শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১৮

বেপরোয়া সন্তানদের কঠোর শাস্তি এবং পিতামাতার করণীয় প্রসঙ্গে

অনলাইন ডেস্ক
বেপরোয়া সন্তানদের কঠোর শাস্তি এবং পিতামাতার করণীয় প্রসঙ্গে

বৃহস্পতিবার চাঁদপুর কণ্ঠের শীর্ষ সংবাদে লিখা হয়েছে, জমি লিখে না দেয়ায় পুত্রের ছুরিকাঘাতে পিতার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ১৬ অক্টোবর বুধবার বেলা ১২টা ৪০মিনিটে মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর লুধুয়া গ্রামের প্রধানীয়া বাড়িতে। এলাকাবাসী ও পরিবারের স্বজনরা জানান, লুধুয়া গ্রামের আঃ সোবহান প্রধানের ছেলে সৌদি প্রবাসী নোমান (২৮) বাপের জায়গা-জমি নিজের নামে লিখে নিতে চায়। এতে পিতা রাজি না হওয়ায় দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক থেকে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে নোমান ক্ষিপ্ত হয়ে পিতার বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক মোঃ মোশারফ হোসেন জানান, হাসাপতালে আনার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সাথে সাথেই নোমান পালিয়ে যায়। অন্য ছেলেরাও লাশ হাসপাতালে রেখেই পালিয়ে যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ৪ বছর পূর্বে আঃ সোবহান প্রধানের স্ত্রী শিরিন বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই তিন ছেলে জামান (৩৫), নোমান (২৮) ও জাহিদ (২২) বাপের সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্যে নানানভাবে চেষ্টা চালায়। খোকন প্রধান এতে সায় দেননি। পরিণামে ছেলেরা কেউই বাবার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি ও ভরণ পোষণ দিতো না। সম্প্রতি মেঝো ছেলে নোমান সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করেন। এরপর থেকেই বাবার সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্যে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। বুধবার সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্যে পিতা আঃ সোবহান প্রধানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং নিহতের পুত্রবধূ আটক হয়েছে। পুলিশ লাশ ময়না তদন্তের জন্যে চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।

শুক্রবারও চাঁদপুর কণ্ঠে বেপরোয়া আরেক পুত্রকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরেকটি সংবাদ। 'বৃদ্ধ পিতামাতাকে মারধর করায় সন্তানের কারাদণ্ড' শিরোনামের সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম হাজরার ছেলে মো. আরিফ হাজরা (২৩) প্রায়শই জবরদস্তিমূলকভাবে নিজ পিতামাতার নিকট থেকে অর্থ আদায় করতো। কাক্সিক্ষত টাকা না পেলে প্রায়শই বৃদ্ধ পিতামাতাকে মারধর করতো। পিতা জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি পারিবারিক ও স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পুনরায় নিজ পুত্রের হাতে মারধরের শিকার হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ প্রদান করলে পুলিশ অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলে গ্রেফতার করেন। উক্ত অপরাধ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাখাওয়াত জামিল সৈকতের ভ্রাম্যমাণ আদালতের সম্মুখে উদ্ঘাটিত হয়। অপরাধীর স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উল্লেখিত অপরাধ আমলে নিয়ে অপরাধীকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে চাঁদপুর সদর মডেল থানা সার্বিক সহযোগিতা করে। উল্লেখ্য, বয়স্ক পিতামাতাকে আক্রমণ করা একটি ন্যাক্কারজনক সামাজিক ও ধর্মীয় অপরাধ। একই সাথে এটি প্রচলিত আইনে একটি ফৌজদারি অপরাধ। উল্লেখিত অপরাধী সাজাভোগের পর স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসবে এবং নিজ পিতামাতার সাথে সম্মানজনক আচরণ বজায় রাখবে--এমনটি প্রত্যাশা করেন সকলে।

আমাদের দেশে সাজাভোগের জায়গা জেলখানায় আসামীদের সংশোধন হওয়া কিংবা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে উদ্বুদ্ধ-উজ্জীবিত করার তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। সেজন্যে উপরোল্লিখিত বেপরোয়া পুত্র দুমাস পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাবামায়ের প্রতি ভালো আচরণ করবে, না জেদবশত বাবা-মায়ের প্রতি আরো খারাপ আচরণ করবে সেটাই দেখার বিষয়। যদি করে তখন তার বাবা আবার জায়গামত অভিযোগ করার সুযোগ পান কিনা সেটাও দেখার বিষয়। যদি সুযোগ পান, তাহলে তার বেপরোয়া পুত্রের শাস্তি যেনো অনেক বেশি হয়, সেজন্যে বিচারকের কাছে আমরা আগাম দাবি জানিয়ে রাখলাম। একই সাথে মতলব উত্তর উপজেলাধীন উত্তর লুধুয়া গ্রামের আ. সোবহান প্রধানের হত্যাকারী তার প্রবাসী পুত্র নোমানের এবং তাকে প্ররোচনাদানকারী সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি। মাত্র ২৮ বছর বয়সী নোমান পৈত্রিক সম্পত্তি পাওয়ার জন্যে পিতার প্রতি চরম বেপরোয়া আচরণ করতে গিয়ে যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটা জঘন্যতমের চাইতেও বেশি কিছু। অতএব তার শাস্তি জঘন্যতম হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়।

আমাদের দেশে অনেক পিতাই সম্পত্তিগত কারণে সন্তানদের নিগ্রহের শিকার হন। সুশিক্ষা দিয়ে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে না তুলে সন্তানদের সম্পদ বন্টন করে দিলে এমন অধিকাংশ সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরণপোষণ করতে চায় না। সমাজে সেটি দেখে কিছু বাবা-মা বার্ধক্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছেও সন্তানদের সম্পদ বণ্টন করে দিতে চান না, আবার অনেকে বন্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও সেটির কার্যকারিতা মৃত্যর পর হবে বলে দলিলে উল্লেখ করেন। আবার কিছু পিতামাতা সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন করেন না। এটা নিয়ে ভালো সন্তানরা উচ্চবাচ্য করেন না, তবে সম্পদলোভী খারাপ সন্তানরা অনেক কিছুই করে। এতে পিতামাতা হতাহত হবার ঘটনাও ঘটে কিংবা মিথ্যা অপবাদ/ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এসব সিনেমা-নাটকে এবং মিডিয়ায় দেখা যায় প্রায়শই। এসবের অবসানে কী কী করণীয় হতে পারে, বিদ্যমান আইনের প্রায়োগিক দিকটা কতোটা কাজে লাগানো যেতে পারে, সেটা নিয়ে সমাজ বিশ্লেষকদের কিংবা অপরাধ বিষয়ক গবেষকদের পরামর্শ ভীষণ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়