প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:৩১
বউয়েরা তাদের স্বামীকে যা মনে করে
পত্রিকা খুলে দেখি, এক দিনে একসঙ্গে দুটি দিবস। প্রাক্তনকে ক্ষমা করে দেওয়ার দিন, আর বন্ধুকে টাকা ফেরত দেওয়ার দিন।
ছয় মাস আগে বউয়ের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। সে নিজের জন্য অনলাইনে একটি পণ্যের অর্ডার করেছিল। তার কাছ থেকে টাকা ধার করে সেই বিল পরিশোধ করেছিলাম।
এরপর সেই টাকার কথা বলে পাঁচ শ-এক হাজার করে কয়েকবার টাকা নিয়েছে। তবু বলে আমার কাছে নাকি এখনো তার তিন হাজার টাকা পাওনা রয়ে গেছে!
প্রায়ই সেই টাকার জন্য খোঁটা দেয়। ভাবলাম, আজকে যেহেতু টাকা ফেরত দেওয়ার দিন; তার টাকা ফেরত দিয়ে ঋণমুক্ত হই। বউ তো বন্ধুর মতোই।
এক হাজার টাকার তিনটা চকচকে নোট পেয়ে বউ বেজায় খুশি। খুশি খুশি গলায় বলল, টাকা ফেরত দেওয়ার দিনটা যদি প্রতি মাসে একবার করে হতো, তাহলে কেমন হতো বলো তো?
আমি জবাব দিলাম না। জবাব দিতে গেলে আবার কোন ফাঁদে পড়ি! বউয়েরা ম্যাজিস্ট্রেটের চেয়েও বেশি বুদ্ধি রাখে। কোন কথার কোন মানে বের করে ফেলবে, কে জানে!
টাকা পেয়ে খুশি হয়ে না চাইতেই সে এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এল। কফি খেতে খেতে বললাম, এই জানো, আজকে যে আরেকটা বিশেষ দিন আছে? আজকে কিন্তু প্রাক্তনকে ক্ষমা করে দেওয়ার দিন। বউ খুশি খুশি গলায় বলল, তোমার প্রাক্তন ছিল? তোমার যে চেহারা, থাকাটাই তো স্বাভাবিক।
জীবনে এই প্রথম বউ আমার চেহারার প্রশংসা করল। আনন্দে চোখে পানি চলে এল।
‘ছিল’ বলতে গিয়েও সাবধান হয়ে গেলাম। ফাঁদে পা দিচ্ছি না তো! এ জন্য সারা জীবন ঝামেলা হবে না তো আবার! ভালো করেই জানি, বউ একাই তিন গোয়েন্দার বুদ্ধি রাখে।
বউ আহ্লাদী গলায় বলল, এই বলো, আমি কিছুই মনে করব না। তোমার তো প্রাক্তন থাকতেই পারে, তখন তো আর আমি ছিলাম না।
যুক্তিসংগত কথা, তখন তো আর সে ছিল না। থাকলে সমস্যা কী?
এই বলো না কয়জন ছিল?
মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, আর কয়জন! বোধ হয় ছিল একজন!
বোধ হয় ছিল? সে তোমাকে ছেড়ে গেছে, না তুমি?
সে ছেড়ে গেছে।
বউ কৌতূহলী হলো, ছাড়ল কেন?
আরে, বাদ দাও তো!
বাদ দেব কেন? বলো না কী হয়েছিল? ওর মা-বাবা রাজি ছিল না?
আরে তেমন কিছু নয়।
আহ! ঢং না করে বলো তো কী হয়েছিল। তোমাদের মধ্যে কি গভীর প্রেম ছিল? একেবারে শিরি-ফরহাদ, লাইলী-মজনু টাইপ? তারে জড়াইয়া ধরছিলা? হাত ধরছিলা কয়বার?
অতি সাবধানে বললাম, আরে তেমন কিছু নয়। প্রেম হবে হবে করছিল। আমার একটা ভুলের কারণেই সর্বনাশ হয়ে গেছে।
কী ভুল করছিলা?
তখন সবে কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। ক্লাসের একটা মেয়েকে ভালো লেগে গেল। দু-চার দিন কথা বলার পর আমাদের প্রেমটাও হয়ে গেল।
তারপর?
একদিন কলেজে এসে সে বলল, তার বাবা নাকি গাড়ি দুর্ঘটনায় পা ভেঙে ফেলেছে। অপারেশন করাতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি আছে।
থাকুক ভর্তি, সমস্যা কই? সে তো তখনো তোমার শ্বশুর হয় নাই!
এদিকে আমার একমাত্র ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হাসপাতালে ভর্তি। ওর পাইলস হয়েছে। পায়খানা করতে সমস্যা হচ্ছে। ওরও অপারেশন লাগবে। সেই-ই যত নষ্টের গোড়া!
ওই ব্যাটা আবার কী করল?
ঘনিষ্ঠ বন্ধু পাইলসের যন্ত্রণায় ভুগছে; আবার ওদিকে প্রেমিকার বাবা পা ভেঙে হাসপাতালে। তাকে দেখতে যেতে পারছি না। কোন পরিচয়ে যাব?
তারপর কী হলো?
বিষয়টা আমি নিতে পারছিলাম না। তুমি তো জানো, টেনশন করলে আমার সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায়। কথা ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে পারি না। বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছি, ওর অপারেশন হবে। রাস্তায় মিথিলার সঙ্গে দেখা।
মিথিলা কে?
আমার প্রাক্তন। মিথিলা বলল, মুখটা এমন মলিন কেন? কী হয়েছে?
আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, পাইলস!
মিথিলা অবাক হয়ে বলল, কী হয়েছে?
পাইলস, পায়খানা করতে সমস্যা হচ্ছে। আজকেই কিছুক্ষণ পর অপারেশন। তোমার কী অবস্থা? তোমার অপারেশন হয়ে গেছে? এখন একটু সুস্থ?
মিথিলার অপারেশন মানে?
আরে বাবা! তার বাবার অপারেশনের কথা জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে, তার কথা বলে ফেলছি। মিথিলা মনে করল, আমি তার পাইলস বিষয়ে জানতে চাইছি!
তারপর? তারপর কী হলো?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, তারপর আর কী হবে! মিথিলা আমার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, ছাগল! এরপরই সামনের দিকে হাঁটা দিল!
তার ভুল ভাঙিয়ে দাওনি?
নাহ! এরপরে আর সামনে যেতে সাহস করিনি। একবার গিয়েছিলাম; এমন দৌড়ানি দিল যে, আর সাহস হয়নি। ভেবেছিলাম তাকে কোনো দিন মাফ করব না। আজকের দিনটার কথা ভেবে মাফ করে দিলাম।বউ আমার পিঠে হাত বোলাতে লাগল, মাফ করে দিয়ে ভালো করেছ। তোমাদের সম্পর্ক ছিল কত দিন?
এই ছয় মাসের মতো।
মিথিলা মেয়েটা বোধ হয় বোকা ছিল। বুদ্ধিশুদ্ধি একটু কম ছিল।
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা, কী করে বুঝলে?
বউ তার মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলল, মিথিলার যেটা বুঝতে ছয় মাস লেগেছে, ওটা আমি বাসরঘরেই বুঝেছিলাম!
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, কোন বিষয়টা?
সে ঘর থেকে বের হতে হতে বলল, ওই যে, ছাগল বিষয়টা।