্জের বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের এন্নাতলি গ্রামের ছৈয়াল বাড়ির মিজানুর রহমানের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনায় গোলাম কিবরিয়াকে ২ বছর ও তার ভাই গোলাম রাব্বানীকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং তাদের বাবা মহিউদ্দিন দুলালকে খালাস দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। এ সময় বিচারকের নির্দেশনায় আদালতে উপস্থিত গোলাম কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এর আগে ২০২০ সালে গোলাম কিবরিয়া, গোলাম রাব্বানি ও মহিউদ্দিন দুলালের বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা (৩২৬/২০) দায়ের করেন মিজানুর রহমান। ওই সময় পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। পরে তারা জামিনে বের হয়ে আসেন। পরবর্তীতে পুলিশ চার্জশীট দিলে আদালত শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কিবরিয়াকে ২ বছর ও রাব্বানীকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং মহিউদ্দিন দুলালকে খালাস দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে কিবরিয়া, রাব্বানি ও দুলাল আমার ওপর অতর্কিত হামলা ও মারধর করে। পরে আমি গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেই এবং থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। ওই মামলায় রায় হয় এবং বিচারক দুজনকে সাজা ও একজনকে খালাস দেন। এর মধ্যে ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি গোলাম রাব্বানি পলাতক রয়েছেন।
এ দিকে সাজার ঘটনায় আসামিরা আপিল করবেন বলে জানা গেছে। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে গোলাম কিবরিয়া ও তার বাবা মহিউদ্দিন দুলালের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। প্রতিবন্ধী নুরু হত্যায় জড়িত মূল আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে এন্নাতলি গ্রামের দক্ষিণ-পূর্ব ঈদগাহ মাঠের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ২৮ মে সকালে প্রতিবন্ধী নুরুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ব্যানারে মহিউদ্দিন দুলাল ও গোলাম কিবরিয়াকে খুনি উল্লেখ করে তদন্তপূর্বক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধনে হত্যাকাণ্ডের শিকার নুরুর পরিবার ও নুরু হত্যা মামলার আসামি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ এলাকার লোকজন অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন হত্যাকাণ্ডের শিকার প্রতিবন্ধী নুরুর চাচা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, হত্যা মামলার আসামি ইউসুফ পাটওয়ারী, এলাকাবাসীর পক্ষে সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হুমায়ুন কবির, ইয়াছিন পাটওয়ারী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার নূরে আলম ফরাজী।
বক্তারা বলেন, শান্ত এন্নাতলি, বড়কুল ও রায়চোঁ গ্রামকে প্রতিবন্ধী নুরু ও পরবর্তীতে জোড়া খুনের মাধ্যমে অশান্ত করে তোলা হয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ নিরীহ মানুষকে আসামি করে কিংবা আসামি করার ভয় দেখিয়ে হয়রানি ও অর্থ বাণিজ্য করা হয়।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা আরও বলেন, মহিউদ্দিন দুলাল ও গোলাম কিবরিয়া এই এলাকার নিরীহ লোকজনকে আসামি করেছে এবং আসামি করার ভয় দেখিয়ে বাণিজ্য করেছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং যারা হয়রানির শিকার হয়েছে তাদেরকে মুক্তির ব্যবস্থা করা হোক।