প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
জনজীবনের প্রতি মুহূর্তে জরুরি উপাদান এখন বিদ্যুৎ। আধুনিকতার এই যুগে বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহূর্তও যেনো চিন্তা করা যায় না। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের অফিসে বর্তমানে ৬৫ হাজার গ্রাহকের সেবা দিচ্ছে মাত্র ৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, যা একেবারে অপ্রতুল এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা চালিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় জনবলের ১০ ভাগের এক ভাগও নয়।
জানা যায়, ২০০৪ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক সভায় তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান ১৮ হাজার গ্রাহকের প্রতিষ্ঠান হিসেবে চাঁদপুর জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিসের জন্যে ১১৯টি সৃষ্ট পদের অনুমোদন দিয়ে প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেন এবং সৃষ্ট শূন্য পদে জনবল নিয়োগের নির্দেশনা দেন। সেই নির্দেশনা আজও শুধুমাত্র কলম ও কাগজের মধ্যেই রয়ে গেছে। বাস্তবায়ন বা আলোর পথ আজো দেখেনি। কিন্তু থেমে থাকেনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের কোনো কার্যক্রম। সেই সময়ে অনুমোদিত পদের ৩ ভাগের ১ ভাগ জনবল সংকটের মধ্য দিয়ে গ্রাহক সেবা অব্যাহত রাখা প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক, বাণিজ্যিক, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে গ্রাহক সংখ্যা। ১৮ হাজার থেকে গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে ৬৫ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানের এই গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন মাত্র ৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীই। যা প্রয়োজনীয় জনবলের চাহিদা অনুযায়ী ১০ ভাগের ১ ভাগও নয়! তারপরও প্রতি মুহূর্তে জনস্বার্থে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারাই গ্রাহক সেবা অব্যাহত রেখেছেন।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দুই যুগ পূর্বে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সভায় জনবলের অনুমোদিত নিয়ম বা শর্ত নির্ধারণ করা হয় যে, প্রতি ১৫০ জন গ্রাহকের জরুরি সেবায় কাজ করবেন একজন বিদ্যুৎ লাইনম্যান। আর প্রতি ৫ জন লাইনম্যানকে নিয়ন্ত্রণ করবেন ১ সুপারভাইজার, প্রতি দেড় হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তদারকি বা সমস্যা সমাধানের দায়িত্বে থাকবেন ১ উপ-সহকারী প্রকৌশলী, আর ৩ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকবেন ১ জন সহকারী প্রকৌশলী। এ ব্যাপারে নীতিমালা অনুমোদন করা হলেও সেগুলো সাদা কাগজের মধ্যে কলম দিয়ে লেখাও শেষ হয়, নিয়মও শেষ হয়। কিন্তু বাস্তবায়ন বা আলোর মুখ আজো দেখেনি।
এদিকে চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রাখতে পূর্বের দু’টি সাবস্টেশনের পাশাপাশি নতুন করে আরো দু’টি সাবস্টেশন নির্মিত হচ্ছে। এখন মোট ৪টি সাবস্টেশন। ফলে জনবল সংকটে আরো বেশি পতিত হচ্ছে চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রাখতে উন্নয়নমূলক কর্মকা- অব্যাহত থাকলেও জনবল সংকট নিরসনে কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় গ্রাহকদের সেবায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিরলস শ্রমে পর্যুদস্ত।
২০০৪ সালে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের ১৮ হাজার গ্রাহকের সেবায় ৩৯টি পদে ১১৯জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্থলে ৭১জন কর্মকর্তা-কর্মচারী পদায়ন করেই বসে আছে, গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৪গুণ বৃদ্ধি পেলেও তারাই কর্মরত রয়েছেন।
উল্লেখিত জনবল সংকট নিরসনে অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং চাঁদপুরের কৃতী সন্তান শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ।
এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এক সময় ছিলো গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পেতো না। আর এখন চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ অব্যাহত রাখতে আমাদের চাহিদার অনুকূলে জনবল সংকট নেই। এই জনবল সংকটকে শুধু সংকটই বলা যায় না, কার্যত মহাসংকট বলতে হবে।
এমতাবস্থায় প্রতিদিনই গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধিতে আরো বেশি বেগ পোহাতে হচ্ছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এর বাইরে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।