প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮
বাংলাদেশে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা এবং স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম উন্নয়ন ও সম্ভাবনা

বাংলাদেশে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা এবং স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে দেশের অর্থনীতি ও সমাজকে দ্রুত পরিবর্তন করছে। তরুণ জনগোষ্ঠী, সরকারি নীতি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উদীয়মান প্রযুক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল রূপান্তর গত এক দশকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১-এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং ব্যবসায়িক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। একইসাথে তরুণ উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠছে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে।
প্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি
ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার : বর্তমানে প্রায় ১০২ মিলিয়নের বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ মিলিয়নেরও বেশি।
ডিজিটাল সেবা : ই-গভর্নেন্স, অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (বিকাশ, নগদ) সাধারণ মানুষের জীবনে প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করেছে।
আইটি শিল্প : প্রতিবছর প্রায় ৫০০০-এর বেশি আইটি গ্র্যাজুয়েট কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে যা সফটওয়্যার ও আউটসোর্সিং শিল্পকে শক্তিশালী করছে।
শিক্ষা ও প্রযুক্তি
ডিজিটাল শিক্ষা : অনলাইন ক্লাস, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম এবং ভার্চুয়াল ল্যাব শিক্ষার্থীদের জন্যে নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
সরকারি উদ্যোগ : শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আইসিটি বিভাগ একসাথে কাজ করে স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করেছে।
তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা : প্রযুক্তি অভিযোজিত তরুণ জনগোষ্ঠী স্টার্ট-আপ ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।
ডিজিটাল জীবনধারা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম : ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক তরুণদের বিনোদন ও তথ্য বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
ই-কমার্স : দারাজ, আজকেরডিল, চালডাল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম মানুষের কেনাকাটার অভ্যাস বদলে দিয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা : টেলিমেডিসিন ও অনলাইন ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকেও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে।
ডিজিটাল পেমেন্ট : মোবাইল ওয়ালেট ও অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেনকে দ্রুত ও নিরাপদ করেছে।
স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম
উদীয়মান কেন্দ্র : বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান স্টার্ট-আপ হাব বলা হচ্ছে।
বিনিয়োগ প্রবাহ : আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও স্থানীয় উদ্ভাবন একত্রে স্টার্ট-আপ খাতকে শক্তিশালী করছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২১ বিলিয়ন ডলার যা অনেক স্টার্ট-আপের অর্থায়নে সহায়তা করেছে।
খাতভিত্তিক স্টার্ট-আপ : মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, এডটেক, হেলথটেক, এগ্রিটেক এবং ই-কমার্সে সবচেয়ে বেশি স্টার্ট-আপ গড়ে উঠছে।
সরকারি সহায়তা : আইসিটি বিভাগ স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেমকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং নীতি সহায়তা দিচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ
অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা : উচ্চগতির ইন্টারনেট ও বিদ্যুৎ সরবরাহে এখনও ঘাটতি রয়েছে।
বিনিয়োগের অভাব : আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়লেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সীমিত।
দক্ষ জনশক্তি : প্রযুক্তি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হলেও আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
সম্ভাবনা
তরুণ জনগোষ্ঠী : দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ ৩৫ বছরের নিচে।
মধ্যবিত্তের বৃদ্ধি : প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বাড়ছে যা ডিজিটাল সেবা গ্রহণে আগ্রহী।
আন্তর্জাতিক বাজার : আউটসোর্সিং ও সফটওয়্যার রপ্তানি বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের নতুন উৎস হতে পারে।
বাংলাদেশে প্রযুক্তি, শিক্ষা, ডিজিটাল জীবনধারা এবং স্টার্ট-আপ ইকোসিস্টেম একে অপরকে পরিপূরক করে একটি নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা তৈরি করছে। তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি, সরকারি নীতি সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের সমন্বয়ে বাংলাদেশ আগামী দশকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রযুক্তি শক্তি হয়ে উঠতে পারে।








