শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

সুরভী এখন কোথায়?
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

অটোবাইকে চড়ে ৬ বছরের সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে খালার সাথে বের হয় গৃহবধূ সুরভী (২৩)। পথিমধ্যে খালা তার বাড়িতে যাওয়ার জন্যে নেমে গিয়ে নিজ বাড়িতে পৌঁছলেও বোনঝি সুরভী স্বামীর বাড়িতে পৌঁছেনি। গত ১৬ দিনেও তার হদিস বাপের বাড়ি এবং স্বামীর বাড়ির কেউ জানে না। নিখোঁজের ঘটনায় সুরভীর বাবা কালু মিয়া ফরিদগঞ্জ থানায় জিডি করলেও পুলিশ কোনো সন্ধান পায়নি। আবার স্বামীর পরিবারের পক্ষে থানায় জিডি করতে আসলে একই ঘটনায় দুটি জিডি হয় না, তাই তারা ফিরে গিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে সুরভী নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে লিখিত অভিযোগ করে। নিখোঁজের ১৬ দিন পেরিয়ে গেলেও সন্তানসহ সুরভী (২৩)-এর হদিস মিলছে না। তাই ‘সুরভী কোথায়’ এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে সবাই।

জানা গেছে, উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের মানিকরাজ গ্রামের ঠিকাদার কালু মিয়ার মেয়ে সুরভী বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সকদিরামপুর গ্রামের আঃ মান্নান বেপারীর সৌদি প্রবাসী আমিন বেপারীর সাথে ৮ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৬ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সুরভী বেগম তার বাপের বাড়িতে চলে আসে। পরে সে তার বাবাকে জানায়, তার শাশুড়ি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। সুরভীর বাবা সাথে সাথে মেয়েকে নিয়ে সকদিরামপুর যান। সেখানে একই বাড়ির চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আঃ লতিফের মাধ্যমে ঘটনার মীমাংসা করেন। পরে সুরভী ক’দিন বাপের বাড়িতে থাকবে বলে বাবার সাথে চলে আসে।

এরপর গত মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে সুরভী স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্যে ৬ বছরের শিশুকন্যা স্বর্ণাকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। সুরভীর সাথে তার খালা রাণী বেগম স্বামীর বাড়ি চাঁদপুর সদর ইউনিয়নের পাইকদি গ্রামে যাওয়ার জন্যে একই অটোবাইকে রওনা দেন।

সুরভীর খালা রাণী বেগম চান্দ্রা চৌরাস্তায় নিজের স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্যে গাড়ি থেকে নেমে যান। রাণী বেগম তার স্বামীর বাড়িতে পৌঁছলেও সুরভী তার স্বামীর বাড়ি সকদিরামপুর পৌঁছেনি। সুরভীর নিখোঁজের ঘটনা জেনে পরদিন বুধবার (১৮ আগস্ট) তার পিতা কালু মিয়া ফরিদগঞ্জ থানায় জিডি করেন। এর একদিন পর তিনি তার আমির বেপারীর বাবা আঃ মান্নান বেপারীকে জানান, যা রহস্যজনক।

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সরেজমিন গেলে কথা হয় উভয় পরিবারের সদস্যদের সাথে। বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের মানিকরাজ গ্রামে কালু মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা হয় সুরভীর খালার রাণী বেগমের সাথে। তিনি জানান, একদিন আগে তিনি বোনের বাড়িতে এসেছেন। ওইদিনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, সুরভী আমাদের সাথে গাড়িতে ছিলো। আমাকে চান্দ্রা চৌরাস্তায় নামিয়ে দিয়ে একই গাড়িতে করে সকদি রামপুরের দিকে যায়। পরে শুনতে পাই, সে তার স্বামীর বাড়িতে পৌঁছেনি। সে কোথায় গেলো এই প্রশ্ন আমারও।

সুরভীর মা সুরাইয়া বেগম, ফুফু হাসনা বেগম এবং বড় বোন রোশনি বেগম জানান, ‘সুরভীকে তার শ্বশুর-শাশুড়ি নির্যাতন করতো। জনৈক ক্যাবল অপারেটর কর্মী তার মেয়েকে চিপস্ ও জুস কিনে দেয়ায় তারা সুরভীর সাথে ওই কর্মীর সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রচার করে। এখন সুরভী নিখোঁজ কিন্তু ওই ক্যাবল অপারেটর কর্মী এখনো তার এলাকায়। তাই তাদের অভিযোগ মিথ্যা। তারা জানান, গত ১২ আগস্ট সুরভীকে তার শাশুড়ি মারধর করায় সে সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে চলে আসে। পরে তার বাবা কালু মিয়া ওই বাড়িতে গিয়ে ওই বাড়ির আঃ লতিফের মাধ্যমে ঘটনার মীমাংসা করে আসেন। পরবর্তীতে সুরভী বাপের বাড়িতে বেড়াতে চাইলে মেয়েকে নিয়ে আসেন। কিন্তু গত ১৭ আগস্ট সে নিজেই স্বামীর বাড়ি যাওয়ার জন্যে খালাকে একদিন রেখে দেয়। ঘটনার দিন উভয়ই একসাথে বের হয়ে যায়। কিন্তু মেয়েসহ সুরভী নিখোঁজ হয়ে যায়।

সুরভীর পিতা কালু মিয়া বলেন, সুরভী স্বামীর বাড়িতে যাবে বলে তাকে আমি অটোবাইক ঠিক করে দিই। পরে তার সাথে যোগাযোগ করা চেষ্টা করি, কিন্তু কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করি।

তিনি জানান, গত ১২ আগস্ট সুরভীর শাশুড়ি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে বলে সে আমার বাড়ি চলে আসে। মেয়ের কথা শুনে তার শ^শুর বাড়ির গণ্যমান্য ব্যক্তি আঃ লতিফকে অবগত করি। তিনি সেদিনই আমার উপস্থিতিতে সুরভী ও তার শাশুড়ির মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করে দেন।

সকদিরামপুর গ্রামে সুরভীর শ্বশুর বাড়ি গেলে দেখা যায়, সুরভীর স্বামী আমিন বেপারী ও তার ভাই ইয়াছিন বেপারী দুই ভাই নিজেদের জন্যে পৃথক স্থানে আলাদা বাড়ি করেছেন। সুরভী ও তার স্বামী আমিন বেপারীর দুই তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে। ওই বাড়ির আঃ রহিম, বাচ্চু বেপারীসহ বেশ ক’জন জানান, আঃ মান্নান বেপারীর দুই ছেলের সংসারে কোনো অশান্তি দেখিনি। আঃ মান্নান বেপারী ও তার স্ত্রী বড় ছেলে ইয়াছিন বেপারীর ঘরে থাকতেন। যদিও মাসের অর্ধেক সময় এক ছেলের ঘরে, বাকি সময় অন্য ছেলের ঘরে খাওয়াদাওয়া করতেন। উভয় পুত্রবধূর সাথেই তাদের ভালো সম্পর্ক ছিলো। কখনো মন্দ কিছু চোখে পড়েনি। তবে স্বামী বিদেশ থাকায় সুরভী একা একাই চলাফেরা করতো।

সুরভীর শ্বশুর আঃ মান্নান বেপারী বলেন, সুরভী এই বাড়িতে একা থাকতো। আমরা বড় ছেলে ইয়াছিন বেপারীর ঘরে তার সাথে থাকি। প্রতি মাসে ১৫ দিন এই বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করে আমরা বড় ছেলের বাড়িতে ঘুমাই। বাকি ১৫ দিন ছোট ছেলে আমিন বেপারী বাড়িতে খাই। আমার স্ত্রী নিরিবিলি নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করার জন্যে সুরভীর কাছে একটি রুম চাইলে সে দেয়নি। পরে সে বাপের বাড়ি চলে গেছে আর ফিরে আসলো না। আমি আমার নাতনি ও পুত্রবধূকে ফেরৎ চাই।

সকদিরামপুর গ্রামের আঃ লতিফ বেপারী বলেন, বাড়িতে কোনো ঘটনা হলে সবাই আমার কাছে আসে। আমি চেষ্টা করি মীমাংসা করে দেয়ার। সুরভীর বাবা কালু মিয়াও ১২ আগস্ট আমাকে ফোন করেছিলো। তার মেয়ের বিষয়ে আমি উভয় পক্ষের সাথে কথা বলি। আমিন বেপারীর মা নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করবে বলে এক রুম চেয়েছিলো, কিন্তু সুরভী রাজি ছিলো না। এই নিয়ে উভয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।

এদিকে সুরভী সন্তানসহ নিখোঁজের ১৭ দিন হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। উভয় পরিবার তাদের স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানালেও উভয়ের কথায় মিল পাওয়া যায়নি। ফলে সুরভীর অন্তর্ধান রহস্যজনক বলে মনে করছে স্থানীয় লোকজন। ফলে সুরভী এখন কোথায় এই প্রশ্ন সকলের।

সুরভী নিখোঁজের বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদ হোসেন বলেন, সুরভীর নিখোঁজ জিডি হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। সুরভী উদ্ধার হওয়ার পরে বোঝা যাবে কী হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়