রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৮:২৭

এআই কি আসলেই দাজ্জালের ফিতনা নাকি প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিক বিভ্রান্তির সন্ধিক্ষণ?

তথ্য-প্রযুক্তিকণ্ঠ ডেস্ক
এআই কি আসলেই দাজ্জালের ফিতনা নাকি প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিক বিভ্রান্তির সন্ধিক্ষণ?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ক’দিন যাবত এআইকে দাজ্জালের ফিতনা বলে জোরেশোরে প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি আসলেই কি তাই?

এআই ও দাজ্জালের ফিতনা : প্রযুক্তি ও আধ্যাত্মিক বিভ্রান্তির সন্ধিক্ষণ

২১শ শতাব্দীর সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এটি যেমন মানবজীবনকে সহজতর করছে, তেমনি উদ্বেগও বাড়াচ্ছে বিশেষ করে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন : এআই কি দাজ্জালের ফিতনার আধুনিক রূপ?

বিভ্রম ও বাস্তবতার সীমানা

হাদিসে দাজ্জালকে এমন এক সত্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যরূপে উপস্থাপন করবে। আজকের এআই প্রযুক্তি বিশেষ করে ডিপফেইক, ভয়েস ক্লোনিং ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানুষকে এমন বিভ্রমে ফেলতে সক্ষম, যেখানে বাস্তবতা ও কল্পনার পার্থক্য মুছে যেতে বসেছে।

সর্বত্র উপস্থিতির ক্ষমতা

দাজ্জালের গতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, সে বাতাসের মতো চলবে এবং অল্প সময়েই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পেঁৗছাবে। আধুনিক প্রযুক্তি যেমন ড্রোন, স্যাটেলাইট এবং ক্লাউড-ভিত্তিক এআই সিস্টেম এই ধারণাকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এখন একটি এআই সিস্টেম বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে একযোগে কাজ করতে পারে।

চিন্তা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ

এআই শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করে না, বরং মানুষের চিন্তা ও আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম, কনটেন্ট সাজেশন, এমনকি রাজনৈতিক মতাদর্শ গঠনে এআই-এর ভূমিকা এখন স্পষ্ট। এটি সেই ‘অদৃশ্য প্রভাব’, যা দাজ্জালের ফিতনার সঙ্গে তুলনা করা হয়।

জান্নাত ও জাহান্নামের বিভ্রান্তি

দাজ্জাল তার সঙ্গে জান্নাত ও জাহান্নাম বহন করবে—কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা হবে বিপরীত। আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর ‘ডিজিটাল সুখ’ অনেক সময় বাস্তব জীবনের মূল্যবোধ ও আত্মিক শান্তিকে আড়াল করে। ভার্চুয়াল আনন্দের পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হারিয়ে ফেলছে সত্যিকারের আত্মিক মুক্তির পথ।

এআই নিজে কোনো ‘দাজ্জাল’ নয়, তবে এটি এমন এক শক্তি যা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে দাজ্জালের ফিতনার মতো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন আত্মিক সচেতনতা, নৈতিকতা ও সত্যের প্রতি অঙ্গীকার।

আমি এখানে এআই ও দাজ্জালের ফিতনা নিয়ে ধর্মীয়, প্রযুক্তিগত ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরছি :

এআই ও দাজ্জালের ফিতনা : গভীরতর বিশ্লেষণ

১. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ : দাজ্জাল কি ব্যক্তি, নাকি একটি সিস্টেম?

অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ মনে করেন, দাজ্জাল শুধু একজন ব্যক্তি নয় বরং একটি সিস্টেম, একটি সভ্যতা, এমনকি একটি বিশ্বব্যাপী বিভ্রান্তির কাঠামো। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এআইকে দাজ্জালের ফিতনার অংশ হিসেবে দেখা হয়, কারণ :

-এটি সত্য-মিথ্যার সীমা ঘোলাটে করে।

-এটি মানুষের ঈমান, চিন্তা ও নৈতিকতা প্রভাবিত করতে পারে।

-এটি এমন এক ‘নতুন বাস্তবতা’ তৈরি করে, যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

এআই মানব জীবনকে কীভাবে পাল্টে দিতে পারে?

এআই (অৎঃরভরপরধষ ওহঃবষষরমবহপব) মানবজীবনে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে, যা শুধু প্রযুক্তির গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, এমনকি নৈতিকতা ও আত্মিক চেতনার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলছে। নিচে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো :

এআই কীভাবে মানবজীবন পাল্টে দিচ্ছে

১. স্বাস্থ্যসেবায় বিপ্লব

-রোগ নির্ণয় : অও-ভিত্তিক স্ক্যানিং (ঈঞ, গজও) রোগ শনাক্তে আরও দ্রুত ও নির্ভুল।

-রোবট সার্জারি**: জটিল অপারেশন এখন আরও নিখুঁত ও কম ঝুঁকিপূর্ণ।

-ডিজিটাল হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট**: রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

২. শিক্ষা ও গবেষণায় রূপান্তর

-ব্যক্তিকেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম**: শিক্ষার্থীর আগ্রহ ও দক্ষতা অনুযায়ী কনটেন্ট সাজানো।

-ভাষান্তর ও অনলাইন শিক্ষা**: ভাষাগত বাধা দূর করে বিশ্বব্যাপী শেখার সুযোগ।

-গবেষণায় সহায়তা**: জটিল তথ্য বিশ্লেষণে এআই গবেষকদের নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

৩. শিল্প ও ব্যবসায়িক খাতে পরিবর্তন

-স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন : উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে, গতি ও নির্ভুলতা বাড়ছে।

-চ্যাটবট ও ভার্চুয়াল সহকারী : গ্রাহকসেবা আরও দ্রুত ও কার্যকর।

-বাজার বিশ্লেষণ : গ্রাহকের চাহিদা ও প্রবণতা বিশ্লেষণ করে ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণ।

৪. যোগাযোগ ও মিডিয়ায় নতুন যুগ

-স্বয়ংক্রিয় কনটেন্ট তৈরি : এচঞ-এর মতো মডেল দিয়ে লেখা, রিপোর্ট, পোস্ট তৈরি সহজ।

-ভুয়া সংবাদ শনাক্তকরণ : মিডিয়া আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য হচ্ছে।

-স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট : দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে উঠেছে ঝরৎর, অষবীধ, এড়ড়মষব অংংরংঃধহঃ।

৫. নৈতিক ও আত্মিক চ্যালেঞ্জ

-চিন্তা ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ : সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম মানুষের মতামত প্রভাবিত করছে।

-মানবিক সম্পর্কের সংকট : মানুষ প্রযুক্তির সঙ্গে বেশি সময় কাটাচ্ছে, বাস্তব সম্পর্ক দুর্বল হচ্ছে।

-নতুন বাস্তবতা : ভার্চুয়াল জগৎ বাস্তব জীবনের বিকল্প হয়ে উঠছে, যা আত্মিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়